মেকিং লাইফ বেটার

আপনার কি কখনো মনে হয়েছে- ধনী (আর্থিকভাবে সচ্ছল) হওয়ার জন্য যা যা করার দরকার- তার জন্য খুব বেশি দেরি করে ফেলেছেন? (বয়সটা বড্ড বেশি হয়ে গেছে। কেন যে আগে থেকে শুরু করলাম না।)
এমন একটি ভয়ঙ্কর গল্প আছে যা সম্প্রতি খুব বেশি আলোচিত হয়েছে; যেটি আপনাকে উপরের প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে সহায়তা করবে।
গল্পটা এমন—-
এমন অনেক মানুষ আছে যারা সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ (ইনভেস্ট) করতে অনেক দেরি করে, সময় নেয়। কিন্তু যারা দ্রুত শুরু করে- বিশেষ করে ২০ বছর বয়সের আগেই- তারা অবসরের সময় বা বৃদ্ধ বয়সে অনেক বেশি ভালো এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন কাটায়। যারা ৩০ বছরের পরে সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ শুরু করে তাদের তুলনায়।
কিন্তু যারা ৩০ বছরের পরে শুরু করে না এবং জীবনে খুব বেশি সঞ্চয়, বিনিয়োগ কিংবা বিনিয়োগের পরিকল্পনা করে নি। তাদের কি অবস্থা হয়? তারা প্রতিদিন এক বিমর্ষ ও রুঢ় অনুভুতি নিয়ে সকালে ঘুম থেকে ওঠে। তাদের অধিকাংশই এই সিদ্ধান্তে পৌছায় যে- অবসর নেয়া তার জন্য সম্ভব না। এমনকি ৭০ বছরের পরেও তাদের দৈনন্দিন খরচ চালানোর জন্য কাজ করে যেতে হয়। আবার যারা মনে করে- বেশ তো চলছেই এ জীবন চিন্তা কি? তারা আবিস্কার করে যে- তাদের মাটির ব্যাংকটা এখনো ভরে নি। কিংবা মাটির ব্যাংকটা ভেঙ্গে দেখে যে যতোটুকু আশা করেছিল তার ৪ ভাগের একভাগ হয় নি। (their nest egg just isn’t enough.)
প্রাচীন চীনে একটা প্রবাদ আছে, “একটি গাছ লাগানোর সবচেয়ে ভালো সময় আজ থেকে ২০ বছর আগে। (যদি কোন একটি গাছ থেকে আজকেই ফল বা সেই গাছ থেকে অন্য কোন লাভ পেতে চাও- তাহলে সেই গাছটি আজ থেকে ২০ বছর আগে লাগানো উচিত।) আর ২য় ভালো সময় হচ্চে- আজ, এখনই।”
“The best time to plant a tree was 20 years ago. The second-best time is today.”
এখন যারা আমার মতো দেরি করে ফেলেছি; যাদের বয়স ৩০ বছরের বেশি। তারা কি করবে?
এখন টাইম মেশিনে চড়ে ২০ বছর বয়েসের আগে ফিরে গিয়ে তাড়াতাড়ি বিনিয়োগ করা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু, আজ, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে ভালো সময় নিজেকে আর্থিক ভাবে সচ্ছল নতুন সুযোগ রয়েছে …… নিজের সেই পুরনো হারিয়ে যাওয়া সময়কে পুনরুদ্ধার করার । (না এর সাথে লটারি জেতার কোন সম্পর্ক নেই। )
আজ, সব বয়সের লোকেরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করছে। আমি সব ধরণের অনলাইন উদ্যোক্তা, স্টক বিনিয়োগকারী এবং রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগকারীদের সফল হতে দেখেছি:
১. কর্পোরেট চাকুরীজিবী
২. গৃহিণী যাদের নুন্যতম কাজের অভিজ্ঞতা নেই
৩. যারা নিজেদের ৯-৫টা বিরক্তিকর চাকুরি থেকে পালাতে চাইছিলো
৪. একজন অবসর প্রাপ্ত ব্যাক্তি জিনি নতুন কোন আয়ের উৎস খুঁজছেন
একজন ব্যক্তির ব্যাকগ্রাউন্ড সত্যিই এই জন্য কোন ব্যাপার না ……
এমনকি আপনার ভৌগলিক অবস্থানও কোন বিষয় না।
ল্যাপটপ এবং ইন্টারনেট অ্যাক্সেসের মাধ্যমে যে কেউ এখন এটি করতে পারে।
আপনি অতীতে কতো সময় অযথা ব্যয় করেছেন সেটা কখনোই মুখ্য কোন বিষয় না। শুধু একটা জিনিসই মুখ্য- আপনি এখনই কিছু না কিছু শুরু করছেন।
তো, আপনি কোথায়, কখন আপনার গাছ লাগাতে যাচ্ছেন?
মেকিং লাইফ বেটার,
রবার্ট কিয়োসাকি
(রবার্ট কিয়োসাকি’র লেখা থেকে ভাবানুবাদ)

নীরবতা

নীরবতাও একধরনের শব্দ।
তুমি একবার শুনে তো দেখো।
তোমাকে ছুঁয়েই সে আন্দোলিত হবে
কোন একদিন বাড়ীতে তাকে ডাকো
সে কথা বলার জন্য হয়ে আছে উন্মুখ ।
তাকে কিছু কথা বলতে দাও।
নীরবতা তোমার… আমার …
নীরবতা জড়িয়ে আছে-
নীরবতায়…
তুমি কি কখনো বেড়িয়েছো সেই গলি?
বহু আগেই সেখানে হারিয়েছে পৃথিবী-
আমার সময়গুলো কিন্তু সেখানেই থমকে আছে।
তোমাকে বলতে চাই আমার সাথে কি কি হয়েছে।
নিরবতা যেন এক ধাঁধা-
তুমি মিলিয়ে তো দেখো-
নীরবতা এক সুরের মূর্ছনা-
আসো এক সাথে গুনগুনাই…
সে কথা বলার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।
তাকে কিছু কথা বলতে দাও।
নীরবতা তোমার… আমার …
নীরবতা জড়িয়ে আছে-
নীরবতায়…
নদীর পানিও এখানে নিরবে বয়ে যায়-
মায়াবী জ্যোৎস্নায়ও রয়েছে লাখো নীরবতা।
বৃষ্টির ফোটারও থাকে কি কণ্ঠ?
ব্যথিত হৃদয়েও ওঠে নীরবতার ধোঁয়া।
নীরবতা এক বিশাল আকাশ –
তুমি উড়তে তো আসো সেখানে-
নীরবতা এক উপলব্ধি-
তুমি কি করতে পারো তাকে অনুভব?
সে কথা বলার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।
তাকে কিছু কথা বলতে দাও।
নীরবতা তোমার… আমার …
নীরবতা জড়িয়ে আছে-
নীরবতায়…
………………………
গানটা অবশ্যই সুন্দর। কিন্তু এর কথা আমার কাছে যেন এক মোহ! এতো সুন্দর ভাবে মানুষ ক্যম্নে লিখতে পারে? যদি এর ভাবানুবাদ
একধরণের দুঃসাহস! তবু মনের শান্তনা। Rashmi Singh মুল গানটির গীতিকার।

মাতাল

পান করার পর আমাকে মাতাল বলো না
কেননা, পান করাও তো একটি উপাসনা।
ও মাতাল, কেমন মাতাল? যে নেশায় বুঁদ হয় না।
ও মাতাল, কেমন মাতাল? মদ খেয়ে যে তওবা করে।
ও মাতাল, কেমন মাতাল? জীবনে যার দুঃখ নেই।
ও মাতাল, কেমন মাতাল? যার পাশে আমি নেই।
প্রেমের গলিতে তুমি যেও না- প্রেমে যে বড় বদনাম।
প্রেম যে আমার দেবতা হায়- প্রেমিক যে মোর নাম।
প্রেমের প্রতিটি পদে পদে মৃত্যু যে খুব স্বাভাবিক।
প্রেমে জীবন দেয়াই তো প্রেমিকের কাজ।

ক্ষুদ্র খামার এর বৈশিষ্ট্য

সমসাময়িক সময়ে কৃষি ক্ষেত্রে লাখ টাকার প্রশ্ন হচ্ছে-আমাদের কি চাই; বৃহৎ (বড়) খামার না ক্ষুদ্র (ছোট) খামার? আমরা কোন ধরনের খামারকে সমর্থন করবো? কোন ধরনের খামারের দিকে ধাবিত হবো? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তরের আগে কোনটাকে বড় খামার এবং কোনটাকে ক্ষুদ্র খামার বলবো; সে সম্পর্কে আলোকপাত করা জরুরি।
ক্ষুদ্র কিংবা বড় খামার বলতেই আমাদের মাথায় প্রথমেই আসে জমির পরিমাণ এর বিষয়টি। কিন্তু ক্ষুদ্র খামারকে জমির পরিমাণ বা আয়তন দিয়ে বোঝানো বেশ কঠিন। কেননা ভৌগলিকভাবে প্রতিটি দেশ কিংবা এলাকার জমির ধরন এবং গড়ন যেমন ভিন্ন। তেমনি সকলদেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব একই নয়। তাই প্রতিটি দেশের খামারের আয়তন ভিন্ন হয়ে থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বাংলাদেশের ক্ষুদ্র খামারের আয়তন যদি হয় এক একর (প্রায় ৩ বিঘা) তাহলে আমেরিকার ক্ষুদ্র খামারের আয়তন হবে কমপক্ষে ২০০ একর (প্রায় ৬০০ বিঘা)। আমেরিকার কৃষি অধিদপ্তর এর তথ্য মতে, ক্ষুদ্র খামার এর গড় আয়তন ২৩১ একর, মাঝারি খামার এর গড় আয়তন ১৪২১ একর এবং বড় খামারের আয়তন গড় আয়তন ২০৮৬ একর। এই হিসাব বাংলাদেশসহ অন্যান্য তৃতীয় বিশ্ব বা দক্ষিণাংশের কোন দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। তাই ক্ষুদ্র খামারকে চিনতে গেলে খামার এর আয়তন ছাড়াও অন্যান্য বিষয়গুলোকে বিবেচনা করতে হবে।

তবুও সাধারণীকরণ করার জন্য ক্ষুদ্র খামারের একটা নির্দিষ্ট আয়তন নির্ধারণ করতে হবে। নিচের তথ্য থেকে বুঝতে সুবধিা হবে ক্ষুদ্র খামারের আয়তন কতটুকু হয়। তার আগে বলে রাখা ভালো যে, পৃথিবীর অর্থনৈতিক কাঠামো অনুযায়ী সমগ্র পৃথিবীকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা:
১)    উন্নত বিশ্ব বা উত্তরাংশ: যা পৃথিবীর ধনী দেশগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করে। এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব কম। শিল্প, প্রযুক্তি, অবকাঠামোসহ অন্যান্য দিক দিয়ে এগিয়ে।
২)    অনুন্নত বিশ্ব বা দক্ষিনাংশ: যা মূলত পৃথিবীর গরীব (!), দূর্ভিক্ষ (!), দূর্যোগ (!) পীড়িত দেশগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করে। এখানে ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি এখনো টিকে আছে। এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব উত্তরাংশের চেয়ে অনেক অনেকগুণ বেশি। আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা এবং এশিয়া মহাদেশের অধিকাংশ দেশই এই অংশের অর্ন্তভূক্ত। এই অংশকে কখনো তৃতীয় বিশ্বও বলা হয়ে থাকে।
(বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে যে এই বিভাজন কোন ভৌগলিক বিভাজন নয়। বরং অর্থনৈতিক বা মনস্তাত্বিক বিভাজন। তাই পৃথিবীর দক্ষিনাংশের অনেক দেশই উত্তরাংশের প্রতিনিধিত্ব করে।)

আফ্রিকার যে সমস্ত ক্ষুদ্র খামার রয়েছে তার গড় আয়তন ৫ একর। এশিয়ার ক্ষুদ্র খামারের গড় আয়তন ৫ একরের কম। আর দক্ষিণ আমেরিকার ক্ষুদ্র খামারের গড় আয়তন ৪.৫ একর। সুতরাং আমেরিকা বা উন্নত বিশ্বকে বাদ দিলে বাকি পৃথিবীর ক্ষুদ্র খামারের গড় আয়তন ৫ একরের বেশি নয়। তাই ক্ষুদ্র খামারের আয়তন কোনভাবেই ৫ একর বা ১৫ বিঘার বেশি হবে না। এখানে একটি বিষয় সুনির্দিষ্ট করা জরুরি যে, এই আয়তন বলতে একটি খামারের আয়তনকে বোঝাচ্ছে না। বরং একজন কৃষক বা একটি কৃষি পরিবারের নিয়ন্ত্রণে মোট জমির পরিমাণকে বোঝানো হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বাংলাদেশের একজন কৃষকের যদি ৬টি ক্ষুদ্র খামার (কৃষি জমি) থাকে যার প্রত্যেকটির গড় আয়তন ৪.৫ একর এবং মোট জমির পরিমাণ ২৭ একর। তাহলে তাকে কি ক্ষুদ্র কৃষক বলা যাবে ? আর তার নিয়ন্ত্রণে থাকা খামারগুলো কি ক্ষুদ্র খামারের প্রতিনিধিত্ব করবে? কখনোই না। অন্যদিকে অন্য একজন কৃষকের ৬টি খামার আছে। যার আয়তন যথাক্রমে ২ একর, ০.৪ একর, ১.২ একর, ০.৭ একর, ০.৩ একর  এবং ০.৪ একর। এই ৬টি খামারের মোট আয়তন ৫ একর। আর তাই ২য় কৃষক ক্ষুদ্র কৃষক এবং তার নিয়ন্ত্রণাধীন খামারগুলো ক্ষুদ্র খামারকে প্রতিনিধিত্বশীল হবে।
উপরের আলোচনা থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, ক্ষুদ্র খামারের আয়তন কোনভাবেই ৫ একর এর বেশি হবে না। কিন্তু আরো কিছু বিষয়ের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করেছে। যেমন ক্ষুদ্র খামার জমির আয়তন দিয়ে নয়। বরং একজন কৃষক বা কৃষক পরিবারের নিয়ন্ত্রণে থাকা মোট জমির পরিমাণ। আর তাই ক্ষুদ্র খামার বলতে শুধু জমির পরিমাণ দিয়ে চেনা যাবে না। এর সাথে আরো কিছু বিষয় জড়িত।

ক্ষুদ্র খামার এর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে জমির মালিকানা। জমির মালিকানা কার হবে? ক্ষুদ্র খামার বলতে বোঝাচ্ছি যেখানে খামারের শ্রম, জ্ঞান, সময়, খামার ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি যে ব্যক্তি ব্যয় করেন তিনিই ক্ষুদ্র খামারের মালিক (কোন কোন ক্ষেত্রে জমির মালিকানা তার না থাকলেও নিয়ন্ত্রণ তার হাতে থাকে)। পক্ষান্তরে বড় খামারের মালিকের কৃষি কাজের প্রাথমিক বিষয়গুলোর সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ থাকে না বললেই চলে। আরা যারা সেই খামারে কৃষি কাজ করেন তাদেরকে কৃষক না বলে কৃষি শ্রমিক বলাই ভালো। বাংলাদেশ সহ দক্ষিণাংশের অনেক কৃষক আছে যাদের নিজস্ব জমি নেই। যাদেরকে আমরা ভূমিহীন কৃষক বা বর্গাচাষী কৃষক বলি। অন্যদিকে দক্ষিণাংশের অনেক আদিবাসী কৃষক রয়েছে যাদের জমি ব্যক্তি মালিকানায় থাকে না। সেক্ষেত্রে এই সমস্ত কৃষক এর নিয়ন্ত্রণে থাকা খামারগুলোকে কী বলা হবে? হ্যাঁ ভূমিহীন কৃষক, বর্গাচাষী এবং আদিবাসী কৃষকের খামারগুলোও ক্ষুদ্র খামারের অর্ন্তভূক্ত হবে। বর্গা বা লিজকৃত খামার এর ক্ষেত্রে শর্ত থাকে যে জমির মালিককে যেন কৃষক চিনতে পারে এবং তার সাথে যেন প্রত্যক্ষ যোগাযোগ থাকে। ক্ষুদ্র খামারের জমির মালিকানা কখনোই কোন কোম্পানি বা কর্পোরেশন এর হাতে থাকবে না। কৃষক জমির মালিককে যেন ব্যক্তিগতভাবে চিনতে পারে এবং উভয়ের সাথে একটি ‘প্যাট্রন-ক্লাইন্ট’ সম্পর্ক থাকবে।

ক্ষুদ্র খামারের ক্ষেত্রে তৃতীয় বিষয় হচ্ছে খামারের উদ্দেশ্য। অর্থাৎ খামারের উৎপাদিত শস্য বা ফসল কী উদ্দেশ্যে উৎপাদন করা হচ্ছে। এই উদ্দেশ্য কোনভাবেই ব্যবসায়িক হবে না। খামার থেকে উৎপাদিত পণ্য দিয়ে লাভ কিংবা মুনাফা করা প্রধান উদ্দেশ্য হবে না। পারিবারিক চাহিদা মেটানোই হবে মূখ্য উদ্দেশ্য। পারিবারিক চাহিদা মেটানোর পরে উদ্বৃত্ত অংশ বিক্রি করতে পারে- পারিবারিক অন্যান্য আনুষঙ্গিক চাহিদা পূরণ করার জন্য। এক্ষেত্রেও রয়েছে একটি নির্দিষ্ট সীমারেখা। আমেরিকার কৃষি অধিদপ্তর এর মতে, যে খামার থেকে বাৎসরিক লাভ বা মুনাফা ৮০ হাজার টাকা থেকে ২ কোটি টাকার বেশি হবে না। এমন খামারকেই ক্ষুদ্র খামার বলা হবে। এই টাকার পরিমাণও দেশ এবং এলাকাভেদে ভিন্ন হবে। তবে ক্ষুদ্র খামারের কৃষক কার কাছে তাদের কৃষিপণ্য বিক্রি করবে সেটি সুনির্দিষ্ট করা যায়। ক্ষুদ্র খামারের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি ভোক্তার কাছে বিক্রি করে বা করে থাকে। কোন ব্যবসায়ী, মধ্যস্বত্ত্বভোগী বা সুপার মার্কেটে এর কাছে বিক্রি করে না।
ক্ষুদ্র খামারের কৃষক হয় প্রধানত নারী এবং প্রবীণরাই। এরা শখে কিংবা কৃষির প্রতি ভালোবাসার জায়গা থেকে কৃষিকাজ করে থাকে। ক্ষুদ্র খামারের সাথে পরিবারের সকল সদস্যের শ্রমঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকে। পাশাপাশি বৈচিত্র্যময় ফসলের এক অভয়ারণ্য হিসেবে বিবেচিত হয় ক্ষুদ্র খামারগুলো। কৃষির সাথে সাথেই প্রাণী সম্পদ (হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল প্রভৃতি) এবং মৎস্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা ক্ষুদ্র খামারের অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।
সবশেষে ক্ষুদ্র খামারে কোন ধরনের জিএমও বা একক প্রজাতির শস্য উৎপাদন করে না। পাশাপাশি, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ব্যবহার করা হয় স্বল্পমাত্রায় বা হয় না বললেই চলে। কোম্পানির বীজ ব্যবহার করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজেদের সংরক্ষণে পরবর্তী মৌসুমের জন্য বীজ থাকে।
ক্ষুদ্র খামারগুলোর প্রাণ-প্রকৃতি আর জ্ঞানে সমৃদ্ধ হলেও সম্পদের (রিসোর্স) দিক দিয়ে একেবারেই তলানিতে। প্রযুক্তির ব্যবহার হয় একবারেই প্রান্তিক পর্যায়ের। বাজার এবং কোম্পানি নির্ভরশীলতা তুলনামুলক কম থাকে।
এই হলো অনুন্নত বা পৃথিবীর দক্ষিণাংশের ক্ষুদ্র খামারের বৈশিষ্ট্য। এই সমস্ত বৈশিষ্ট্য যে খামারের থাকবে না। তা অবশ্যই বড় খামার। আশা করি এই বৈশিষ্ট্যের আলোকে আমরা খুব সহজে চিহ্নিত করতে পারবো কোনটি ক্ষুদ্র আর কোনটি বড় খামার।
এখন আসি শুরুর প্রশ্নে? আমরা কি চাই- ক্ষুদ্র খামার না বৃহৎ খামার? সেটি পাঠকের কাছেই ছুড়ে দিলাম। আমরা দুটি খামারকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করেই বিবেচনা করবো কোনটি আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রাণ-প্রকৃতি, প্রজন্ম এবং পৃথিবীর জন্য জরুরি। টেকসই উন্নয়নের জন্য আমরা কোন ধরনের খামার বেছে নেবো। আমিও ভাবতে থাকি। অন্য কোন লেখায় সেটি নিয়ে আলোকপাত করার ইচ্ছা রইল।

ক্ষুদ্র কৃষকের ক্ষুদ্র খামার : টেকসই, পরিবেশবান্ধব এবং খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ

ইউরোপ কিংবা আমেরিকা বা উন্নত বিশ্বের যে কোন দেশ থেকে কোন ব্যক্তি যদি বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন এবং কোন কৃষকের সাথে কথা বলেন- তখন স্বভাবত একটি প্রশ্ন সব সময় করে থাকেন- আপনার জমির পরিমাণ কত? বা কতটুকু জমি চাষ করেন। উত্তর শুনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা বেশ অবাক হয় এতো কম পরিমাণ জমি নিয়ে একটি খামার হতে পারে এটা তাদের ভাবনাতেই আসে না!
বাংলাদেশের ক্ষুদ্র বা প্রান্তিক কৃষকের জমির পরিমাণ বৈশ্বিক কৃষিব্যবস্থার বিচারে একবারে স্বল্প। শুধু বাংলাদেশ নয় দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার অধিকাংশ ক্ষুদ্র কৃষকের জমির পরিমাণ একবারেই নগন্য। তবুও তারা তাদের পারিবারিক খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে সমাজ, দেশ এমনকি পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদায় ধারাবাহিকভাবে অবদান রাখছেন।

বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিদ্যমান চাষযোগ্য কৃষিজমি বা শস্যভূমি নিয়ে সারা পৃথিবীতে ধারাবাহিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এই সমস্যা শুধু ৭০০ কোটি মানুষের খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য নয়। বরং সারা পৃথিবীতে দিনকে দিন বৃদ্ধি পাওয়া জৈব তেলের (biofuels) চাহিদাও এর মধ্যে অর্ন্তভুক্ত। কিন্তু চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- এই খাদ্য এবং জৈব তেলের চাহিদা অতি অবশ্যই এমন একটি পরিবেশবান্ধব উপায়ে করতে হবে- যেন সেটি টেকসই হয়। কৃষি কার্যক্রম যেন প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে আহরিত রাসায়নিক পদার্থের সর্বনিম্ন ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাণবৈচিত্র্যকে সংরক্ষণ করার পাশাপাশি গ্রীন হাউস গ্যাস নির্গমণও কমাবে। পাশাপাশি এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ যেন সারা পৃথিবীর লাখ লাখ কৃষকের কাছে লাভজনক কাজ হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করে- সে বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে একটি পন্থাই হতে পারে সমাধান। আর তা হচ্ছে ছোট ছোট কৃষি খামার।

পৃথিবীর ১.৫ বিলিয়ন হেক্টর চাষযোগ্য জমির মধ্যে ৯১ শতাংশ বছরব্যাপী আবাদ করা হয়। বেশিরভাগ চাষযোগ্য জমিতে মনোকালচারস গম, ধান, ভুট্টা, সূতা এবং সয়াবিন চাষ করা হয়। এটি করা হয় বড় বড় খামারে। যা ব্যাপকভাবে রাসায়নিক সার, কীটনাশক এবং ব্যাপক পরিমাণ সেচের উপর নির্ভরশীল। এই চাষাবাদের ফলে আমাদের বিশাল পরিমাণ বন এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উদ্ভিদ (অচাষকৃত উদ্ভিদ) প্রজাতি ধ্বংস হয়েছে। উনিশ শতকের মাঝামাঝি এসে চাষাবাদ ব্যবস্থার এক প্রজাতিকরণ পরিবেশের ওপর নেবিাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে। এর থেকে উদ্ভূত প্রধান প্রধান প্রতিবেশগত দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়, যা জলবায়ু পরিবর্তনের (climate change) ফলে পরিবর্তিত প্রতিবেশে শস্যের টিকে থাকার ক্ষমতা ক্রমশ কমে যাচ্ছে।
একক প্রজাতির (mono culture) শস্য অল্প সংখ্যক বৃহৎ খামারে চাষ করা হয়। কৃষকের জন্য এটি ক্ষণিকের অর্থনৈতিক লাভ বয়ে আনলেও দীর্ঘ মেয়াদে একক প্রজাতির শস্য বাস্তুসংস্থানের অনুকূল নয়। বরঞ্চ অত্যন্ত স্বল্প প্রজাতির চাষাবাদ বিশ্ব খাদ্য উৎপাদনকে বড় ধরণের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে এটি স্থানীয় প্রজাতির ধ্বংসের মাধ্যমে সামাজিক এবং পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং দীর্ঘমেয়াদে এটি শস্য প্রজাতি বিলুপ্তির মাধ্যমে পরিবেশের চরম ক্ষতি (যেমন- বাস্তুসংস্থানের ক্ষতি, দারিদ্র্য, ক্ষুধা এমনকি দূর্ভিক্ষও) বয়ে নিয়ে আসছে।
একবিংশ শতকের প্রথম দশক শেষ হওয়ার পূর্বেই মানুষ জীবাশ্ম-জ্বালানিনির্ভর, পুঁজিনির্ভর শিল্পভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থার তাৎক্ষণিক প্রভাব উপলব্ধি করেছে যে, এটি বৈশ্বিক খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য যথোপযুক্ত নয়। তেলের মূল্যবৃদ্ধি অনিবার্যভাবে খাদ্য উৎপাদনের খরচ বৃদ্ধির সাথে সাথে খাদ্যের মূল্যও বৃদ্ধি করছে।
একবছর পূর্বে ১০০ টাকায় যে পরিমাণ খাদ্য পাওয়া যেত। বর্তমান সময়ে তার চেয়ে ৩০ শতাংশ কম খাদ্য পাওয়া যায়। এই ধরনের চিত্র তেলসহ অনান্য উপকরণ ক্রয় করার ক্ষেত্রেও দেখা যায়। পরিবেশ বিপর্যয় কিংবা জলবায়ু পরিবর্তনের (climate change) ফলে এই অবস্থা দিনে দিনে আরও জটিল আকার ধারণ করছে। খরা, বন্যা এবং অন্যান্য অনির্দিষ্ট অপ্রত্যাশিত আবহাওয়ার ফলে শস্য ভূমিও হ্রাস পাচ্ছে।

জৈব তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং সংকরায়িত শস্যের ব্যবসায়িক লাভের জন্য আবাদী জমির পরিমাণ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। একক প্রজাতির উদ্ভিদের ব্যাপক চাষাবাদের প্রেক্ষিতে বাস্তুসংস্থানকে আরও বেশি ক্ষতি করা হচ্ছে। এছাড়াও শিল্পনির্ভর কৃষি প্রকৃতিতে নিঃসৃত গ্রীন হাউস গ্যাসের এক চতুর্থাংশ গ্রীন হাউস গ্যাসও নির্গমন করছে। গ্রীন হাউস গ্যাস সমূহের মধ্যে শিল্পভিত্তিক কৃষি প্রধানত মিথেন এবং নাইট্রাস অক্সাইড নির্গমণ করছে। বর্তমান সময়ের অর্থনৈতিক প্যারাডাইম কর্তৃক এই ধরণের আধিপত্যশীল ব্যবস্থা বেশিদিন টিকে থাকবে না।
আমাদের প্রজন্মের জন্য বর্তমান সময়কার চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থার স্থানান্তর ঘটানোর মাধ্যমে শিল্পভিত্তিক কৃষিকে টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব কৃষিতে স্থানান্তর করা। আমাদের অন্য একটি বিকল্প কৃষি নির্ভর উন্নয়ন প্যারাডাইম দরকার। যে কৃষি আমাদেরকে টেকসই প্রাণবৈচিত্র্যের জন্য সামাজিকভাবে উদ্বূদ্ধ করবে। সৌভাগ্যবশত, বর্তমানে এমন হাজারো নতুন এবং বিকল্প উদ্যোগ সারা পৃথিবীতে চর্চা হচ্ছে, যা আমাদের পৃথিবীর বাস্তুসংস্থানের অনুকূল। আর তেমন একটি চর্চা হচ্ছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কৃষি খামার। যা  ক্ষুদ্র কৃষককে সংরক্ষণের মাধ্যমে জীবিকার নিশ্চয়তা প্রদান করে। পাশাপাশি, উৎপাদন প্রক্রিয়া অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্মত, নিরাপদ, বৈচিত্র্যময় খাদ্যের যোগানদার, বণ্টনের স্থানীয়করণ এবং ব্যবসা ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রেও সুবিধাজনক।

বাস্তুসংস্থানের অনুকূল বেশিরভাগ টেকসই কাঠামো আমাদের ঐতিহ্যবাহী কৃষিব্যবস্থায় বিদ্যমান ছিল। এ ধরণের লক্ষাধিক উদাহরণ এখনো পর্যন্ত স্থানীয় গ্রামীণ কৃষিব্যবস্থায় বিদ্যমান। এই ধরণের ঐতিহ্যবাহী কৃষিব্যবস্থার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খামার শিল্পায়নভিত্তিক কৃষির জন্যও ফলপ্রসূ হবে যদি তারা প্রাণবৈচিত্র্যকে সংরক্ষণ করতে আগ্রহী হয় এবং রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই বাৎসরিক উৎপাদন প্রক্রিয়াকে টেকসই করার মাধ্যমে। এই ধরণের কৃষি ব্যবস্থা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পৃথিবীর খাদ্য চাহিদার যোগান দিয়ে এসেছে। যেখানে লোকায়ত জ্ঞানের ব্যবহারের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বাস্তুতন্ত্রের সমন্বয় ও সংরক্ষণ করে এসেছে।

আন্তর্জাতিক কৃষক আন্দোলন, যা লা ভায়া ক্যামপেসিনা (via campesina) নামে পরিচিত। এই আন্দোলন দৃঢ় যুক্তি দেখায় যে, একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের খাদ্য চাহিদায় স্বনির্ভর হওয়ার জন্য ক্ষুদ্র কৃষক এবং তাদের ক্ষুদ্র খামার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি আরো বিশ্বাস করে যে, জীবিকা, চাকুরি, মানুষ ও অনান্য প্রাণের খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং একই সাথে টেকসই পরিবেশ এর জন্য যে খাদ্য উৎপাদন প্রয়োজন তা ক্ষুদ্র পর্যায়ের কৃষকদের হাতে নিহিত। বিশাল বড় কৃষিভিত্তিক ব্যবসা এবং সুপার মার্কেটের নিয়ন্ত্রণে এটি কখনোই সম্ভব না। রপ্তানিনির্ভর, মুক্ত বাণিজ্য, শিল্প কৃষি কাঠামোর মাধ্যমে যে বড় বড় খামার পরিচালিত হয়- তার মাধ্যমে সম্ভব না। এই চলমান ব্যবস্থা পক্ষান্তরে দারিদ্রকে আরও চরমে নিয়ে যায়, মজুরি কমিয়ে দেয়, গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসন বাড়িয়ে দেয়, ক্ষুধা এবং সর্বোপরি পরিবেশের বিপর্যয় ঘটায়। শুধুমাত্র এই ধরণের কৃষি ব্যবস্থার পরিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমান সময়ের খাদ্য সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব।
গ্রামীণ সামাজিক আন্দোলনসমূহ খাদ্যের স্বনির্ভরতা বা সার্বভৌমত্বের ধারণাকে এবং নব্য উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যকার সম্মিলন ঘটায়। যা বিশ্বাস স্থাপন করে যে, আন্তর্জাতিক ন্যায়সঙ্গত ব্যবসা পৃথিবীর খাদ্য সংকট সমাধান করতে সক্ষম। শুধু তাই নয়,  এটি ভূমি, বীজ, সার, কীটনাশক এবং পানির উপর কৃষকের মালিকানার উপর ও গুরুত্বারোপ করে। এমনকি ক্ষুদ্র খামার ব্যবস্থা স্থানীয় অর্থনীতি, স্থানীয় বাজার, স্থানীয় উৎপাদন-ভোগ চক্র, শক্তি/এনার্জি এবং প্রযুক্তির সার্বভৌমত্ব এবং কৃষক নেটওয়ার্কের উপরও আলোকপাত করে।
ভায়া ক্যামপেসিনা (via campesina) মতো সারা পৃথিবী ব্যাপী আমাদেরেেক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বৈশ্বিক আন্দোলনের মাধ্যমে উন্নত বিশ্বের জন্য (পৃথিবীর উত্তরাংশ) মানুষের কাছে খাদ্য রাজনীতি ও বাণিজ্যেরে এই নেতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে পৃথিবীর দক্ষিণাংশের (দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা এবং আফ্রিকা ) ক্ষুদ্র খামারভিত্তিক উৎপাদন প্রক্রিয়াকে সমর্থন করতে হবে। কারণ এই সমস্ত দেশের ধনীরা দিন দিন সেই সমস্ত ইউনিক খাদ্যের উপর ঝুঁকছে যা দক্ষিণের বাজারজাত অর্গানিক শস্য।
কিন্তু, এই ধরণের যুক্তি কি উত্তরের (উন্নত বিশ্বের) ভোক্তা এবং রাজনীতির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে? নাকি অন্য কোন জোরালো যুক্তির প্রয়োজন? আমাদের গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন যে, উত্তরের জনগণের ভালো জীবনমান এবং খাদ্য নিরাপত্তা শুধু নয়; বরং তাদের বাস্তুসংস্থানের সুবিধাও দক্ষিণের ক্ষুদ্র কৃষকের উপর নির্ভরশীল। আসল সত্য এই যে, আফ্রিকা, এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকার ক্ষুদ্র খামার ব্যবস্থায় যে ধরণের কার্যাবলী সংঘটিত হয় তা তেলনির্ভর কৃষিব্যবস্থার চেয়ে অনেক বেশি মানবিক।  মানুষসহ সকল প্রাণির মঙ্গল এবং উদ্ভিদপ্রজাতির টিকে থাকার সাপেক্ষে বাস্তুতান্ত্রিক সম্পদকে সমৃদ্ধ করছে। আরও সত্য যে, তেল এবং খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ বিপর্যয়, GMO Pollution এবং আধিপত্যশীল কর্পোরেট খাদ্য ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণাংশের ক্ষুদ্র কৃষকের ক্ষুদ্র খামার ব্যবস্থা  প্রাণবৈচিত্র্য ও বাস্তুসংস্থানের জন্য একমাত্র অনুকূল কৃষি ব্যবস্থা। যা পরিবর্তিত নতুন বাস্তুতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক চাহিদার প্রেক্ষাপটে সারা বিশ্বকে খাদ্য যোগান দিতে পুরোপুরি সক্ষম।
প্রবন্ধটি Miguel A Altieri এর রচিত Linking Ecologists and Traditional Farmers in the Search for Sustainable Agriculture অনুকরণে লিখিত।

Cyclone Shelters should be people friendly

Satkhira is situated near Sundarban in southern coastal region of Bangladesh. The area is known for its frequent natural disaster, salinity, waterlogging, flood and cyclone. It is also known for the hard work of the people to uphold their existence coping with changed climate. However, in order to provide safe place for the people in the coastal region during the disasters the government builds some ‘shelter homes’ which are known as ‘Cyclone Centers’. These cyclone centers are used for dual purpose. During disaster these shelters are used for shelter home and when there is no disaster these centers are used for running primary daily curriculum of the existing schools in the region.
Presentation1However, when the government built the centers it did not consider separate spaces, rooms, toilets for women, children, physically disabled people and senior citizens. Besides, it also did not consider safe rooms for the livestock of those people who come here for shelter during the disasters. When climate induced disaster occurs, people do not come alone but with their livestock and movable properties. Thus due to lack of these facilities in the shelter centers, women, children, senior citizens and disabled people face immense problems. The shelter centers when used as school buildings are not friendly for running school and for the students as well. Due to lack of separate rooms and facilities people face problems living in crowding environment with male, female, children, senior citizen and physically challenge people in one room.
Women also face problem during their menstruation as they do not have the both the facilities and privacy to change and clean their napkins and pads. Even they have wash there cloth in saline water, which is risky for their personal health and hygiene. Besides, there is no extra arrangement for pregnant women as well in the center. So it creates health risk for pregnant mother or infant with mother. There is no option for dress change or dry. They use wet cloths. leading them to face health hazards.
To this end, BARCIK in association with local people arranged a dialogue and discussion with local government and govt. officer associated with cyclone center with the objective to raise the issues and problems of people in the cyclone centers. It is through this dialogue that leads the concerned authority to assure and ensure people that they will take initiative to provide women, children, senior citizen and physically challenged people friendly cyclone shelters or schools when such new cyclone center and schools are built considering the harsh situation they face.
original Bengali text by Mofijur Rahman from Satkhira 

ঈশ্বর মনে করেন – ভলতেয়ার

ঈশ্বর মনে করেন, সমস্ত কালোই খামারের সেকেলে (অবহৃত) জঞ্জাল (যন্ত্রপাতি),
ঈশ্বর মনে করেন, ইহুদীরা তার পুত্রকে হত্যা করেছে এবং তাদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।
ঈশ্বর মনে করেন, সাদা মানুষ মাত্রই শয়তান-
ঈশ্বর (মনে করেন), তারা (সাদারা) ঈশ্বরের মনের খবর জানেন।

ঈশ্বর  মনে করেন, আমাদের সকলের ইহুদীধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া উচিত;
ঈশ্বর মনে করেন, আমাদের সকলের অবশ্যই খ্রিস্টান হতে হবে এবং 
অবশ্যই আমাদের সকলের ইসলামকে আলিঙ্গন করা উচিত;
ঈশ্বর মনে করেন, একমাত্র সত্য ধর্ম হচ্ছে হিন্দুধর্ম।

আর আমি-
আমি জানি, ঈশ্বর কি মনে করেন?-
ঈশ্বর মনে করেন, তুমি একটা পঁচা গলিত মাংস বই কিছুই নও।

ঈশ্বরের প্রথম পছন্দ একজন নাস্তিক!

ঈশ্বর মনে করেন, তোমার মত সকল মানুষই মন্দ,
ঈশ্বর মনে করেন, তোমার মত সকল মানুষই এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের জন্য (অপমানজনক/ কুলাঙ্গার) বিব্রত কর বিষয়;
 তুমি আত্মকেন্দ্রিক, ছোত মনের (হিসাবী), প্রথমে পাথর নিক্ষেপ কর
এবং পরে নিজের সুরক্ষার জন্য তাঁর নাম ব্যবহার কর।

ঈশ্বর মনে করেন, সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে-
ঈশ্বর মনে করেন, কোপারনিকাস বিভ্রান্তিতে ছিলেন, 
ঈশ্বর মনে করেন, গর্ভপাতএকটি হত্যাকান্ড এবং
ঈশ্বর মনে করেন, বিজ্ঞান আমাদের যা কিছু দিয়েছে সবকিছুই ভুল।
ঈশ্বর মনে করেন, মহিলাদের এটা (গর্ভ ধারন এবং স্নতান জন্মদান) প্রাপ্য;
ঈশ্বর মনে করেন, এইডস এক প্রকার শাস্তি,

আমি তাদের ঘৃণা করি, যারা নিজের দূর্বলতার জন্য শয়তানকে দোষারোপ করে এবং

আমি তাদেরও ঘৃণা করি, যারা  ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেয় যখন সবকিছু তার মনমত হয়।

আর আমি-
আমি জানি ঈশ্বর কি ভাবেন!
ঈশ্বর মনে করেন  তুমি একটা গাধা (ইডিয়ট);

ঈশ্বরের প্রথম পছন্দ একজন পাষণ্ড!

ঈশ্বর! ঈশ্বর!
ঈশ্বর মনে করেন,  তোমার মত সকল মানুষই মন্দ,
ঈশ্বর মনে করেন,  তোমার মত সকল মানুষই এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের জন্য (অপমানজনক/ কুলাঙ্গার) বিব্রত কর বিষয়;
তুমি আত্মকেন্দ্রিক, ছোত মনের (হিসাবী),  প্রথমে পাথর নিক্ষেপ কর
এবং পরে নিজের উদ্দেশ্য হসিলের তাঁর নাম ব্যবহার কর।

ঈশ্বর হলেন উদার,
ঈশ্বর হলেন একজন ডেমোক্র্যাট, 
ঈশ্বর চান তুমি রিপাবলিকানে ভোট দাও।
সেই মানুষকে কক্ষনো বিশ্বাস করো না, যে কথায় কথায় ঈশ্বরের নাম মুখ আনে
এবং বলে যে এটা পরম সত্য;
বরং তা একেবারে মিথ্যা এবং তা থেকে মৃত্যুর গন্ধ আমি (ঈশ্বর) পাচ্ছি।
এটা এমন কাজ- যেন কোন গরীবের সারা দিনের উপার্জন কেড়ে নেয়া।
তোমারা এটি ভাবলে কি করে যে ঈশ্বরের দরকার
তোমার ঐ নোংরা অর্থের?
যদি তিনি একটি পবিত্র যুদ্ধ শুরু করতে চান?

আত্মকেন্দ্রিক, ছোত মনের (হিসাবী),  প্রথমে পাথর নিক্ষেপ কর
এবং পরে নিজের সুরক্ষার জন্য তাঁর নাম ব্যবহার কর।

ঈশ্বরের মনে করেন অহংকারী যুবকদের মরে যাওয়া প্রয়োজন এবং
ঈশ্বর মনে করেন শিশুদের ডুবে মরে যাওয়া প্রয়োজন !

‘কারণ ঈশ্বর যেমন ভাল না ! তেমনি খারাপও না!
ঈশ্বর মানে তুমি এবং ঈশ্বর মানে আমি।
ঈশ্বর সবকিছু/ সবকিছুই ঈশ্বর।
             -ভাষান্তরঃ বাহার
              ৯/৯/১৩, নারায়ণগঞ্জ।