ইউথোনেশিয়া

আমি মরে যেতে চাই কোন এক বিষণ্ণ বিকেলে,
আমি মরে যেতে চাই এক্ষুনি- এই আকালে।
মরে যেতে চাই কোন এক নির্জন দুপুরে
ছায়া ঘেরা, গভীর অতল শান বাঁধানো পুকুরে।
মরে যেতে চাই – কেউ জানবে না-
অন্ত্যুস্টিক্রিয়াহীন- কেউ কাঁদবে না।
কোন বিরাম চিহ্ন নয়- নয় কোন উত্তরাধিকার-
নেবো না কিছুই- থাকবে না জমা-খরচ – হবে না পারাপার।
সকল বোঝা, সকল দায়ভার নামিয়ে দেবো তৎখনাৎ-
মরে যেতে চাই হাসতে- খেলতে-চলতে হঠাৎ।
ভাড়া কুঠির, মানিকগঞ্জ, মার্চ ২০, ২০২০

উড়নচণ্ডী

তুমি এমন অন্ধের মতো ভালোবাসো বলেই
আমি এমনই উড়নচণ্ডী স্বভাবে
ঘর দোর ভুলে হয়ে যাই সন্ন্যাসী তোমার প্রেমে
এ এক অন্য দ্বান্দ্বিকতায় ভুগি নিত্য আমি
তোমাকে ভালোবেসে হয়ে যেতে চাই বন্য
পরিচিতির মাঝে অপরিচয় আমি এক অন্য।।
এই আমাকে আমিই তো চিনি না
প্রতিদিন প্রেমে পড়ি, নতুন ভোরে নতুন আমি
দিনের প্রতিটি প্রহরের মতো বদলাই প্রতিটি ক্ষণে
আমি তাই আমাকেই সঁপে দিয়েছি সময়ের হাতে
সময়ই আমাকে নিয়ে যাবে তোমার কাছে
জীর্ণ,শীর্ণ, শূন্য হাতে মুসাফির-মিসকিন বেশে
তুমিই আমার মরূদ্যান – মিটাও তৃষ্ণা আর ক্লান্তি
হাজারো ক্রোশ পাড়ি দেয়া এক পথভ্রষ্ট যাযাবর।।
তোমাকে খুঁজতে গিয়ে নিজেই হারিয়ে গেছি
মরুভূমির মরীচিকায়
আলোকবর্তিকা কখন যে আলেয়া হয়ে গেছে
বুঝতে বুঝতে পার হয়ে গেছে এক আলোকবর্ষ
তবুও যেন পথ ভুলে আছি সেই আগের অবস্থানে
তোমার প্রত্যাশায়- যেমনটা রেখে গিয়েছিলে
এ যেন থমকে যাওয়া এ পৃথিবী -মিরাজের রাত
তোমার দিদারে পাড়ি দেয়া- সাতাশ বছর।।
বান্দরবান, মার্চ ১৩, ২০২২

অহর্নিশ

তোমার রাগে অনুরাগে
বাঁচি আমি অহর্নিশ
আমার অস্তিত্ব তোমার
অভিমানে অনুযোগে
আমি তো মিয়িয়ে যাবো
তোমার অবহেলায়
তোমার অস্থিরতায়
সকল অহংকার জমানো
মনের সিন্ধুকে বদ্ধ
তোমার স্মৃতিকে জড়িয়ে
ভালোবসি তোমায়
দিনশেষে সত্য
এটুকুই জেনো অবশেষ।।
 আজংটক, সাউথ সুদান, জুন ১, ২০২৩

অঽং

এ অস্তিত্ব, এ অঽং
মিশে যাবে মৃত্যুতে-
তবে দেরি কিসে?
মিশে যাক হেথা
এই বেলায়, ঝুম বৃষ্টিতে
ধুয়ে যাক সব পাপ
পলি মাটি হয়ে
ফলাক ফসল
কৃষকের পঙকিল হাতে।
কক্সবাজার,  জুন ১৭, ২০২২

আবোল তাবোল

এই পৃথিবী অনেক বড়
ইচ্ছে মতোন সাজতে পারো
সাজার সমান মিলবে সাজা
এক ছিলেম মিলবে গাঁজা?
সুখটানে যাবো ভুলে কষ্ট শত
রক্ত জমাট বুকের কাঁপন
থমকে গেলেই সমাপ্তি হায়
কিসের হিসাব গোলমেলে সব।
রবের তরে সিজদাহ দিলেই
কবিতা সব উৎসর্গ তবে
খেরোখাতায় হিজিবিজি
আবোল তাবোল লিখছে কবি।
জুন ১৯, ২০২২

স্বপ্ন বেঁচো

তোমরা যারা স্বপ্ন বেঁচো
হাজার ঘরে, বাজার দরে
বলতে পারো কেমন তরো ভাও?
বুকের ক্ষত লুকিয়ে রেখে
আয়েশ করে মধু মাসে
আম-মুড়ি মাখিয়ে খাও?
কক্সবাজার, জুন ২৫, ২০২৩

মৃত্যু আলিঙ্গন

মৃত্যু আলিঙ্গনে জন্ম আমার এই পৃথিবীর তরে

মৃত্যু গুনেই পার করিলাম জন্ম সমান তালে

অস্থিরতায় সাঙ্গ হলো ফুলসজ্জার রাত

সময়গুলো অসময়েই শেষ রইলো পরে বাত

পথ ফুরালো, রথ ফুরালো ছাড়লো রাহী হাত

মরবো বলেই প্রেমের গরল পান করিবার সাধ।।

 

হেলথ এন্ড হোপ, ঢাকা, জুন ২৮, ২০২২

ডেথ নোট

এই ছোট্ট জীবনে কষ্ট পুষে রাখার কোন মানে নেই
সব কিছুই উড়িয়ে দাও বাতাসে
মিশে যাক আকাশে, মেঘে, জোছনায়
জোছনারা যুগ থেকে যুগেই শুধুই ফাঁকিই দেয়
ভালোবাসার আড়ালে জড়ালে মরেছো স্বেচ্ছায়
এ যেন নিজের মৃত্যু বয়ান লেখা নিজের হাতে
পাতে পড়ে থাকা দুটো কাঁচা লঙ্কা আর আধা পেঁয়াজ
মুখে বয়ে বেড়ানো তীব্র গন্ধ আর সাথে তৃপ্তির ঢেকুর।।
কুকুর গুলোই শুধু পাশেই থাকে যতো করুক ঘেউঘেউ
ময়না-শালিক উড়ে যায় যতোই শোনাক মিষ্টি বাণী
বীণায় সুর তুলে ভুলে যাওয়া শোক মদিরার পেয়ালায়
আমি কি আর আমি আছি?
কবেই মিশে গেছি তোমাতে অবলীলায়।।
অবেলায় তাই আর আমার যাওয়া হলো না
নাওয়া, খাওয়াও রইলো পড়ে
কবিতায় লিখে রাখা কান্নার আঁচড়
বুকের গভীরতর গভীরে
পারলে ক্ষমা করে দিও এ কবিরে!
জুন ২৮, ২০২২

ভণ্ডামি

তোমরা শালা স্তুতি গাও এখনো প্রথাকে, আমলাকে-
আমরা কি তবে যাচ্ছে তাই খেটে মরি কামলাকে-
নাকি ভাবছো তারাই তোমার লাগবে কাজে-
জেনো পাড়ার কুকুরটা ছাড়া আর সব বাজে-
তুমি যারে তেল মারো- সে মারে তার চেয়ে বড় কারো-
ভেবো না এই জীবনে গন্তব্য একটাই; রাস্তা আছে হাজারো।
সবকিছু ভাই আপেক্ষিক – দাবার চালের গুটি
কখন পাশা পালটে যাবে বুঝবে নিজেই।
যে ছেলেটা আজ কৃষক, দোকানদার কিংবা শিক্ষক প্রাইমারির
ভাবছো মেয়েটার বৃথাই জীবনটা স্নাতকোত্তর গৃহিণীর
জীবন শেষে হাসবে কে আর কাঁদবে কে?
হিসাব কষে বলতে পারবে কে?
যা কাজে লাগে না তার বিরোধিতা করে- তাকেই করো পূজা
ছি! ধিক্কার তোমায়- কথা কাজে মিল নেই- নোংরায় মাথা গোঁজা।
প্রশংসা করো নিজেকে, যার মাথায় নেই তাজ।
রাজাই সে তার জীবনের- নাইবা থাকুক রাজ।

প্রিয়ম-০৬

ওর জন্য বেঁচে থাকা
ওর জন্যই সব।
ওর জন্য সন্ন্যাসী আমি
হয়েছি বৈষ্ণব।
ক্লান্ত আমি হই না এখন
দেখলে অভিমান;
নিমিষেই সব উবে যায়
সাজানো- গোছানো প্ল্যান।
ঢাকা, জুলাই ২৯, ২০১৮