মানুষ তার শত্রু সমান বড়

কজন সত্যিকারের নায়ক বা হিরো কেবল তার গুণাবলির জন্যই বড় নয়; বরং তার প্রতিপক্ষ বা শত্রুর শক্তিমত্তাও তার বীরত্বের মাপকাঠি নির্ধারণ করে। যার শত্রু যত বড়, তার বীরত্বও তত বড় পরিসরে বিস্তৃত হয়। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, প্রতিটি মহান বিপ্লব, প্রতিটি ঐতিহাসিক সংগ্রাম শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপরীতে দাঁড়িয়েই মহিমান্বিত হয়েছে।

এ কারণেই একজন বিপ্লবীর জন্য তার শত্রু বা প্রতিপক্ষ বেছে নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। যদি প্রতিপক্ষ দুর্বল হয়, তবে সেই লড়াইয়ের গুরুত্ব ও গভীরতা কমে যায়। কিন্তু যদি শত্রু প্রবল হয়, তবে সেই লড়াইও একটি বৃহৎ মাত্রা পায় এবং ইতিহাসের পাতায় বিশেষভাবে স্থান পায়।

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান বা বিপ্লবকে বড় করে দেখার মূল কারণ হলো, এটি যে শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে পরিচালিত হচ্ছে তা অত্যন্ত শক্তিশালী, সুসংগঠিত এবং দীর্ঘমেয়াদী ক্ষমতাধারী। আওয়ামী লীগ শাসনব্যবস্থা এবং এর একচ্ছত্র নেতৃত্বে থাকা শেখ হাসিনা এই বিপ্লবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা প্রধান প্রতিপক্ষ। এমনকি আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার হওয়া নেতাদের বক্তব্যেও প্রকাশিত হয়েছে যে, তারা শেখ হাসিনার একনায়কতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়েছেন।

একজন শাসকের প্রকৃত শক্তি তার বিরোধীদের দ্বারা নির্ধারিত হয়। শেখ হাসিনা দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রয়েছেন এবং তার শাসনব্যবস্থা অত্যন্ত কঠোরভাবে বিরোধীদের দমন করেছে। এ কারণেই ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান এতটা বিস্তৃত হয়েছে এবং বড় রূপ নিয়েছে। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈপরীত্য রয়েছে—এই বিপ্লবের একজন প্রধান নায়ক নেই।

ইতিহাসে অনেক বিপ্লবে একজন নির্দিষ্ট নেতা বা নায়কের নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছে, যিনি প্রতিপক্ষের সমতুল্য ছিলেন বা তার চেয়েও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। কিন্তু ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। এখানে কোনো একক নায়ক নেই, বরং অনেকগুলো স্টেকহোল্ডার রয়েছে। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের মধ্যে বিভক্ত। ফলে ছয় মাস পরেও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব অব্যাহত রয়েছে—কে আসলে বড় নায়ক, কারা প্রকৃত স্টেকহোল্ডার?

তবে একথা অনস্বীকার্য যে, শেখ হাসিনার মতো ক্ষমতাধর প্রতিপক্ষের সমতুল্য কোনো নায়ক এখনও আবির্ভূত হয়নি। এই বিপ্লবের অংশগ্রহণকারীরা হয়তো এককভাবে আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের শক্তির সমকক্ষ হতে পারেনি, তবে তারা সম্মিলিতভাবে একটি গণবিপ্লবের চেহারা গড়ে তুলেছে। এ কারণেই একে গণঅভ্যুত্থান বলা হচ্ছে—এটি শুধুমাত্র কোনো নির্দিষ্ট দলের নয়, বরং সাধারণ মানুষের অভ্যুত্থান।

তবে, আজকের আলোচনার মূল উপজীব্য এই সমসাময়িক রাজনৈতিক পটভূমি নয়। বরং বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা যখন দেখি, তখন উপলব্ধি করি—একজন মানুষের মূল্যায়ন অনেকাংশে নির্ভর করে তার প্রতিপক্ষ বা চ্যালেঞ্জের মাত্রার ওপর। ব্যক্তি, সমাজ কিংবা জাতি—যার বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তার শক্তিমত্তা যত বড়, সেই সংগ্রামও তত মহৎ হয়ে ওঠে। তাই একজন বীরের সঠিক পরিচয় নির্ধারিত হয় তার শত্রুর পরিধির মাধ্যমে।

তাই আমাদের বন্ধুর চেয়ে- কে আমার শত্রু সেটা চিনে নেয়া জরুরী। আমার শত্রু হয় যদি – বাসার দারোয়ান, কাজের বুয়া, পাড়ার চাচা, সেই কমন আত্মীয়- যে সবকিছুতেই শুধু হিংসা করে আর ত্রুটি ধরে। কিংবা আমাদের ননদ- শাশুড়ি কিংবা প্রতিবেশি চাচা যে পায়ে লেগে ঝগড়া করে। তবে আমাদের অর্জন হবে তেমনটাই। অন্যদিকে আমাদের শত্রু বা প্রতিদ্বন্দ্বী যদি এমন হয় যে- চিন্তা, চেতনায়, কৌশলে কিংবা অর্থে-বিত্তে আমার চেয়ে যোজন যোজন দূর; তবে আমাদের প্রস্তুতি, কৌশল এবং বিজয় টা হবে – অনেক বড় কালোত্তীর্ণ। Our victory will be larger than life.

আমাদের সেই গল্প-উপন্যাস বা সিনেমার হিরো/নায়কের (Protagonist) কথাই বেশি মনে পড়ে- যে গল্প, উপন্যাস, সিনেমার ভিলেন (Antagonist) বা খল চরিত্র যতো বড় আর বিশাল। শোলে সিনেমা তাই গাব্বার চরিত্র হয়ে ওঠে অন্যতম। রামায়ণে তাই রাবণ; বিষাদ-সিন্ধুতে তাই এজিদ চিরস্মরণীয়। ইতিহাসে মুখ্য হয়ে ওঠে হিটলার।

সুতরাং কে আমার শত্রু হবে? কে হবে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী- সেটা চিহ্নিত করা অনেক জরুরী। অথবা এমন কাউকে বেঁছে নেয়া- যে আমার বেঞ্চমার্ক হবে। যাকে আমরা অতিক্রম করবো। তবেই আমার আমি শানিত হবো; দক্ষ হয়ে উঠবো।

কিন্তু আমরা করি উল্টোটা। আমরা আমাদের প্রতিদিনের এনার্জি আর মেধা নষ্ট করি- অফিসের কাজ ফাঁকি দেয়া কলিগের সাথে লড়াইয়ে। বাসের কন্ট্রাক্টর, রিকশাওয়ালা, সব্জিওয়ালা র সাথে অহেতুক ঝগড়া করে। আমাদের এনার্জি ব্যায় করি এমন ছোট-ছোট কাজে যা- আমাদেরকে বড় হতে বাধাঁ দেয়। আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি এমন ছোট ছোট শ্ত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে করতে।

আমাদের ইগোতে লাগে আমার আশেপাশের গুরুত্বহীন মানুশগুলোরে অহেতুক মন্তব্যে। মাঝে মাঝে আমরা হতাশ হয়ে পড়ি আমার পাশের মানুষটি যখন আমার চেয়ে ভালো করতে থাকে। কিংবা মন খারাপ করি- এমন কোন মানুষের কটু কথায়- যাকে চিনি না; জীবনে আর কক্ষনো দেখা হবে কি না জানা নেই। সেই মানুষটার কথায় আদৌ কি কোন কিছু যায় আসে?

তাহলে সমাধান কী? সহজ কথায়- ইগ্নোর করা। পাত্তা না দেয়া। ফোকাস ঠিক রাখা। আমাদের তার কথারই গুরুত্ব দেয়া উচিৎ- যে আমার জীবনে কোন ইমপ্যাক্ট রাখে বা রাখবে। আমাদের এমন বিষয়ের প্রতি মনযোগ দেয়া উচিৎ- যেটা অধিক গুরুতবপুর্ণ। বাসায় এসে চাল-তেল-নুনের দাম বৃদ্ধি নিয়ে বউয়ের সাথে রাগারাগি না করে কিভাবে এই ক্রমবর্ধ্মান মুল্যস্ফীতির সাথে পাল্লা দেয়া যায়- সেটা নিয়েই পরামর্শ করা উচিৎ পার্টনারের সাথে। কোন দক্ষতা বৃদ্ধি করা যায় কিনা? নতুন কোন বিজনেস শুরু করা যায় কিনা? কিংবা বিশ্লেষণ করা উচিত – আয় আর ব্যয়ের। কিভাবে খরচ কমানো যায়- এমন কোন খাত খুঁজে বের করা।

অন্যদিকে আমরা যখন কোন প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হই- তখন বিরক্ত হই, দমে যাই, পালিয়ে যাতে চাই। ভাবি- আমার সাথেই কেন বার বার এমনটাই হয়? আমি কি কোন ভাবে অবহেলা কিংবা বঞ্চনার শিকার হচ্ছি? বরং আমাদের ভাবো উচিৎ- এই পরিস্থিতি আমাকে আরো বেশি- পরিশুদ্ধ করে তুলবে। যখনই আমরা প্রতিকূল পরিবেশে পড়ি; নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হই- সেটাকে সমাধানের মাধ্যমে আরো দক্ষ হয়ে উঠি। নিজেকে আরো পরিশীলিত করা যায়।

তাই সেলিব্রেট করা উচিৎ- আমাদের দুঃসময়কে, কঠিন মুহুর্তকে। কেননা এই মুহুর্ত আর সময়কে অতিক্রম করেই আমরা আমাদের ব্যাক্তিগত জীবনে বিজয়ী হই। একইভাবে আমাদের শত্রুকে/প্রতিদ্বন্দ্বীকেও মনে রাখা দরকার। তাদেরকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলা দরকার- Thank you! Your challenges make my journey remarkable.

তাই বন্ধুর চেয়ে শত্রু গুরুত্বপূর্ণ। তাই বড় বন্ধু নির্বাচনের চেয়ে বড় শত্রু বাছাই করা জরুরী। বন্ধুর সহায়তা দুর্বল করে তোলে আর শত্রুর আঘাত দক্ষ আর শানিত করে তোলে। তাই কে আমার শত্রু কিংবা আমি কাকে শত্রু বা প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করবো- সেটা গুরুত্বপুর্ণ।

আমার যত দোষ – ‘সম্পর্ক-কানা’

আমি সত্যি বড়ই ক্লান্ত। ঘর- বাহির সামলাইতে সামলাইতে। ভাল হওয়ার এক ব্যর্থ চেষ্টায় প্রতিদিন হয়ে যাচ্ছি খারাপ। কারো না কারো কাছে।
ভাল ছেলে, ভাল ছাত্র, ভাল মানুষ, ভাল বন্ধু, ভাল কর্মী, ভাল সন্তান, ভাল স্বামী হতে গিয়ে আমি আজ বড়ই ক্লান্ত।
খুব খারাপ হতে মন চায়। একদম পুরো দস্তুর এক খারাপ ছেলে। এত খারাপ যেন কেউ আমার কাছ থেকে ভাল কিছু আশা না করে।
বন্ধুরা অভিমান করে তাদের কেন খোঁজ নেই না। বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন তাদের একই অনুযোগ, শুভাকাঙ্ক্ষী তো দিন দিন কমতির পথে। আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরাও পর্যন্ত এই অভিযোগ করতে থাকে।
কাজের সূত্রে প্রতিদিন ২/১ জনের সাথে পরিচয় ঘটে। তাদের আথিতেয়তা আর ভালবাসায় প্রতিদিন ঋণী হচ্ছি- দিনকে দিনকে।তাদেরও ঠিক মতো খোঁজ নেয়া হয়ে ওঠে না।
আমি আসলে পেরে উঠিনা। আমার হয়তো ধ্যাতে নেই।আমি বেশ সম্পর্ক কানা। আমি কোন সম্পর্ক ধরে রাখতে পারি না বা মেইনটেইন করতে পারি না।
কিংবা আমি মানুষের ভালবাসার মুল্য দিতে পারি না। কত মানুষ ভালবাসার ঋণে আবদ্ধ করে রেখেছে।কিন্তু তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হয়ে ওঠে না। এই মুহূর্তে মনে পড়ছে তিন জন বন্ধুর মায়ের কথা- রাজু, জীবন আর সাগরের। তাদের তিন জনের সাথে আমার সম্পর্ক অল্প সময়ের। কিন্তু সেই অল্প সময়ের মধ্যেই এই তিনজন অনেক আপন করে নিয়েছেন। কিন্তু আমি এক হতভাগা পালিয়ে বেড়াই তাদের ভালবাসার বাঁধন থেকে। অসম্ভব এক চুম্বকীয় শক্তি আকর্ষণ করি তাদের প্রতি। আবার ছুটে চলে আসি দূরে। কেন- তার উত্তর নেই। তবে সত্যি বলছি- আমিও আপনাদের খুব ভালবাসি এবং মিস করি। কিন্তু আপনাদের ভালবাসায় বিলীন হয়ে জাওয়ার ভয়ে হয়তো পালিয়ে বেড়াই নিজের থেকে আরো যোজন-যোজন দূরে।
অনেকটা কাঁকতলিয় ভাবে পরিচিত হয়েছিলাম একজন অবসর প্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার সাথে। তিনিও আমাকে বেশ ভালবাসলেন। আমি তাকে আমার এই ‘সম্পর্ক-কানা’ র কথা খোলাখুলি বললাম। তিনি আমাকে ভুল বুঝলেন। সকল ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলেন। আমি হয়তো তাকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছিলাম।
আমার সাথে খুব ভাল যোগাযোগ নেই আমার কর্মজীবনের শেষ তিন জন সুপারভাইজারের সাথে। হয়তো আমার দিক থেকে কোন ত্রুটি ছিল।তবে এতটুকু বলতে পারি- যখন একসাথে কাজ করতাম তখন কারোর সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটেনি।
আমি এক চরম ‘সম্পর্ক-কানা’।
মানিকগঞ্জ, মার্চ ১৩, ২০১৬

মেকিং লাইফ বেটার

আপনার কি কখনো মনে হয়েছে- ধনী (আর্থিকভাবে সচ্ছল) হওয়ার জন্য যা যা করার দরকার- তার জন্য খুব বেশি দেরি করে ফেলেছেন? (বয়সটা বড্ড বেশি হয়ে গেছে। কেন যে আগে থেকে শুরু করলাম না।)
এমন একটি ভয়ঙ্কর গল্প আছে যা সম্প্রতি খুব বেশি আলোচিত হয়েছে; যেটি আপনাকে উপরের প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে সহায়তা করবে।
গল্পটা এমন—-
এমন অনেক মানুষ আছে যারা সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ (ইনভেস্ট) করতে অনেক দেরি করে, সময় নেয়। কিন্তু যারা দ্রুত শুরু করে- বিশেষ করে ২০ বছর বয়সের আগেই- তারা অবসরের সময় বা বৃদ্ধ বয়সে অনেক বেশি ভালো এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন কাটায়। যারা ৩০ বছরের পরে সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ শুরু করে তাদের তুলনায়।
কিন্তু যারা ৩০ বছরের পরে শুরু করে না এবং জীবনে খুব বেশি সঞ্চয়, বিনিয়োগ কিংবা বিনিয়োগের পরিকল্পনা করে নি। তাদের কি অবস্থা হয়? তারা প্রতিদিন এক বিমর্ষ ও রুঢ় অনুভুতি নিয়ে সকালে ঘুম থেকে ওঠে। তাদের অধিকাংশই এই সিদ্ধান্তে পৌছায় যে- অবসর নেয়া তার জন্য সম্ভব না। এমনকি ৭০ বছরের পরেও তাদের দৈনন্দিন খরচ চালানোর জন্য কাজ করে যেতে হয়। আবার যারা মনে করে- বেশ তো চলছেই এ জীবন চিন্তা কি? তারা আবিস্কার করে যে- তাদের মাটির ব্যাংকটা এখনো ভরে নি। কিংবা মাটির ব্যাংকটা ভেঙ্গে দেখে যে যতোটুকু আশা করেছিল তার ৪ ভাগের একভাগ হয় নি। (their nest egg just isn’t enough.)
প্রাচীন চীনে একটা প্রবাদ আছে, “একটি গাছ লাগানোর সবচেয়ে ভালো সময় আজ থেকে ২০ বছর আগে। (যদি কোন একটি গাছ থেকে আজকেই ফল বা সেই গাছ থেকে অন্য কোন লাভ পেতে চাও- তাহলে সেই গাছটি আজ থেকে ২০ বছর আগে লাগানো উচিত।) আর ২য় ভালো সময় হচ্চে- আজ, এখনই।”
“The best time to plant a tree was 20 years ago. The second-best time is today.”
এখন যারা আমার মতো দেরি করে ফেলেছি; যাদের বয়স ৩০ বছরের বেশি। তারা কি করবে?
এখন টাইম মেশিনে চড়ে ২০ বছর বয়েসের আগে ফিরে গিয়ে তাড়াতাড়ি বিনিয়োগ করা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু, আজ, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে ভালো সময় নিজেকে আর্থিক ভাবে সচ্ছল নতুন সুযোগ রয়েছে …… নিজের সেই পুরনো হারিয়ে যাওয়া সময়কে পুনরুদ্ধার করার । (না এর সাথে লটারি জেতার কোন সম্পর্ক নেই। )
আজ, সব বয়সের লোকেরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করছে। আমি সব ধরণের অনলাইন উদ্যোক্তা, স্টক বিনিয়োগকারী এবং রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগকারীদের সফল হতে দেখেছি:
১. কর্পোরেট চাকুরীজিবী
২. গৃহিণী যাদের নুন্যতম কাজের অভিজ্ঞতা নেই
৩. যারা নিজেদের ৯-৫টা বিরক্তিকর চাকুরি থেকে পালাতে চাইছিলো
৪. একজন অবসর প্রাপ্ত ব্যাক্তি জিনি নতুন কোন আয়ের উৎস খুঁজছেন
একজন ব্যক্তির ব্যাকগ্রাউন্ড সত্যিই এই জন্য কোন ব্যাপার না ……
এমনকি আপনার ভৌগলিক অবস্থানও কোন বিষয় না।
ল্যাপটপ এবং ইন্টারনেট অ্যাক্সেসের মাধ্যমে যে কেউ এখন এটি করতে পারে।
আপনি অতীতে কতো সময় অযথা ব্যয় করেছেন সেটা কখনোই মুখ্য কোন বিষয় না। শুধু একটা জিনিসই মুখ্য- আপনি এখনই কিছু না কিছু শুরু করছেন।
তো, আপনি কোথায়, কখন আপনার গাছ লাগাতে যাচ্ছেন?
মেকিং লাইফ বেটার,
রবার্ট কিয়োসাকি
(রবার্ট কিয়োসাকি’র লেখা থেকে ভাবানুবাদ)

সুখ পাখির বিষাদঘ্রাণ

প্রকাশকঃ পেন্সিল পাবলিকেশন্স
ছোট গল্পের বই। মোট গল্প আছে ৮টি। ঝরোকা, অলীক যাপন, পাহারাদার, অন্দরমহল, পলাতক, মিঠুন কিংবা অজস্র ঘুণপোকার গল্প, সমান্তরাল, রোদের উড়ান। আটটি গল্পের একই সুর- হজারো সুখে থাকার পরে- বুকের মাঝে কোথায় যেন কিসের একটা কষ্ট লুকিয়ে আছে। এটাই এই বইয়ের অন্যতম শক্তিশালী দিক। সধারণত ছোট গল্পের বই গুলোতে সঙ্কলিত গল্পগুলোর মাঝে মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু এই বইটিতে সেটা নেই। প্রতিটি গল্পই পাঠককে মন খারাপ করে দেবে। তবুও আপনি পড়তে থাকবেন। একটা টান কিংবা মায়া রয়েছে পুরো বইটি জুড়ে। লেখক গল্পের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য রেখেছেন। একটা গল্পের সাথে অন্য গল্পের কাহিনী, চরিত্র কিংবা প্রেক্ষাপট ভিন্ন। যদিও সবগুলো মধ্যবিত্তের সাজানো সংসারের মাঝের লুকিয়ে থাকা বিষাদ ঘ্রাণের গল্প।
বইটি পড়তে গিয়ে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে চরিত্রের নামকরণ- ঝরোকা, রুপল, উপল, তনিমা, হেমাঙ্গি, প্রিয়ংশু, রায়া, প্রভৃতি। ভালো লেগেছে লেখকের উপমার ব্যবহারও- রোদের উড়ান গল্পে “ভেজা সজল বাতাস ওর কানে ফিসফিসিয়ে এক মাথা ঝাঁকড়া চুলে নাক ডুবিয়ে চলে যায় ফের দুরের পাহাড়ে।” ভালো লেগেছে প্রতিটি গল্পের টুইস্টও। তবে ধাক্কা খেয়েছি কয়েকটি গল্পে- ঝরোকা, পলাতক। এমনভাবে ধাক্কা খাবো ভাবি নাই। (তুমি ক্যম্নে পারলে এমন করে ভাবতে? আচ্ছা লেখকরা কি একটু বেশি সাইকো হয়?)
কখনো কখনো লেখক এক একটি গল্পের মূল বিষয় বস্তুর বাইরের বিষয় নিয়ে এতো বেশি থিক ডিসক্রিপশন দিয়েছে যে- সেটা গল্পের সাথে অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে। যেমন- ঝরোকা গল্পের অফিস ডেকোরেশন নিয়ে এতো বেশি বর্ণনা না হলেও পারতো। (কিংবা ছোট গল্পে হয়তো এমনটা হয়)
লেখক যেমন একজন আত্মবিশ্বাসী দৃঢ়চেতা ঝরোকার বিশাদ ঘ্রাণের গল্প শুনিয়েছেন, তেমনি শুনিয়েছেন এক পৌঢ়ের দেশ নিয়ে কস্টের গল্প, কিংবা একজন সদ্য বাবার মেয়ের প্রতি ভালোবাসার মধ্য দিয়ে অতীতের কোন অপরাধের স্মৃতিচারণ।
বইটিতে নেই কোন সূচীপত্র, আর বানান ভুল নেই বললেই চলে। তবে আমার কাছে যে কপিটি এসেছে- সেখানে ৩৪ থেকে ৪৯ পেজ পর্যন্ত বেশ উলোট পালট। পড়তে কষ্ট হয়েছে। এবিষয়ে প্রকাশকের দৃষ্টি দেয়া উচিত।
বইটি সংগ্রহে রাখার মতো কিনা সেটা পাঠক বিচার করবে। কিন্তু আমার মনে হয়েছে- সব পাঠকের বইটি পড়লে খারাপ লাগবে না। সময় এবং অর্থ অপচয় হবে না এতোটুকু বলতে পারি।
এটা কোন বইয়ের রিভিউ হলো কিনা জানি না। কিংবা সেটা লিখতেও চাই নি। একজন বন্ধুর বই পড়ে- নিজের অভিব্যক্তিই লিখে রাখলাম।
পরিশেষে, দিদি তোমার লেখনি অনেক ভালো হচ্ছে দিনকে, দিন। থেমো না। আমি তোমাকে ভীষণ ভীষণ হিংসা করি। আর তোমার প্রতি হিংসা এই বই পড়ে আরো বেশি বেড়েছে।
ধরণঃ গল্পগ্রন্থ
প্রকাশনীঃ পেন্সিল পাবলিকেশন্স

ভুল বা সঠিক সিদ্ধান্ত

জীবনে ভুল বা সঠিক সিদ্ধান্ত বলে কিছু নেই।
এটা শুধুই সিদ্ধান্ত।
আবেগ আর বিবেকের মিশেলে সেই সময়ে যেটাকে উপযুক্ত মনে হবে সেটাকেই অনুসরণ করা উচিত।
তবে সব সময় মাথায় রাখতে সিদ্ধান্ত নেয়ার পর আর বিকল্প ভাবা যাবে না, পস্তানো যাবে না, আফসোস করা যাবে না।
সিদ্ধান্তটিকে মেনে নিয়ে মনে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই উত্তম।
মনে রাখতে হবে প্রতিটি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সুযোগ এবং ঝুঁকি দুটোই রয়েছে। এবং ঝুঁকি এবং সুযোগের মধ্যেকার সম্পর্ক ব্যস্তনুপাতিক। সুযোগ যতো বেশি ঝুঁকিও ততো বেশি।
আজ যেটা এই সময়ে, এই অবস্থানে দাঁড়িয়ে সঠিক মনে হচ্ছে – সেটা ভুল হতে পারে ৪ টি বিষয়ের ভিত্তিতে –
১. ব্যক্তি বিশেষে- আমার কাছে যেটা ভুল, আপনার কাছে সেটাই সঠিক
২. সময় পরিবর্তনে- আজকে যেটা সঠিক, সেটাই কাল ভুল প্রমানিত হবে
৩. স্থান বিশেষে- যেটা ঢাকার ক্ষেত্রে ভুল, সেটাই গ্রামে সঠিক
৪. অভিজ্ঞতা / দৃষ্টিভঙ্গির বিচারে – আমার কাছে যা সঠিক তা আমার বাবার কাছে নিতান্তই ছেলে মামুষি
তাই সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে নিজের সাথে বোঝাপড়াটা খুবই জরুরী। আমরা পরামর্শ নিতেই পারি- বিকল্প ভাবনার ক্ষেত্রে। তবে দিন শেষে সিদ্ধান্ত আমারই।
ঝুঁকি এবং সুযোগ নিজেরই।
তাই চোখ বন্ধ করে, মন এবং মস্তিষ্ককে শান্ত রেখে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা উচিত।

নিজেকেই ভালোবাসো

নিজেকে ভালোবাসতে পারাটাও একটা আর্ট। নিজেকে ভালোবাসতে হয় প্রথম প্রেমের মতো। প্রথম প্রেমিকার মতো, খেয়াল রাখতে হয় আদরে আবেগে। প্রেমিকার সকল ভালোলাগা মন্দলাগা বিষয়গুলো যেমন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে হয়। তেমন করেই জানতে হয় নিজের ভালোলাগা, খারাপ লাগা, পছন্দ-অপছন্দ।

 

নিজেকে ভালোবাসা মানে নার্সিস্ট হওয়া না। নার্সিস্ট তো শুধু নিজের বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে। কিন্তু নিজেকে ভালোবাসা তার চেয়ে বেশি কিছু। নিজের বাহ্যিক সৌন্দর্য এর সাথে মনের এবং আভ্যন্তরীন অঙ্গ প্রতঙ্গের একটা সুন্দর সিনক্রোনাইজেশনই হলো নিজেকে ভালোবাসা।

 

ভালবেসে নিজেকে উপহার যেমন দিতে হয়। তেমনি শাসন করতে হয় খুব বেশি ইমোশনাল হলে। প্রিয়ার অভিমান ভাঙানোর মতো করে নিজের জড়তা এবং শংকাগুলোকেও ভেঙে চুরমার করে দিতে হয় সু-কৌশলে। নিজেকে আস্তে আস্তে প্রকাশ করতে সমাজের সকলের লাছে নিজের প্রেমিকার মতো করে।

 

নিজেকে ভালোবাসতে জানাটাও একট দক্ষতা। প্রেমিকার শারীরিক সৌন্দর্যের প্রতি যেমন থাকে আকর্ষণ, মোহ টান। তেমন করে নিজের শরীরটাকে চেনাটাও খুব জরুরী। শরীরের খুঁটিনাটি প্রতিটি ইঞ্চি ইঞ্চি চিনে রাখতে হয়। তাদেরকে তোষামোদ করতে হয়। শানিত করতে হয়, চকচকে ধারালো। তবেই সে হয়ে ওঠে আকাংখিত।

 

শরীরের মতো মনটাও খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ। মনটা যদি বিশৃঙ্খল থাকে, গোমড়ামুখো হয়ে থাকে প্রেমীর মুখের মতো- তাহলে শরীর কিংবা বাহ্যিক সৌন্দর্য কোনটায় সঠিকভাবে কাজ করবে না। তাই মনটাকে সুস্থ্য রাখা, শান্ত রাখাটাও কম জরুরী নয়।

 

নিজেকে ভালোবাসার মধ্য দিয়েই খুঁজে পাওয়া যায় নিজের অস্তিত্ব। খুঁজে পাওয়া যায় জীবনের অর্থ। জীবন হয়ে ওঠে আনন্দময়। ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে নিজের জীবন। নিজের চারপাশ। তখন চারপাশের মানুষগুলোও আপনাকে ভালোবাসতে শুরু করে। সফলতা ধরা দেয় নিজের তালুতে। আর নিজে হয়ে ওঠা যায় একজন আনন্দময় মানুষ হিসেবে।

 

 

০৯/০৪/২০২১

কক্সবাজার

 

অপচয়

বউকে কইলাম  একটার বেশি জুতা কেনা, বেশি বেশি জামা-প্যান্ট কেনা অপচয়।

জবাবে বউ কইলো- তুমি যে বই কিনে জমিয়ে রাখো- সেগুলো কি অপচয় না?

চুপ করেছিলাম,  এখনো জবাব খুঁজে পাই নি কি উত্তর দেবো।

 

কোনটা অপচয় আর কোনটা না সেটা নতুন করে ভাবাচ্ছে-

প্রয়োজনের অতিরিক্ত সবকিছুই কি অপচয় না?

কিংবা যে জিনিসের যথোপযুক্ত ব্যবহার না হয়ে – শুধু শুধু পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে- সবকিছুই কি অপচয় না?

অথবা একটা জিনিস বা উপাদনের ব্যবহারের কি কোন শেষ আছে? তাহলে আমরা যে ব্যবহার করতে পারছি না সেগুলো কি অপচয় না?

বা কি ক্ষতি অপচয় হলেই বা? আমার আছে আমি খাবো কি নষ্ট করবো- তা আমার একেবারই নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়। আমার তো কোন ক্ষতি হচ্ছে না অপচয়ে। তাই আমি কেন ভাববো অপচয় নিয়ে।

আবার আদৌ কি কোন জিনিষ অপচয় হয়? এটা তো প্রকৃতির নিয়ম- আমাদের অনুষ্ঠানে খাবার নষ্ট হয় বলেই ফকির মিসকিন খেতে পারে। আর যা খাওয়ার উপযুক্ত থাকে না- সেগুলো কুকুর, বিড়াল, হাঁস-মুরগি, মাছ- পাখির খাবার হয়। এর পরেও অবশিষ্টাংশ কেঁচো-তেলাপোকাসহ অন্যান্য কীটের খাবার হয়ে- সার হয়ে প্রকৃতিতে মিশে যায়। যদি অপচয় নাই হয় তাহলে এই চক্র চলবে কিভাবে?

 

আমরা বেশি বেশি পোষাক কিনি বলেই পোষাক শ্রমিকের আয় হয়- জীবন জীবিকা চলে। আবার শীতার্ত এবং দরিদ্র মানুষ পুরনো পোষাক পায়।

তাইলে কি অপচয় ভালো? কিংবা প্রয়োজনের সীমানার শেষ কোথায়? আমার বাবার বছরে ২ টা জামার বেশি লাগে না। আমার তো ১০টাতেও চলে না।

অন্যদিকে আমি হয়তো খাবার নষ্ট করি না।  কেউ নষ্ট করলে কষ্ট লাগে, রাগ হয়। কিন্ত সেই আমি হয়তো বউ কিনে না পড়ে সাজিয়ে রাখি।

তবে অপচয় নিয়ে আমি ভাবি কারণ – এই পৃথিবীর সম্পদ সীমিত। আপনার-আমার হয়তো টাকা আছে- চাইলেই এক প্লেট ভাত নষ্ট করতেই পারি, বা একটা জামা বেশি কিনে আলমারিতে সাজিয়ে রাখতেই পারি। কিন্তু জানি কি এই এক প্লেট ভাত বা একটা জামা তৈরি করতে কতো লিটার করে মিঠা পানি খরচ হয়েছে? আর মিঠা পানি এতোটাই সীমিত যে- এটা নিয়ে কষ্ট আমি জন্ম থেকেই দেখে আসছি। তাই চাইলে আমার প্রকৃতির সীমিত সম্পদ অপচয় করে নষ্ট/ধ্বংস করার অধিকার নেই।

না হলে একদিন হয়তে ভাত কিংবা পোষাক জুটবে কিন্তু তৃষ্ণা মেটানো পানি জুটবে না। তখন তো আর ভাত ও পোষাক পান করে তৃষ্ণা  মিটবে না।

 

১২/০৬/২০২১

শিকদার পাড়া, কক্সবাজার

People Deserve the Government

ছোট বেলায় পরিবার আর আত্মীয় স্বজন শিখিয়েছিল- রাস্তায় পথে-ঘাঁটে, স্কুল-কলেজে কোথাও কোন ঝামেলা হলে দ্রুত সুবিধাজনক অবস্থানে সরে যেতে। সম্ভব হলে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে আসতে।

কি সুন্দর শিক্ষা! বেড়ে ওঠা!

আমার সন্তান যেন থাকে নিরাপদে।

তুমি যদি কোন মারামারি বা ঝামেলায় থাকো- কক্ষনো আওয়াজ তুলবা না। চুপচাপ থাকবা। স্বাক্ষী হওয়া যাবে না। পুলিশ কেস হলে অনেক ঝামেলা। কোর্ট- কাচারিতে হাজিরা দিতে দিতে নিজের জীবন শেষ হয়ে যাবে।

সবসময় বন্ধুদের অনুসরণ করবা, একা একা কোথাও যাবা না। সবাই যেখানে যাবে সেখানে যাবে- সেটা যদি ভুলও হয়। ছোট একটা উদাহরণ দেই- শহরে রাস্তা পারাপারের সময় আমরা ট্রাফিক সিগনালের অপেক্ষা করি না। ভিড়ের অপেক্ষা করি। ৩-৪ জন একসাথে হলেই রাস্তায় নেমে যাই। সম্মিলিত ভাবে ট্র্যাফিক আইন ভাঙি। একসাথে হলে অনেক অপরাধ-  স্বাভাবিক হয়ে যায়।

এমনকি মৃত্যুও।

আমরা আসলে সম্মিলিতভাবে অপরাধে বিশ্বাসী। আমরা ঘুষ দেই দলগত ভাবে, সহমত হই দলগত ভাবে, খু/নও করি দলগত ভাবে।

গণ অভভুথ্যানের সময় রিকশাওয়ালা, মেসের খালা, ফুটপাতের দোকানদার, টোকাই যেমন সমান অংশীদার-

এই মৃত্যু গুলোতে- যারা ছবি তুলেছে, আশে-পাশে বসে দূর থেকে চোখের এক কোন দিয়ে দেখেছে- সেও সমান খু/নি।

আমি বিশ্বাস করি না শুধু ১/২/৩ জন খু/নি- আর আশেপাশের মানুষ গুলো (আমিও দাঁড়িয়ে ছিলাম শকল খুনের ভিড়ের মধ্যে) কি ধোঁয়া তুলসী পাতা? এক একজন খু/নি।

আপনি ভাবছেন- আপনি ঘরে বসে বসে আছেন আর ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে- ত্যালতেলীয়ে জান্নাতে যাবেন? খুঁজে দেখেন আপনার সন্তান, ভাই, বোন, আত্মীয় এমনকি আপনি আমি খু/ন করে এসে মাংস দিয়ে ভাত খাচ্ছি আরাম করে।

জানেন আমরা এখনো বসে আছি এই বিশ্বাসে- যে আমি তো ভালো, আমার স্বামী, সন্তান, আত্মীয়-বন্ধু তারা তো নিষ্পাপ- খু/ন/চুরি/ডাকাতি/অপহরণ/ ধ/র্ষ/ণ/ মূর্তি ভাঙ্গার সাথে জড়িত না। 

আমার-আপনার বাড়ির চারপাশের নোংরা আবর্জনা যেমন আমার আর আপনার। আপনার-আমার চারপাশের সকল অবক্ষয় আর অপরাধের ভাগিধার সমানভাবে আপনি এবং আমিও। 

এই সমাজ আর এই দেশ যদি রসাতলে যায়- তবে আপনি কিন্তু আপনার ছাঁদেও নিরাপদে থাকবেন না। 

এখনি সময় নেমে পরা, প্রতিরোধ আর প্রতিবাদের সকল অন্যায়ের। শুধু যদি ১ জন ২১ জন কিংবা ৩০০ জনের দিকে চেয়ে বসে থাকি- তাহলে যুগযুগ ধরে শুধু শোষিত আর নির্যাতিত হবোই। 

মনে রাখবেন- 

আমাদের সরকার/রাষ্ট্রও আমাদেরই প্রতিচ্ছবি! 

কেস স্টাডি- অ আ ক খ

কেন লিখবো?
 
কাকে বলে (সংজ্ঞা)?


এমন একটি অধ্যয়ন (গবেষণা/ সমীক্ষা) যা ফলাফলের পিছনের গল্পকে অতি সূক্ষভাবে বিশ্লেষণ করে, সমন্বয় করে উপস্থাপন করে। এটি বিশ্লেষনের এমন একটি মাধ্যম যার মাধ্যমে প্রকল্পের সফলতা গুলোকে তুলে ধরা সম্ভব হয়। কখনো কখনো এটির মাধ্যমে কারো কোন একটি নির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জ বা সমস্যায় কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। কেস স্টাডি কোন সমস্যার বর্ণনা হতে পারে যা সমাধান করা প্রয়োজন কিংবা কোন সফলতার ঘটনাও হতে পারে যা সবার কাছে প্রচার করা দরকার। কেস স্টাডি হচ্ছে একটি গুনগত গবেষণা পদ্ধতি।



কোন বিষয়ের কেস স্টাডি লিখবো?
·       
কোন বিশেষ একটি ঘটনা বর্নণা করার জন্য উপযুক্ত (perfect) এবং প্রতিনিধিত্ব মূলক (representative);
·       
নির্দিষ্ট বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টির পর্যাপ্ত উপাদান রয়েছে;
·       
খুব অল্প সময়ে পাঠককে আকৃষ্ট করতে পারবে এমন বিষয়;
·       
কোন একটি ঘটনা বা বিষয়ের সহজ, সাবলীল এবং কার্যকরী চিত্র (প্রতিকৃতি) তুলে ধরতে পারবে;


যখন কেস স্টাডি অত্যাবশ্যকীয়
·       
যখন একটি অনন্য (unique) এবং আগ্রহোদ্দীপক (Interestingগল্প বলার দরকার পড়ে;
·       
যখন একটি গল্প কাংখিত ফলাফলের কাছাকাছি পৌঁছাতে বা প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম হবে;
·       
যখন এটি কোন প্রোগ্রাম কি ঘটেছে, কেন ঘটেছে এই সমস্ত বিষয়ের থেকে আরও অনেক বেশি কিছু (সম্পূর্ণ গল্প) বর্ণনা করতে পারবে;

কেস স্টাডি লেখার ধাপ সমূহ
ক্রম
কাজ
মন্তব্য
1.     
 
কোন ব্যক্তি, দল বা বিষয় নির্বাচন করুন যার উপর আপনি কেসস্টাডি লিখতে চান। সাধারণত আপনি তখনই একটি কেসস্টাডি লিখতে চাইবেন, যখন আপনি একটি কেসস্টাডির মূল বিষয়বস্তু ইতোমধ্যে চিহ্নিত করেছেন।

এ ক্ষেত্রে আপনার কর্মএলাকার বিভিন্ন কার্যক্রম, প্রতিবেদন এবং ফলাফল এর উপর ভিত্তি করে কেস স্টাডির বিষয় নির্বাচন করুন।
2.    
 
কেস সম্পর্কিত গবেষণা ও তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করুন। প্রশ্ন বা আলোচনার বিষয়বস্তু তৈরি করুন। এর যথার্থতা যাচাই করুন এবং সে অনুযায়ী কাজ শুরু করুন।

অন্যান্যদের সহায়তায় একটি চেকলিস্ট তৈরি করুন। তার সহযোগিতা নিন। অন্যান্য উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন। যে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ
3.    
 
যখন প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শেষ হবে তখন সকল তথ্য সংকলন করুন এবং কেসস্টাডি লেখা শুরু করুন।

ভেবে দেখুন এ কাজের জন্য আপনার দলের সেরা সহকর্মী কে হতে পারে?
4.     
 
 আপনার কেসের একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম দিন
ঘটনার পটভূমি লিখুন
কেসের মূল অংশে বিষয়টির অনন্যতা বা পরিবর্তনের তথ্য সন্নিবেশিত করুন এবং ঘটনার সত্যতা ফুটিয়ে তুলুন
কেসের উপসংহার লিখুন
আপনার লেখার ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক ও উর্দ্ধতন ব্যবস্থাপকের সাথে আলোচনা করুন। আপনার বিষয়টি নিয়ে অনেকের সাথে আলোচনা করার প্রয়োজন আছে।
5.    
 
প্রথম খসড়া শেষ হয়ে যাওয়ার পরে এটি বার বার পড়–ন এবং সংগৃহিত তথ্যের গ্রহনযোগ্যতা (বৈধতা যাচাই করুন)। খসড়াটি পঠকের সহজে বোঝার জন্য প্রয়োজনে আবার লিখুন। যদি সম্ভব হয় সহকর্মীদের পড়তে দিন এবং তাদের মতামত গ্রহন করুন।
কেস স্টাডি এমন হতে হবে যেন এর মধ্য দিয়ে সমস্যাগুলো ফুটে উঠে অথবা পরিবর্তন বোঝা।
কিভাবে লিখবো?
ষড় ‘ক’ অনুসরণ করা। যথা- ১. কী? ২.কে? ৩.কোথায়? ৪. কখন? ৫. কেন? বিশেষ গুরুত্ব দিন- কীভাবে?

যে বিষয়গুলো পরিহার করতে হবে?
·       
আমি, তুমি, আমরা, তোমরা শব্দ না লিখে সে বা তিনি দিয়ে লিখুন;
·       
নিজস্ব কোন মন্তব্য বা পরামর্শ লেখা যাবে না;
·       
কোন বিশেষণ  (যেমন- খুব ভাল, আকর্ষনীয়, গরীব, ধনী, অসহায় প্রভৃতি) শব্দ লেখা যাবে না;

সংকলনে- বাহাউদ্দীন বাহার

পলক মুচ্ছল একজন দেবীর কথা

কাল থেকে পলক মুচ্ছল শব্দটি মাথার ভিতর থেকে যাচ্ছেই না। একটা ঘোরের মধ্যেই
আছি। কিভাবে সম্ভব? বয়স মাত্র ২৪। কিন্তু হাজার বছর বেঁচেছেন এর মধ্যে। কিংবা বলা
যায় হাজার বার জন্ম নিয়েছেন হাজার খানিক জীবন বাঁচিয়ে।
কিশোরী পলক মুচ্ছাল 

৮ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখ পর্যন্ত তিনি গান গেয়ে অর্থ সংগ্রহ করে বাঁচিয়েছে ১৩৩৩
টি শিশুকে। যাদের সকলেই হার্ট এর অসুখে ভুগতেছিল। এদের সবাইকে অপারেশন এর মাধ্যমে
সুস্থ্য করা সম্ভব হয়েছে। ভারতের প্রায় সকল শহর সহ পৃথিবীর অনেকগুলো দেশে মঞ্চে গান
পরিবেশন করে অর্থ সংগ্রহ করেছে। সেই অর্থ দিয়ে বাঁচিয়েছে এবং বাঁচাচ্ছে হৃদরোগে
আক্রান্ত শিশুদের। এই বিশেষ অবদানের জন্য ইতোমধ্যেই গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস
এবং লিমকা বিশ্ব রেকর্ড এ তার নাম উঠেছে এই অনবদ্য এবং অনন্য কাজের স্বীকৃতি
স্বরূপ। এছাড়াও ভারতীয় নানা পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছে সে।  
একবার চিন্তা করুন যখন আপনার আমার বয়স মাত্র ১১ বছর। তখন আমরা কি করতাম? নাওয়া
খাওয়া ভুলে গিয়ে খেলতাম আর খেলতাম। আর এই মেয়েটি তখন ১০০ এর বেশি হৃদরোগে আক্রান্ত
বাচ্চাকে অপারেশন এর মাধ্যমে সুস্থ্য করে তুলছে। শুধু তাই নয় অপারেশন এর সময় সে
অপারেশন থিয়েটারের রোগির পাশে থেকে প্রার্থনা করতো। ডাক্তাররা তাকে অপারেশন
থিয়েটারে প্রবেশ করার অনুমতিই দিতেন না- পাশাপাশি ঐ ছোট্ট মেয়েটির জন্য ছোট্ট
অপারেশন অ্যাপ্রোনও রাখতেন। এই কাজের বিনিময়ে সে ঐ পরিবার এর কাছ থেকে ১ টি করে
পুতুল ছাড়া আর কিছুই নিতো না। একবার ভাবুন তো ঐ পরিবার গুলোর কাছে এই ছোট্ট মেয়েটি
কে? দেবী ছাড়া কি! সৃষ্টিকর্তা তাকে পাঠিয়েছেন বুঝি এই কাজের জন্য। তাইতো
শিল্প-সংগীত এর ছোঁয়াও নেই এমন পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেও নিজের কণ্ঠ দিয়ে বাঁচাচ্ছেন
হাজারো দরিদ্র হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের। সে একজন কন্ঠ দেবী- স্বরস্বতী!     
নাম তার পলক মুচ্ছল। জন্মেছেন ভারতের মধ্য প্রদেশ এর ইন্দোর শহরে একটি
মাড়োয়ারি পরিবারে। চাকুরীজীবী বাবা আর গৃহিণী মা বাবার মধ্যবিত্ত পরিবারে ১৯৯২
সালের ৩০ মার্চ মাসে প্রথম সন্তান হিসেবে জন্ম গ্রহণ করেন পলক মুচ্ছল। একটি ছোট
ভাইও রয়েছে। পরিচয় তার বলিউডের প্লেব্যাক সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে। যদিও তার পরিবারের
কারোর সাথেই সঙ্গীতের কোন যোগাযোগ নেই। মেয়েটির 
বয়স যখন আড়াই বছর- হঠাৎ একদিন পারিবারিক একটি অনুষ্ঠানে সবাই যখন কিছু না
কিছু পরিবেশন করছে।তখন মেয়েটি তার মায়ের কাছে মিনতি করলো কিছু পরিবেশন করবো বলে।
মা ভাবল মেয়েটি কোন ছড়া বা কবিতা বলবে। কিন্তু মঞ্চে উঠে মেয়েটি গান পরিবেশন করলো।
মা তখন থেকেই সিদ্ধান্ত নিলেন তাকে গান শেখাবেন। মেয়েটির বয়স যখন চার বছর তখন সে
আনন্দ-কল্যাণজি লিটল স্টার নামের সংগঠনের সদস্য হলো।
অপারেশনে সুস্থ্য হওয়া একজন শিশুর সাথে হাসপাতালে 

১৯৯৯ সাল মেয়েটির বয়স তখন সাত বছর। তখন ভারতে শুরু হল কারগিল যুদ্ধ। মেয়েটির
মা মেয়েটিকে পত্রিকা থেকে যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং সৈনিকদের দুর্দশার কথা পড়ে শোনাতেন।
মেয়েটির কোমল হৃদয় কেঁদে উঠলো। ভাবল শুধু ঘরে বসে না থেকে তার কিছু করার রয়েছে।
একটি দানের বক্স নিয়ে দোকানে দোকনে গিয়ে বলল, “আমি আপনাদের একটি গান শোনাবো।
বিনিময়ে আপনার যা খুশি কিছু এই বক্সে দান করবেন।’’ মেয়েটি গান গেয়ে গেয়ে সেই সময়ে ২৫
হাজার ভারতীয় মুদ্রা সংগ্রহ করলেন এবং সুনির্দিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে সেটি জমা দিলেন।
এই খবরটি স্থানীয় মিডিয়ায় ব্যাপক সাড়া ফেলে। মেয়েটি পায় সামনে চলার এক অনুপ্রেরণা।
একই বছর ভারতের অঙ্গরাজ্য ওড়িশ্যায় সাইক্লোনে ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্যের জন্যও গান
গেয়ে অর্থ সংগ্রহ করে। এগুলো হল মেয়েটির শুরুর গল্প। পাশাপাশি মেয়েটি প্রায় দেখতো
তার বয়সী ছেলে মেয়েরা নিজের পড়নের পোশাক দিয়ে ট্রেনের বগি, গাড়ি প্রভৃতি ধোয়া-মোছা
করে। তখন তার মনে ভাবনার উদয় হয়েছে যে, সে তার কণ্ঠ দিয়ে মানুষের সাহায্য করবে। সে
তার বাবা-মাকে তার এই ইচ্ছার কথা জানালে তারা স্বানন্দে গ্রহণ করে। কাকতলিয়ভাবে
সেই সময়কালে ইন্দোরের একটি স্কুলের একজন শিক্ষক তার স্কুলের লোকেশ নামের একজন
হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসার জন্য পলক এর পরিবারের কাছে সাহায্যের জন্য আসে।
তখন মেয়েটি লোকেশের জন্য একটি ভ্রাম্যমাণ মঞ্চ করে সেখানে গান গেয়ে অর্থ সংগ্রহ শুরু
করে। ২০০০ সালের মার্চ মাসে বেশ অনেক গুলো মঞ্চ পরিবেশনার পর ভারতীয় মুদ্রায় ৫১
হাজার রুপি সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। মেয়েটির এই কাজ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত
হলে কারডিওলজিস্ট দেব প্রসাদ শেটি লোকেশের বিনামুল্যে অপারেশন করেন। পলক এবং তার
পরিবার চিন্তায় পড়ে গেল এই টাকা কি করবে? তারা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলেন যে, যদি
কোন শিশু হৃদরোগে আক্রান্ত থাকে তাহলে যেন অতিসত্তর যোগাযোগ করে।  পরের দিন ৩৩ জন শিশুর পরিবার যোগাযোগ করে- যাদের
প্রত্যেকের হৃদরোগের অপারেশন করা লাগবে। পলক এবং তার পরিবার খুবই চিন্তায় পড়ে যান।
এতো শিশু হৃদরোগে আক্রান্ত।
শিশুদের পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া পুতুলের সাথে পলক 
তারা এই সমস্ত শিশুদের অপারেশন করার জন্য ঐ বছরই একাধিক মঞ্চ পরিবেশনা করে এবং
প্রায় ২ লক্ষ ২৫ হাজার ভারতীয় মুদ্রা সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। এই টাকা দিয়ে ৩৩ জনের
তো সম্ভব হয় নি। কিন্তু ৫ জন শিশুর অপারেশন সম্ভব হয়। শুরু হয় পলক মুচ্ছলের
শিশুদের বাঁচানোর এক অনন্য অভিযানের কথা।
পরবর্তী বছর ২০১১ সাল থেকে সারা ভারতে মঞ্চে গান পরিবেশনের মাধ্যমে অর্থ
সংগ্রহ করে “পলক মুচ্ছল হার্ট ফাউন্ডেশনের” মাধ্যমে শিশুদের সুস্থ্য করে তুলছেন।
উল্লেখ্য, তাদের এই মঞ্চ পরিবেশনের নাম ‘দিল সে দিল তাক’। বাংলায় হৃদয় থেকে হৃদয়ে।
আর ইংরেজীতে
`Save Little Heart’. মঞ্চে পলক মুচ্ছলের সাথে তার ছোট ভাই পলাশ মুচ্ছলও
পরিবেশন করে। একটি মঞ্চ পরিবেশনায় পলক গড়ে প্রায় ৪০ টি গান পরিবেশন করে। কিছু তার
নিজের গান। আর কিছু সিনেমার জনপ্রিয় গান। পলক মুচ্ছল প্রায় ১৭টি ভাষায় গান গাইতে
পারে। বর্তমানে সে বলিউড সিনেমার জনপ্রিয় একজন প্লেব্যাক সঙ্গীত শিল্পী।
মঞ্চে গান পরিবেশন করছেন পলক মুচ্ছাল

পলক গান গেয়ে যতো টাকা উপার্জন করে তার সবটুকুই সে তার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে
দরিদ্র শিশুদের চিকিৎসার কাজে ব্যয় করে। আগে যেখানে একটি শিশুর অপারেশনের জন্য
একাধিক মঞ্চ পরিবেশনা করতে হতো। বর্তমানে এখন ১ টি মঞ্চ পরিবেশনা থেকে ৭-৮টি শিশুর
অপারেশন করা সম্ভব হয়। ব্যস্ততার কারণে এখন সবগুলো অপারেশনের সময় শিশুটির পাশে না
থাকতে পারলেও- প্রতিটি অপারেশনের সময় সে প্রার্থনায় বসে প্রার্থনা করে।
ভাবতে অবাক লাগে যে বয়সে একটি মেয়ের পুতুল খেলে সময় পার করার কথা- তখন পলক
শিশুদেরকে সুস্থ্য করে তুলে সে পরিবারের কাছ থেকে একটি করে পুতুল উপহার হিসেবে
গ্রহণ করে। তাকে তার শৈশব কাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে বলে, “ঠিক আছে, যদিও আমি আমার
শৈশব হারিয়েছি। বন্ধুদের সাথে খেলার চেয়ে একটি জীবন বাঁচান বেশি গুরুত্বপূর্ণ।“     
পলক মুচ্ছলকে আগে থেকে সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে জানলেও তার এই অনন্য কাজ সম্পর্কে
প্রথম জানতে পারি দুইদিন আগে। তারপর থেকে ঘোরের মধ্যে আছি। কিভাবে সম্ভব- একজন ৭
বছরের শিশুর মধ্যে এই বোধ জাগ্রত হওয়া? কাল যখন আমি আমার স্ত্রীর সাথে এই গল্প
শুনিয়ে জিজ্ঞেস করলাম- বলতো ঐ পরিবার গুলোর কাছে পলক মুচ্ছল কে? সে ছলছল চোখ বলল,
“একজন দেবী”।

হে দেবী! তুমি বেঁচে থাকো হাজারো বছর। বেঁচে থাকুক তোমার কণ্ঠ। আরা বেঁচে
থাকুক আরো লক্ষাধিক প্রাণ তোমার কন্ঠের বিনিময়ে। 

**লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয় বারসিকনিউজডটকম