যাইহোক, দুজনে সকালের খাবারের জন্য রুটি আর ডাল-ভাজি অর্ডার দিল। আমাদের অর্ডার আগে আসতে দেরি হচ্ছে। আমি বসে থেকে আশে পাশে দেখছিলাম (এটা আমার একটা অভ্যাস-খারাপ কি ভাল জানি না। সব কিছু-মানুষের খাওয়া, কথা বলা কিংবা কাজ করা প্রভৃতি।) ইতমধ্যে, একজন পুরুষ সম্ভবত আইসিডিডিআর’বি- এর স্টাফ (আইডি কার্ডের ফিতা দেখে তাই মনে হোল) এসে সেই নারী-পুরুষের টেবিলে বসল। নতুন আগত ব্যক্তি এই ক্যান্টিনের নিয়মিত কাস্টমার। উনি ওনার প্রতিদিনের স্বাভাবিক আচরণে কোন দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে নাস্তা করতে লাগলেন।
এই পরিস্থিতিতে অস্বস্তিতে পড়লেন নারীটি। পুরুষটি ফোনে কথা বলতে বলতে খাইতে লাগলেন আর নারীটি কি করবে? না করবে? পুরুষ টি খেতে লাগলেন নির্দ্বিধায়- আর নারীটি অনেক ভেবে চিন্তে ধীরে ধীরে রুটির টুকরো ছিড়ে দেয়ালের দিকে মুখ ফিরে নেকাব তুলে আস্তে আস্তে মুখে দিলেন। রুটি ডাল ছাড়া। একটু প্ররে পুরুষটি কে তার ডালের বাটিটাও এগিয়ে দিলেন। নারীটি দুটি তন্দুর রুটি কোন কিছু ছাড়াই শুকনো খেয়ে ফেললেন।
কি এমন বিশ্বাস যে তাকে এই ধরনের আচরণে বাধ্য করলো। জীবন ধারনের জন্য খাওয়ার চেয়ে নেকাব রক্ষা করা কি এতই জরুরী। তিনি একান্ত বাধ্য না হলে নিশ্চিত এই পুরুষ সমাগত হোটেলে আসতেন না। কিংবা আমরা পুরুষরা কিভাবে নির্বিচার ভাবে নিজেদের উদার পূর্তিতে ব্যস্ত।
এই ঘটনা আমার দেখা এই প্রথম না।এবং শুধু মধ্যবয়সী কিংবা পৌঢ় নয়; তরুণ এবং নতুন মেয়েদের ক্ষেত্রেও (যারা শহুরে জীবনের এবং তথাকথিত ‘আধুনিক’ শিক্ষায় শিক্ষিত)।
অনেক আগে যখন রোকেয়া সমগ্র পড়েছিলাম। এখন ঘটনা টা ঠিক হুবহু মনে নাই। কিন্তু যতদূর মনে আছে উনি ট্রেনে ভ্রমণ করছিলেন। একজন পর্দায় আবৃত নারী বিপদে পড়েছেন। কিন্তু পর্দা নষ্ট হবে বলে তার সহযাত্রী এবং বিপদাক্রান্ত নারী নিজেও কাউকে সাহায্য করতে দিচ্ছেন না।
বেগম রোকেয়ার যুগ এখন আর নাই। কিংবা আমরা পুরুষরা আমাদের সুখ- সুবিধা গুলো দেখছি। কিন্তু আমাদের আর একটি অংশকে পর্দার নামে বাইরে বের করে মানসিক অত্যাচার করছি কি না? নিজের বিবেক বারবার সেই প্রশ্ন করছে আমাকে।