বউকে কইলাম একটার বেশি জুতা কেনা, বেশি বেশি জামা-প্যান্ট কেনা অপচয়।
জবাবে বউ কইলো- তুমি যে বই কিনে জমিয়ে রাখো- সেগুলো কি অপচয় না?
চুপ করেছিলাম, এখনো জবাব খুঁজে পাই নি কি উত্তর দেবো।
কোনটা অপচয় আর কোনটা না সেটা নতুন করে ভাবাচ্ছে-
প্রয়োজনের অতিরিক্ত সবকিছুই কি অপচয় না?
কিংবা যে জিনিসের যথোপযুক্ত ব্যবহার না হয়ে – শুধু শুধু পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে- সবকিছুই কি অপচয় না?
অথবা একটা জিনিস বা উপাদনের ব্যবহারের কি কোন শেষ আছে? তাহলে আমরা যে ব্যবহার করতে পারছি না সেগুলো কি অপচয় না?
বা কি ক্ষতি অপচয় হলেই বা? আমার আছে আমি খাবো কি নষ্ট করবো- তা আমার একেবারই নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়। আমার তো কোন ক্ষতি হচ্ছে না অপচয়ে। তাই আমি কেন ভাববো অপচয় নিয়ে।
আবার আদৌ কি কোন জিনিষ অপচয় হয়? এটা তো প্রকৃতির নিয়ম- আমাদের অনুষ্ঠানে খাবার নষ্ট হয় বলেই ফকির মিসকিন খেতে পারে। আর যা খাওয়ার উপযুক্ত থাকে না- সেগুলো কুকুর, বিড়াল, হাঁস-মুরগি, মাছ- পাখির খাবার হয়। এর পরেও অবশিষ্টাংশ কেঁচো-তেলাপোকাসহ অন্যান্য কীটের খাবার হয়ে- সার হয়ে প্রকৃতিতে মিশে যায়। যদি অপচয় নাই হয় তাহলে এই চক্র চলবে কিভাবে?
আমরা বেশি বেশি পোষাক কিনি বলেই পোষাক শ্রমিকের আয় হয়- জীবন জীবিকা চলে। আবার শীতার্ত এবং দরিদ্র মানুষ পুরনো পোষাক পায়।
তাইলে কি অপচয় ভালো? কিংবা প্রয়োজনের সীমানার শেষ কোথায়? আমার বাবার বছরে ২ টা জামার বেশি লাগে না। আমার তো ১০টাতেও চলে না।
অন্যদিকে আমি হয়তো খাবার নষ্ট করি না। কেউ নষ্ট করলে কষ্ট লাগে, রাগ হয়। কিন্ত সেই আমি হয়তো বউ কিনে না পড়ে সাজিয়ে রাখি।
তবে অপচয় নিয়ে আমি ভাবি কারণ – এই পৃথিবীর সম্পদ সীমিত। আপনার-আমার হয়তো টাকা আছে- চাইলেই এক প্লেট ভাত নষ্ট করতেই পারি, বা একটা জামা বেশি কিনে আলমারিতে সাজিয়ে রাখতেই পারি। কিন্তু জানি কি এই এক প্লেট ভাত বা একটা জামা তৈরি করতে কতো লিটার করে মিঠা পানি খরচ হয়েছে? আর মিঠা পানি এতোটাই সীমিত যে- এটা নিয়ে কষ্ট আমি জন্ম থেকেই দেখে আসছি। তাই চাইলে আমার প্রকৃতির সীমিত সম্পদ অপচয় করে নষ্ট/ধ্বংস করার অধিকার নেই।
না হলে একদিন হয়তে ভাত কিংবা পোষাক জুটবে কিন্তু তৃষ্ণা মেটানো পানি জুটবে না। তখন তো আর ভাত ও পোষাক পান করে তৃষ্ণা মিটবে না।
১২/০৬/২০২১
শিকদার পাড়া, কক্সবাজার