রাম অথবা রাবণ

জীবনের ৩৮ টি বসন্ত শেষ।
বাংলাদেশের গড় আয়ুষ্কাল অনুযায়ী জীবনের অর্ধেক শেষ।
ছোট বেলা থেকে ভিন্ন কেউ হতে চেয়েছিলাম-
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে খুবই সাধারণ কেউ হয়ে যাচ্ছি। রুটি আর রুজির পিছনে ছুটতে ছুটতে এই পৃথিবীতে কোন ইমপ্যাক্ট রেখে যেতে পারছি না সেটাই সবচেয়ে বড় আক্ষেপ।
সময় খুব দ্রুতই ফুড়িয়ে যাচ্ছে। জীবনের সূর্যও মধ্যগগন থেকে হেলে পড়েছে পশ্চিমে কিছূটা।
জানি না নতুন করে আর কোন কিছু শুরু করা হবে কি না? নাকি এ ভাবে ক্ষয়ে যাওয়া রোলিং স্টোনের মতো- মিলিয়ে যাবো একসময় বালু কণায়। উড়ে বেড়াবো বাতাসে, আকাশে আত্মা হয়ে।

একজন সাধারণ মানুষ হওয়া অনেক বেশি কষ্টের- হিরো কিংবা ভগবান হওয়ার চেয়ে। কারণ একই অঙ্গে ধারণ করতে হয় রাম আর রাবণের বৈশিষ্ট্য। আমিও ভিন্ন কেও নই- অতি নগণ্য।

তাই আমি অধিকাংশের কাছে যেমন রাবণ তেমনই কিছু মানুষের কাছে রামও। আমি যার কাছে যাই হোক না কেন- তাতেই খুশি। কক্ষনো মেকি হয়ে নতুন করে নিজের ব্যক্তিত্ব নির্মাণ করতে আসবো না। শুধু চেষ্টা করে যাবো শুধু মনে রেখে আমায়-

রাম অথবা রাবণে।

ভালোবাসা সবসময়

 

সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৩

ভণ্ডামি

তোমরা শালা স্তুতি গাও এখনো প্রথাকে, আমলাকে-
আমরা কি তবে যাচ্ছে তাই খেটে মরি কামলাকে-
নাকি ভাবছো তারাই তোমার লাগবে কাজে-
জেনো পাড়ার কুকুরটা ছাড়া আর সব বাজে-
তুমি যারে তেল মারো- সে মারে তার চেয়ে বড় কারো-
ভেবো না এই জীবনে গন্তব্য একটাই; রাস্তা আছে হাজারো।
সবকিছু ভাই আপেক্ষিক – দাবার চালের গুটি
কখন পাশা পালটে যাবে বুঝবে নিজেই।
যে ছেলেটা আজ কৃষক, দোকানদার কিংবা শিক্ষক প্রাইমারির
ভাবছো মেয়েটার বৃথাই জীবনটা স্নাতকোত্তর গৃহিণীর
জীবন শেষে হাসবে কে আর কাঁদবে কে?
হিসাব কষে বলতে পারবে কে?
যা কাজে লাগে না তার বিরোধিতা করে- তাকেই করো পূজা
ছি! ধিক্কার তোমায়- কথা কাজে মিল নেই- নোংরায় মাথা গোঁজা।
প্রশংসা করো নিজেকে, যার মাথায় নেই তাজ।
রাজাই সে তার জীবনের- নাইবা থাকুক রাজ।

স্বার্থপর

নিজেকে নিজের কাছে সঁপে দেখুন
কতটা নির্ভার থাকবেন
নিজেকে নিজের সামনে দাঁড় করান
দেখবেন কতটা সুন্দর
নিজের প্রাপ্তি আর অর্জনগুলোর একটি তালিকা করুন
কতকিছুই করছেন জীবনে
নিজের হারিয়ে যাওয়া বন্ধুগুলোকে খুঁজুন
দেখবেন পেয়ে যাবেন এক বিশাল গুপ্তধন
নিজেকে ভালোবাসতে শুরু করুন
পেয়ে যাবেন শ্রেষ্ঠ ভালোবাসা
আত্মবিশ্বাস, আত্মপ্রেম আর আত্ম মহিমায়
হয়ে উঠুন স্বার্থপর।।
জুবা, সাউথ সুদান, আগস্ট ২৮, ২০২৩

ভুল বা সঠিক সিদ্ধান্ত

জীবনে ভুল বা সঠিক সিদ্ধান্ত বলে কিছু নেই।
এটা শুধুই সিদ্ধান্ত।
আবেগ আর বিবেকের মিশেলে সেই সময়ে যেটাকে উপযুক্ত মনে হবে সেটাকেই অনুসরণ করা উচিত।
তবে সব সময় মাথায় রাখতে সিদ্ধান্ত নেয়ার পর আর বিকল্প ভাবা যাবে না, পস্তানো যাবে না, আফসোস করা যাবে না।
সিদ্ধান্তটিকে মেনে নিয়ে মনে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই উত্তম।
মনে রাখতে হবে প্রতিটি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সুযোগ এবং ঝুঁকি দুটোই রয়েছে। এবং ঝুঁকি এবং সুযোগের মধ্যেকার সম্পর্ক ব্যস্তনুপাতিক। সুযোগ যতো বেশি ঝুঁকিও ততো বেশি।
আজ যেটা এই সময়ে, এই অবস্থানে দাঁড়িয়ে সঠিক মনে হচ্ছে – সেটা ভুল হতে পারে ৪ টি বিষয়ের ভিত্তিতে –
১. ব্যক্তি বিশেষে- আমার কাছে যেটা ভুল, আপনার কাছে সেটাই সঠিক
২. সময় পরিবর্তনে- আজকে যেটা সঠিক, সেটাই কাল ভুল প্রমানিত হবে
৩. স্থান বিশেষে- যেটা ঢাকার ক্ষেত্রে ভুল, সেটাই গ্রামে সঠিক
৪. অভিজ্ঞতা / দৃষ্টিভঙ্গির বিচারে – আমার কাছে যা সঠিক তা আমার বাবার কাছে নিতান্তই ছেলে মামুষি
তাই সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে নিজের সাথে বোঝাপড়াটা খুবই জরুরী। আমরা পরামর্শ নিতেই পারি- বিকল্প ভাবনার ক্ষেত্রে। তবে দিন শেষে সিদ্ধান্ত আমারই।
ঝুঁকি এবং সুযোগ নিজেরই।
তাই চোখ বন্ধ করে, মন এবং মস্তিষ্ককে শান্ত রেখে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা উচিত।

নিজেকেই ভালোবাসো

নিজেকে ভালোবাসতে পারাটাও একটা আর্ট। নিজেকে ভালোবাসতে হয় প্রথম প্রেমের মতো। প্রথম প্রেমিকার মতো, খেয়াল রাখতে হয় আদরে আবেগে। প্রেমিকার সকল ভালোলাগা মন্দলাগা বিষয়গুলো যেমন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে হয়। তেমন করেই জানতে হয় নিজের ভালোলাগা, খারাপ লাগা, পছন্দ-অপছন্দ।

 

নিজেকে ভালোবাসা মানে নার্সিস্ট হওয়া না। নার্সিস্ট তো শুধু নিজের বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে। কিন্তু নিজেকে ভালোবাসা তার চেয়ে বেশি কিছু। নিজের বাহ্যিক সৌন্দর্য এর সাথে মনের এবং আভ্যন্তরীন অঙ্গ প্রতঙ্গের একটা সুন্দর সিনক্রোনাইজেশনই হলো নিজেকে ভালোবাসা।

 

ভালবেসে নিজেকে উপহার যেমন দিতে হয়। তেমনি শাসন করতে হয় খুব বেশি ইমোশনাল হলে। প্রিয়ার অভিমান ভাঙানোর মতো করে নিজের জড়তা এবং শংকাগুলোকেও ভেঙে চুরমার করে দিতে হয় সু-কৌশলে। নিজেকে আস্তে আস্তে প্রকাশ করতে সমাজের সকলের লাছে নিজের প্রেমিকার মতো করে।

 

নিজেকে ভালোবাসতে জানাটাও একট দক্ষতা। প্রেমিকার শারীরিক সৌন্দর্যের প্রতি যেমন থাকে আকর্ষণ, মোহ টান। তেমন করে নিজের শরীরটাকে চেনাটাও খুব জরুরী। শরীরের খুঁটিনাটি প্রতিটি ইঞ্চি ইঞ্চি চিনে রাখতে হয়। তাদেরকে তোষামোদ করতে হয়। শানিত করতে হয়, চকচকে ধারালো। তবেই সে হয়ে ওঠে আকাংখিত।

 

শরীরের মতো মনটাও খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ। মনটা যদি বিশৃঙ্খল থাকে, গোমড়ামুখো হয়ে থাকে প্রেমীর মুখের মতো- তাহলে শরীর কিংবা বাহ্যিক সৌন্দর্য কোনটায় সঠিকভাবে কাজ করবে না। তাই মনটাকে সুস্থ্য রাখা, শান্ত রাখাটাও কম জরুরী নয়।

 

নিজেকে ভালোবাসার মধ্য দিয়েই খুঁজে পাওয়া যায় নিজের অস্তিত্ব। খুঁজে পাওয়া যায় জীবনের অর্থ। জীবন হয়ে ওঠে আনন্দময়। ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে নিজের জীবন। নিজের চারপাশ। তখন চারপাশের মানুষগুলোও আপনাকে ভালোবাসতে শুরু করে। সফলতা ধরা দেয় নিজের তালুতে। আর নিজে হয়ে ওঠা যায় একজন আনন্দময় মানুষ হিসেবে।

 

 

০৯/০৪/২০২১

কক্সবাজার

 

অপচয়

বউকে কইলাম  একটার বেশি জুতা কেনা, বেশি বেশি জামা-প্যান্ট কেনা অপচয়।

জবাবে বউ কইলো- তুমি যে বই কিনে জমিয়ে রাখো- সেগুলো কি অপচয় না?

চুপ করেছিলাম,  এখনো জবাব খুঁজে পাই নি কি উত্তর দেবো।

 

কোনটা অপচয় আর কোনটা না সেটা নতুন করে ভাবাচ্ছে-

প্রয়োজনের অতিরিক্ত সবকিছুই কি অপচয় না?

কিংবা যে জিনিসের যথোপযুক্ত ব্যবহার না হয়ে – শুধু শুধু পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে- সবকিছুই কি অপচয় না?

অথবা একটা জিনিস বা উপাদনের ব্যবহারের কি কোন শেষ আছে? তাহলে আমরা যে ব্যবহার করতে পারছি না সেগুলো কি অপচয় না?

বা কি ক্ষতি অপচয় হলেই বা? আমার আছে আমি খাবো কি নষ্ট করবো- তা আমার একেবারই নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়। আমার তো কোন ক্ষতি হচ্ছে না অপচয়ে। তাই আমি কেন ভাববো অপচয় নিয়ে।

আবার আদৌ কি কোন জিনিষ অপচয় হয়? এটা তো প্রকৃতির নিয়ম- আমাদের অনুষ্ঠানে খাবার নষ্ট হয় বলেই ফকির মিসকিন খেতে পারে। আর যা খাওয়ার উপযুক্ত থাকে না- সেগুলো কুকুর, বিড়াল, হাঁস-মুরগি, মাছ- পাখির খাবার হয়। এর পরেও অবশিষ্টাংশ কেঁচো-তেলাপোকাসহ অন্যান্য কীটের খাবার হয়ে- সার হয়ে প্রকৃতিতে মিশে যায়। যদি অপচয় নাই হয় তাহলে এই চক্র চলবে কিভাবে?

 

আমরা বেশি বেশি পোষাক কিনি বলেই পোষাক শ্রমিকের আয় হয়- জীবন জীবিকা চলে। আবার শীতার্ত এবং দরিদ্র মানুষ পুরনো পোষাক পায়।

তাইলে কি অপচয় ভালো? কিংবা প্রয়োজনের সীমানার শেষ কোথায়? আমার বাবার বছরে ২ টা জামার বেশি লাগে না। আমার তো ১০টাতেও চলে না।

অন্যদিকে আমি হয়তো খাবার নষ্ট করি না।  কেউ নষ্ট করলে কষ্ট লাগে, রাগ হয়। কিন্ত সেই আমি হয়তো বউ কিনে না পড়ে সাজিয়ে রাখি।

তবে অপচয় নিয়ে আমি ভাবি কারণ – এই পৃথিবীর সম্পদ সীমিত। আপনার-আমার হয়তো টাকা আছে- চাইলেই এক প্লেট ভাত নষ্ট করতেই পারি, বা একটা জামা বেশি কিনে আলমারিতে সাজিয়ে রাখতেই পারি। কিন্তু জানি কি এই এক প্লেট ভাত বা একটা জামা তৈরি করতে কতো লিটার করে মিঠা পানি খরচ হয়েছে? আর মিঠা পানি এতোটাই সীমিত যে- এটা নিয়ে কষ্ট আমি জন্ম থেকেই দেখে আসছি। তাই চাইলে আমার প্রকৃতির সীমিত সম্পদ অপচয় করে নষ্ট/ধ্বংস করার অধিকার নেই।

না হলে একদিন হয়তে ভাত কিংবা পোষাক জুটবে কিন্তু তৃষ্ণা মেটানো পানি জুটবে না। তখন তো আর ভাত ও পোষাক পান করে তৃষ্ণা  মিটবে না।

 

১২/০৬/২০২১

শিকদার পাড়া, কক্সবাজার

সৌন্দর্য

মানুষের ভাবনা, চিন্তা, স্বপ্ন……
বড্ড বেশি সাজানো গোছানো…।
কিন্তু জীবন, বাস্তবতা বেশ খানিকটা অগোছালো…
কিংবা এটাই বুঝি জীবনের সৌন্দর্য

Think Out of BOX

সফলতার পথ গুলো সংকীর্ণ করে
বলছো- Think Out of BOX.
সব কিছু বাঁধা যখন নিয়মে-
কিসের তফাৎ LION কিবা FOX?

‘কৃষি’ কেন গুরুত্বপূর্ণ

বারসিক এর সাথে আমার যাত্রা ২০১১ সাল থেকে। প্রথম বার ফেলোশিপ এর মাধ্যমে দ্বিতীয়বার গবেষণা সহকারী হিসেবে ২০১২ সালে এবং সব শেষে ২০১৪ সালে কর্মী হিসেবে। প্রতিবার যখনই জানার চেষ্টা করেছি বারসিক কী নিয়ে কাজ করে। তখন বারবারই সবকিছু ছাঁপিয়ে প্রধান কাজ হিসেবে দেখা দেয় ‘কৃষি’ র নাম। আবার আমি নিজেও যখন অন্য কাউকে বোঝাতে যাই তখন বোঝানোর শেষে সেই ব্যক্তি বলে ওঠেন, ‘‘ও আপনারা কৃষি নিয়ে কাজ করেন”। কিংবা কখনো বোঝানোর কষ্ট না করে বলি কৃষি নিয়ে কাজ করি। কিন্তু, বারবারই মনে হয়েছে, শুধু কৃষি দিয়ে বারসিক কে পূর্ণাঙ্গভাবে প্রতিনিধিত্ব করা হয় কি? এই প্রশ্নের উত্তর অনেক দিন খুঁজেছি। তবে মন ভরেনি। অবশেষে, গত বছর বারসিক রামেশ্বরপুর রিসোর্স সেন্টার এ আমি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যায়ল এর নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক অভিজিৎ রায় এবং বারসিক এর সমন্বয়কারী সৈয়দ আলী বিশ্বাস এর সাথে একটি আড্ডার আলোচনা থেকে এর আংশিক উত্তর খুজে পাই। সেদিনকার সেই বোঝাপড়া আমি বারসিক পরিবার এবং শুভাকাংখিদের সাথে শেয়ার করতে আগ্রহ প্রকাশ করছি।
বারসিক ২০০১ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রধানত যে কাজটা করে সেটা হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদকে মানুষ কীভাবে জীবনধারনের জন্য চর্চার মধ্য দিয়ে সেটাকে (প্রাকৃতিক সম্পদ) সংরক্ষণ করে। বারসিক তার এই ধারণাগত জায়গাকে স্পষ্ট করার জন্য- মানুষকে বোঝার জন্য যে, মানুষ কীভাবে প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে তার জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করছে। এই ৩ বছর মানুষের সেই সমস্ত কৌশল বোঝার চেষ্টা ও ডকুমেন্টেশন করেছে।
এই ৩ বছরের কাজের মধ্য দিয়ে প্রধানত ৩টি বিষয়কে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। যথা:
১)     প্রাকৃতিক সম্পদ,
২)     চর্চা ও ব্যবহার এবং
৩)     সংরক্ষণ।
এই তিনটি বিষয়ের মধ্যে পারষ্পারিক সম্পর্ক হচ্ছে কৃষি। আর কৃষির সাথে এই সম্পর্ক হচ্ছে জ্ঞান উৎপাদনের সর্ম্পক।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই কৃষি বা কৃষকের জ্ঞান বা সাধারণ জনগণের জ্ঞান কেন বারসিক এর কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ? কেননা আধুনিক জ্ঞান যেখানে কৃষি পন্যের উৎপাদনকে বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি যে কোন সমস্যা সমাধানে আধুনিক জ্ঞান অনেক বেশি কার্যপোযোগি; সেখানে কেন বারসিক এত বেশি সাধারণ মানুষের জ্ঞানকে প্রাধান্য দিচ্ছে?
আমরা সবসময় পড়ে এসেছি, শিখে এসেছি এবং জেনে এসেছি যে, কৃষি হচ্ছে উৎপাদন (প্রোডাকশন) এর বিষয়, বাণিজ্যিক (মার্কেট) বিষয়, কৃষি হচ্ছে লাভ-ক্ষতির বিষয়। পাশপাশি কৃষিকে সমসাময়িক সময়ে সাধারণীকরণ করা হয় খাদ্য নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে।
কিন্তু বারসিক যখন কৃষকের কাছ থেকে ‘কৃষিকে’ বুঝার চেষ্টা করে তখন দেখা যায় কৃষকের কাছে কৃষি শুধুমাত্র উৎপাদনের বিষয় নয়। এটি একজন কৃষকের কাছে সমগ্র জীবনের বিষয়। কৃষি হচ্ছে সামাজিক বন্ধনের ও সামাজিক সংহতির বিষয়। গ্রামীণ জীবনের পারস্পারিক দ্বন্দ্ব সংঘাত ও সংহতির বিষয়। কেননা কৃষির মধ্যে দিয়েই একটি গ্রামের সম্পর্ক তৈরি হয় এবং বিরাজ করে। একই সাথে কৃষি হচ্ছে পরিবেশ এবং প্রতিবেশীয় বিষয়। এটি কৃষকের কাছে মাটি ও বাস্তুসংস্থান এর বিষয়। একইসাথে এটি কৃষকের কাছে বৈচিত্র্যের বিষয়। বৈচিত্র্যকে টিকিয়ে রাখার বিষয়, বৈচিত্র্যের মধ্যকার আন্তঃসম্পর্ককে টিকিয়ে রাখার বিষয়।
কিন্তু কৃষি যখন একজন উন্নয়ন কর্মী/প্রতিনিধি (এজেন্ট) বা একজন গবেষক যখন উপস্থাপন করে তখন সে নিয়ে আসে লাভ-ক্ষতি, কৃষি উপকরণ এবং খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়গুলো। আর সকল উন্নয়ন এজেন্সী কৃষিকে একইভাবে উপস্থাপন করে। কিন্তু একজন কৃষকের কাছে কৃষির বিষয়টি তার জীবনাদর্শনের সাথে সম্পর্কীত। কৃষক তার কৃষিকে কক্ষনোই ওতোটা সরলীকরণ করে দেখে না। একজন কৃষক যখন তার কৃষিকে তার প্রতিবেশ, তার গ্রাম, তার বৈচিত্র্যময় জীবনযাপনের সাথে আন্তঃসম্পর্ক করে ভাবতে পারে; তখন কোনভাবেই এই কৃষি এবং কৃষকের জ্ঞান উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে না রাখার অবকাশ থাকে না। সুতরাং গ্রামে কাজ করার ক্ষেত্রে এই একটি কারণই যথেষ্ট কৃষি এবং কৃষকের জ্ঞানকে গুরুত্ব দেয়ার।
তাই বারসিক যখন বৈচিত্র্য নিয়ে কথা বলে তখন এটি আসলে চলে আসে কৃষকের দৃষ্টিতে দেখা বৈচিত্র্যকে। আর কৃষি হচ্ছে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের টিকে থাকার, বেঁচে থাকার জ্ঞান এবং কৌশল। তাই গ্রামের মানুষের সাথে সর্ম্পক স্থাপনের একটি অন্যতম উপায় হচ্ছে কৃষিকেন্দ্রিক কৃষকের চিন্তা দর্শনকে প্রাধান্য দিয়ে সামাজিক সম্পর্ক, পরিবেশ, সমাজনীতি, অর্থনীতি তথা সমাজ কাঠামোকে বোঝা।
বীজ হচ্ছে কৃষির প্রথম এবং প্রধানতম হাতিয়ার। বীজকে কেন্দ্র করেই কৃষির যতধরনের সমস্যার সূচনা; কৃষির ব্যবসায়িক এবং রাজনৈতিক যাত্রা। বীজ যখন কৃষকের হাত থেকে বাজারের হাতে চলে গেছে তখন বীজ এবং কৃষির সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়গুলো নষ্ট হয়ে যায়। একটি গ্রামের মধ্যে যে সামাজিক সংহতি আছে সেগুলো ভেঙে পড়ে। সংহতির সাথে সাথে মানুষে মানুষে যে ইউনিটি আর থাকে না। কেননা কৃষি ও কৃষকের সম্পর্ক বিনিময়ের সম্পর্ক যা বাজার থেকে আসে না। যদি আসে তবে সেটা পারস্পারিক নির্ভরশীলতার সম্পর্ক নয়, নৈর্ব্যত্তিকভাবে ক্রেতা-ভোক্তার সম্পর্ক। পারস্পারিক নির্ভরশীলতার সম্পর্ক তৈরি হয় পরস্পর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা আর সম্মান প্রকাশের ভেতর দিয়ে।
এই নির্ভরশীলতার সম্পর্ক শুধু মানুষে মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এই নির্ভরশীলতা প্রাকৃতিক উপদানের মধ্যে রয়েছে। রয়েছে পেশার বৈচিত্র্যতার মধ্যেও। যদি কৃষি ভালো না থাকে তাহলে মাছ থাকবে না। আর মাছ যদি না থাকে বাঁশ-বেত শিল্প থাকবে না। এই বাঁশ-বেঁত শিল্প যে সমস্ত উপকরণ বানায় সেগুলো বেশিরভাগই লাগে মাছ ধরা এবং কৃষি ক্ষেত্রে। কৃষির মতো মৎস্যও যদি বাণিজ্যিক হয়ে যায় তাহলে বাঁশ-বেঁত শিল্পও হারিয়ে যাবে। হারিয়ে যাবে কুমার। কারণ কৃষির সাথে মাটির যে সম্পর্ক; বীজের সাথে মাটির যে সম্পর্ক সেটি হারিয়ে গেলে মাটির গুনগত মান নষ্ট হয়ে যাবে।
বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা হচ্ছে কাজের ক্ষেত্র তৈরি না হওয়া। যেহেতু এখানে জনসংখ্যা বেশি সেহেতু এখানে কাজের চাহিদাও বেশি। আর কাজের সংকট তৈরি করতে হবে রাখতে হবে মুক্তবাজার অর্থনীতির ব্যবসায়িক স্বার্থে। প্রতিদিন কৃষি, মৎস্য, বাঁশ-বেঁত শিল্পের মতো অসংখ্য কাজের ক্ষেত্র বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই ক্ষেত্রে মানুষগুলো কী করবে বা তাদের কী ধরনের কাজ সরবরাহ করা হবে। কাজের ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে একটার সাথে আর একটার আন্তঃসম্পর্কের মধ্য দিয়ে। আর যখন এই আন্তঃসম্পর্ক থাকছে না তখন তৈরি হচ্ছে সমস্যা। আমরা তখন হয়ে যাচ্ছি ব্যবসায়ী। আর তখনই বাজার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ অর্ন্তভূক্ত থাকে প্রাকৃতিক সম্পদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে। কিংবা এভাবে বলা যায় সকল জ্ঞানের উৎপত্তি এই প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে। কিন্তু যখন এই প্রাকৃতিক সম্পদ নির্ভর না থেকে সবাই বাজারনির্ভর ব্যবসায়ী হয়ে যাচ্ছি তখন আর নতুন জ্ঞান উৎপাদন হচ্ছে না। আর এই জ্ঞান যখন একটা কমিউনিটি থেকে উৎপাদন হচ্ছে না তখন এই জায়গাটা দখল করছে বাইরে থেকে আগত মানুষ, প্রযুক্তি এবং কোম্পানি।
এর ফলে কৃষক, জেলে এবং বাঁশ-বেত শিল্পীর মধ্যকার যে আন্তঃসম্পর্ক সেটি না থাকলে কোনভাবেই কেউ টিকবে না। শুধু মাছ বাঁচিয়ে জেলেকে রক্ষা করা যাবে না; যদি না ভিন্ন ভিন্ন মাছ না থাকে তাহলে সেই ভিন্ন ভিন্ন মাছ ধরার জন্য ভিন্ন ভিন্ন উপকরণ থাকবে না। ভিন্ন ভিন্ন উপকরণ থাকবে না; যদি না কৃষকের বাঁশ-বেঁত এর জন্য আলাদা জায়গা না থাকে। এই আন্তঃসম্পর্ক ঘুরে ফিরে বারবার আসে শেষ হয় কৃষিতে। তাই সবার আগে এই দেশের নিজস্ব কৃষি ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে হবে।
এই ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে হলে এই প্রাকৃতিক সম্পদ নির্ভর বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যকার যে আন্তঃসম্পর্ক, আন্তঃনির্ভরশীলতা এবং আন্তঃবিনিময়কে বজায় রাখতে হবে। তাই কৃষিকে রক্ষা করতে হলে শুধু কৃষি বা কৃষক দিয়ে হবে না। কৃষি বা কৃষকের সাথে সাথে জেলেকে রক্ষা করতে হবে। জেলেকে দিয়ে জেলে রক্ষা হবে না যদি কোন মাছ ধরার জন্য কি ধরনের জিনিস দরকার- তা না থাকে। তাই এই ব্যবস্থার জন্য প্রতিটি জায়গাকে শক্তিশালী করতে হবে। একই সাথে এদের মধ্যকার আন্তঃসম্পর্ক এবং আন্তঃনির্ভরশীলতাকে শক্তিশালী করতে হবে। তখনই বারসিক এর বিভিন্ন পেশাভিত্তিক সংগঠনগুলো সামনে চলে আসে। এরই ধারাবাহিকতায় কৃষক সংগঠন, জেলে সংগঠন, বাঁশ-বেঁত সংগঠন, মাটিকেন্দ্রিক জনগোষ্ঠীর সংগঠনসহ অন্যান্য সংগঠন গড়ে উঠেছে।
বারসিক শুরু করেছিল শুধু কৃষি দিয়ে। কিন্তু বর্তমানে কৃষি কিন্তু শুধু কৃষি থাকেনি। বীজ কিন্তু শুধু বীজ থাকেনি। এটি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বশীল যে কোন একটি গ্রামের সমগ্র বিষয়ই অর্ন্তভুক্ত হয়েছে। তাই বারসিক এর কাছে কৃষি কক্ষনোই শুধুমাত্র উৎপাদনের বিষয় না। কৃষি সামাজিক সম্প্রীতির বিষয়। সামাজিক বন্ধনের বিষয়। কৃষি হচ্ছে পরিবেশ এবং প্রতিবেশের বিষয়। কৃষি হচ্ছে প্রাণ বৈচিত্র্যের বিষয়।
তাই বারসিক কৃষিকে কেন্দ্র করে একটি গ্রামের সকল বিষয় নিয়ে কাজ করে থাকে। কৃষি কেন্দ্রিক অন্যান্য কার্যক্রমগুলো শুধুমাত্র উৎপাদনকে নয়; মানুষে মানুষে আন্তঃসম্পর্ক, আন্তঃনির্ভরশীলতাকেই গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

“পুরাতন জিসিন কি ডিম পাড়ে?”- আসুন বেঁচে দিই!

বছরখানিক আগে টেলিভিশন, ইউটিউব, ফেসবুক কিংবা পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপন বেশ চোখে লেগেছিল, কানে বেজেছিল। আর সেটি হল বিক্রয় ডটকমের ‘পুরনো জিনিস কি আর ডিম পাড়ে? ছবি তুলুন, পোস্ট করুণ আর বেচে দিন’। একই সময়ে ভারতীয় টেলিভিশনগুলোতে একই ধরণের বিজ্ঞাপন ‘পুরনো জিনিস কে ধরে না রেখে বেচে দিন।’-OLX.COM এর। সত্যিই তো পুরনো জিনিস কি ডিম পাড়ে? সুতরাং তাকে বেচে দিন?
পুরনো জিনিসের কি ডিম পাড়া ছাড়া আর কোন মূল্য নেই? আপনার বাবার দেয়া জীবনের প্রথম ‘ঘড়ি’; হাতে দিতে পারেন না-ওল্ড ফ্যাশান বলে! কি আর করা বেচে দিন। আপনার বিয়ের প্রথম লাল টুকটুকে ৪০ বছরের পুরনো শাড়ী-কি আর কাজে লাগবে? বেঁচে দিন। আমার বাবার একটি ৩৭ বছরের পুরনো সাইকেল আছে-আমারই চালাতে বেশ কষ্ট হয়। তবু বাবা সাইকেলটা এখনো চালান। সাইকেলটা তার শ্বশুর তার বিয়ের সময় তাকে উপহার দিয়েছিলেন। সাইকেলটা তো আর নতুন সাইকেল দেবে না! বরং মেইনটেনেন্সের জন্য প্রতিনিয়ত খরচ হবে। আমার বাবা কি সেটা বেচে দেবে? বেঁচে থাকতে তো নয়ই।
পুরনো মূল্যবোধ, সংস্কার, ভালোবাসা, বিশ্বাস-আস্থা ধরে রেখে লাভ কি বেচে দিই। ছোট বেলা থেকে দেখে এসেছি, শুনে এসেছি, শিখে এসেছি এবং বেচে এসেছি পুরনো জিনিস। পুরনো ছেড়া-ফাটা, ভাঙ্গাচুরা জিনিস দিয়ে ফেরিওয়ালার কাছ থেকে চকলেট, আইসক্রিম, পাঁপড় ভাজা কিংবা বিনিময়ে মা-চাচীরা নিয়েছে ঘরের প্রয়োজনীয় হাড়ি-পাতিল। এগুলোর কি কোন প্রভাব নেই আমাদের জীবনে? এর বিন্দুমাত্রা রেশ কি নেই আমাদের মগজে?
এগুলো দেখতে-দেখতে, শুনতে-শুনতে আর করতে করতে যখন আমাদের নিজেদের জীবনে কোন পুরাতন, বৃদ্ধ, জরাজীর্ণ ঘরের মানুষকে দেখি-যারা হয়তো আপনার আমার বাবা-মা, দাদা-দাদি কিংবা নানা-নানী যারা সারাদিন ঘরের কোনে বসে থাকে; ডিম পাড়ার জন্য। কিন্তু দিন শেষে কোন ডিমই পারে না। তখন কি বলতে ইচ্ছে করে না-ধুর এই বুড়া গুলো তো ঘরে বসে ডিমও পারে না; বেঁচে দিই বিক্রয় ডট কম কিংবা ওএলএক্স ডট কমের মতো কোন কম্পানি কিংবা ফেরিওয়ালার কাছে। জায়গাও বাঁচল, ঝামেলাও কমলো। সেই ফেরিওয়ালা হয়তো কোন ওল্ড এজড হোম কিংবা বৃদ্ধাশ্রম। কিংবা আমাদের বৃদ্ধ মানুষ বেচার মতো কোন কোম্পানি নেই বলে হয়তো ফেলে রাখি বাড়ির সবচেয়ে অন্ধকার ঘুপচি ঘরটিতে। কোন যত্ন নেই, আদর নেই, খোঁজ খবর নেই। পুরনো মানুষটার পিছনে যে অর্থ আর ওষুধ খরচ হয় সেটাও বুঝি বৃথা অপচয়।
ভাবছেন আমার কথার কোন ভিত্তি নেই। ভেবে দেখুন, আপনার বাসার পুরাতন দৈনিক পত্রিকাগুলো কি করেন ফেলে রাখেন সবচেয়ে অন্ধকারের ঘুপচিতে। তারপর যখন আর জায়গা হয় না তখন বেঁচে দেন কাগজওয়ালার কাছে। বাসার যত পুরাতন অব্যবহার্য, কাজে লাগে না এমন জিনিস আপনি কি বেঁচে দেন না একেবারে নামমাত্র মুল্যে? তাহলে ঠিক সেই একই আচরণ কি করেন না বাড়ির সবচেয়ে পুরাতন সদস্য-যিনি কোন কাজের না, বাসার জায়গার অপচয়। হয়তো সে আপনার আপনজন বলে বেচতে পারছেন না। কিংবা বেচার কোন সুযোগ নেই বলে হয়তো। জানি না যদি কোন দিন সুযোগ তৈরি হয়-তাহলে আমিও হয়তো বেচে দিতে পারি আমার পরিবারের পুরাতন সদস্যকে!
আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে বাসার পুরাতন জিনিস আর পুরাতন/বৃদ্ধ মানুষ কি এক? নিশ্চয় না। কিন্তু এই যে পুরনো জিনিসের প্রতি আমাদের দীর্ঘ দিনের আচরণ, অভিব্যক্তি, ব্যাখ্যা কি কোন প্রভাব ফেলে না আমাদের মানুষের সাথে আচরণ কিংবা দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে? বা আমাদের মনস্তত্ত্বে? যদি আপনার উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয়। তাহলে অবশ্যই সেটা মারাত্মক।
দ্বিতীয় আর একটি প্রশ্ন মাথায় আসতে পারে। এই পুরনো জিনিসগুলো নিয়ে আমরা কি করবো? কোন কাজে লাগে না আবার অনেকখানি জায়গা নষ্ট হয়। বেচে দিলেই তো ভালো। একবারও কি ভেবেছেন আপনার এই পুরাতন, অকাজের জিনিসগুলো যারা নামমাত্র মুল্য দিয়ে কিনে নেয়- তারা কি করে? তারা কি আপনার মতো ফেলে রাখে? কক্ষনো নয়। সেটাকে কাজে লাগায়, ব্যবহার করে। কক্ষনো একটু মেরামত করে কিংবা একবারে রিসাইকেলিং করে ভিন্ন কিছু তৈরি করে ব্যবহার করে। কিন্তু আপনি কি কক্ষনো আপনার পুরাতন জিনিসটাকে রিসাইকেলিং করে ব্যবহার করার কথা ভেবেছেন? কিংবা আপনার সন্তানককে কি শিখিয়েছেন? যদি উত্তর ‘না’ হয় তাহলে-সে কীভাবে শিখবে যে পুরাতন জিনিসেরও মূল্য আছে। পুরাতন জিনিসের যেমন মূল্য আছে তেমনি মূল্য আছে আপনার পরিবারের সবচেয়ে পুরাতন সদস্যেরও। তার অভিজ্ঞতা, জ্ঞান এবং দেখাশুনার অশেষ মূল্য আছে আপনার এবং আপনার পরিবারে।
আপনার পরিবারের সকলেই ব্যস্ত। পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্যকে সময় দেয়ার কেউ নেই। আপনার পরিবারের প্রবীণ সদস্য হতে পারে সবচয়ে কার্যকরী। আপনার বাসায় কাজের লোক আছে কিন্তু আপনার স্কুল পড়ুয়া ছোট সন্তানকে বাসায় রেখে যেতে পারছেন না। শুধু যদি একজন প্রবীণ সদস্য থাকে তাহলে এই জটিল সমস্যার সমাধান নিমিষেই হবে। আপনার ছোট কংক্রিটের বাসাটা সবুজ আর প্রাণে ভরে তুলতে পারেন প্রবীণ সদস্যটি। নাগরিক ব্যস্ততা আর সমস্যায় একবারে বিপর্যস্ত। একটুও শান্তি পাচ্ছেন না। কারোর সাথে শেয়ার করতে পারছেন না। আপনার প্রবীণ অভিজ্ঞ বাবা-মা, দাদা-দাদি কিংবা নানা-নানি অথবা শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সাথে একটু সময় কাটান, মন খুলে গল্প করুন। জানি তিনি হয়তো আপনার সমস্যার সমাধান করে দেবেন না। কিন্তু আমি নিশ্চিত আপনি কিছু অনুপ্রেরণা আর সাহস পাবেন। নতুন আত্মবিশ্বাসে ভরে উঠবেন। হয়ে উঠবেন এক নতুন আপনি।
একটু ভাবুন বাড়ির পুরাতন জিনিসটার যেমন হয়ে উঠতে পারে মূল্যবান। ঠিক তেমনি আপনারা পরিবারের প্রবীণ সদস্যও কম মুল্যবান নয়। আপনিও যেমন বিষয়টা আমল করবেন। তেমন করে শেখান আপনার সন্তানকেও। নতুবা আমি আপনিও হয়ে যাবো প্রবীণ-পুরাতন এক বৃদ্ধ। তখন আপনার আমার সন্তান যেন আমাদেরকে পুরাতন ভেবে বেচে না দেয়-‘ডিম পাড়ি না বলে!’