‘কৃষি’ কেন গুরুত্বপূর্ণ

বারসিক এর সাথে আমার যাত্রা ২০১১ সাল থেকে। প্রথম বার ফেলোশিপ এর মাধ্যমে দ্বিতীয়বার গবেষণা সহকারী হিসেবে ২০১২ সালে এবং সব শেষে ২০১৪ সালে কর্মী হিসেবে। প্রতিবার যখনই জানার চেষ্টা করেছি বারসিক কী নিয়ে কাজ করে। তখন বারবারই সবকিছু ছাঁপিয়ে প্রধান কাজ হিসেবে দেখা দেয় ‘কৃষি’ র নাম। আবার আমি নিজেও যখন অন্য কাউকে বোঝাতে যাই তখন বোঝানোর শেষে সেই ব্যক্তি বলে ওঠেন, ‘‘ও আপনারা কৃষি নিয়ে কাজ করেন”। কিংবা কখনো বোঝানোর কষ্ট না করে বলি কৃষি নিয়ে কাজ করি। কিন্তু, বারবারই মনে হয়েছে, শুধু কৃষি দিয়ে বারসিক কে পূর্ণাঙ্গভাবে প্রতিনিধিত্ব করা হয় কি? এই প্রশ্নের উত্তর অনেক দিন খুঁজেছি। তবে মন ভরেনি। অবশেষে, গত বছর বারসিক রামেশ্বরপুর রিসোর্স সেন্টার এ আমি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যায়ল এর নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক অভিজিৎ রায় এবং বারসিক এর সমন্বয়কারী সৈয়দ আলী বিশ্বাস এর সাথে একটি আড্ডার আলোচনা থেকে এর আংশিক উত্তর খুজে পাই। সেদিনকার সেই বোঝাপড়া আমি বারসিক পরিবার এবং শুভাকাংখিদের সাথে শেয়ার করতে আগ্রহ প্রকাশ করছি।
বারসিক ২০০১ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রধানত যে কাজটা করে সেটা হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদকে মানুষ কীভাবে জীবনধারনের জন্য চর্চার মধ্য দিয়ে সেটাকে (প্রাকৃতিক সম্পদ) সংরক্ষণ করে। বারসিক তার এই ধারণাগত জায়গাকে স্পষ্ট করার জন্য- মানুষকে বোঝার জন্য যে, মানুষ কীভাবে প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে তার জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করছে। এই ৩ বছর মানুষের সেই সমস্ত কৌশল বোঝার চেষ্টা ও ডকুমেন্টেশন করেছে।
এই ৩ বছরের কাজের মধ্য দিয়ে প্রধানত ৩টি বিষয়কে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। যথা:
১)     প্রাকৃতিক সম্পদ,
২)     চর্চা ও ব্যবহার এবং
৩)     সংরক্ষণ।
এই তিনটি বিষয়ের মধ্যে পারষ্পারিক সম্পর্ক হচ্ছে কৃষি। আর কৃষির সাথে এই সম্পর্ক হচ্ছে জ্ঞান উৎপাদনের সর্ম্পক।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই কৃষি বা কৃষকের জ্ঞান বা সাধারণ জনগণের জ্ঞান কেন বারসিক এর কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ? কেননা আধুনিক জ্ঞান যেখানে কৃষি পন্যের উৎপাদনকে বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি যে কোন সমস্যা সমাধানে আধুনিক জ্ঞান অনেক বেশি কার্যপোযোগি; সেখানে কেন বারসিক এত বেশি সাধারণ মানুষের জ্ঞানকে প্রাধান্য দিচ্ছে?
আমরা সবসময় পড়ে এসেছি, শিখে এসেছি এবং জেনে এসেছি যে, কৃষি হচ্ছে উৎপাদন (প্রোডাকশন) এর বিষয়, বাণিজ্যিক (মার্কেট) বিষয়, কৃষি হচ্ছে লাভ-ক্ষতির বিষয়। পাশপাশি কৃষিকে সমসাময়িক সময়ে সাধারণীকরণ করা হয় খাদ্য নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে।
কিন্তু বারসিক যখন কৃষকের কাছ থেকে ‘কৃষিকে’ বুঝার চেষ্টা করে তখন দেখা যায় কৃষকের কাছে কৃষি শুধুমাত্র উৎপাদনের বিষয় নয়। এটি একজন কৃষকের কাছে সমগ্র জীবনের বিষয়। কৃষি হচ্ছে সামাজিক বন্ধনের ও সামাজিক সংহতির বিষয়। গ্রামীণ জীবনের পারস্পারিক দ্বন্দ্ব সংঘাত ও সংহতির বিষয়। কেননা কৃষির মধ্যে দিয়েই একটি গ্রামের সম্পর্ক তৈরি হয় এবং বিরাজ করে। একই সাথে কৃষি হচ্ছে পরিবেশ এবং প্রতিবেশীয় বিষয়। এটি কৃষকের কাছে মাটি ও বাস্তুসংস্থান এর বিষয়। একইসাথে এটি কৃষকের কাছে বৈচিত্র্যের বিষয়। বৈচিত্র্যকে টিকিয়ে রাখার বিষয়, বৈচিত্র্যের মধ্যকার আন্তঃসম্পর্ককে টিকিয়ে রাখার বিষয়।
কিন্তু কৃষি যখন একজন উন্নয়ন কর্মী/প্রতিনিধি (এজেন্ট) বা একজন গবেষক যখন উপস্থাপন করে তখন সে নিয়ে আসে লাভ-ক্ষতি, কৃষি উপকরণ এবং খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়গুলো। আর সকল উন্নয়ন এজেন্সী কৃষিকে একইভাবে উপস্থাপন করে। কিন্তু একজন কৃষকের কাছে কৃষির বিষয়টি তার জীবনাদর্শনের সাথে সম্পর্কীত। কৃষক তার কৃষিকে কক্ষনোই ওতোটা সরলীকরণ করে দেখে না। একজন কৃষক যখন তার কৃষিকে তার প্রতিবেশ, তার গ্রাম, তার বৈচিত্র্যময় জীবনযাপনের সাথে আন্তঃসম্পর্ক করে ভাবতে পারে; তখন কোনভাবেই এই কৃষি এবং কৃষকের জ্ঞান উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে না রাখার অবকাশ থাকে না। সুতরাং গ্রামে কাজ করার ক্ষেত্রে এই একটি কারণই যথেষ্ট কৃষি এবং কৃষকের জ্ঞানকে গুরুত্ব দেয়ার।
তাই বারসিক যখন বৈচিত্র্য নিয়ে কথা বলে তখন এটি আসলে চলে আসে কৃষকের দৃষ্টিতে দেখা বৈচিত্র্যকে। আর কৃষি হচ্ছে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের টিকে থাকার, বেঁচে থাকার জ্ঞান এবং কৌশল। তাই গ্রামের মানুষের সাথে সর্ম্পক স্থাপনের একটি অন্যতম উপায় হচ্ছে কৃষিকেন্দ্রিক কৃষকের চিন্তা দর্শনকে প্রাধান্য দিয়ে সামাজিক সম্পর্ক, পরিবেশ, সমাজনীতি, অর্থনীতি তথা সমাজ কাঠামোকে বোঝা।
বীজ হচ্ছে কৃষির প্রথম এবং প্রধানতম হাতিয়ার। বীজকে কেন্দ্র করেই কৃষির যতধরনের সমস্যার সূচনা; কৃষির ব্যবসায়িক এবং রাজনৈতিক যাত্রা। বীজ যখন কৃষকের হাত থেকে বাজারের হাতে চলে গেছে তখন বীজ এবং কৃষির সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়গুলো নষ্ট হয়ে যায়। একটি গ্রামের মধ্যে যে সামাজিক সংহতি আছে সেগুলো ভেঙে পড়ে। সংহতির সাথে সাথে মানুষে মানুষে যে ইউনিটি আর থাকে না। কেননা কৃষি ও কৃষকের সম্পর্ক বিনিময়ের সম্পর্ক যা বাজার থেকে আসে না। যদি আসে তবে সেটা পারস্পারিক নির্ভরশীলতার সম্পর্ক নয়, নৈর্ব্যত্তিকভাবে ক্রেতা-ভোক্তার সম্পর্ক। পারস্পারিক নির্ভরশীলতার সম্পর্ক তৈরি হয় পরস্পর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা আর সম্মান প্রকাশের ভেতর দিয়ে।
এই নির্ভরশীলতার সম্পর্ক শুধু মানুষে মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এই নির্ভরশীলতা প্রাকৃতিক উপদানের মধ্যে রয়েছে। রয়েছে পেশার বৈচিত্র্যতার মধ্যেও। যদি কৃষি ভালো না থাকে তাহলে মাছ থাকবে না। আর মাছ যদি না থাকে বাঁশ-বেত শিল্প থাকবে না। এই বাঁশ-বেঁত শিল্প যে সমস্ত উপকরণ বানায় সেগুলো বেশিরভাগই লাগে মাছ ধরা এবং কৃষি ক্ষেত্রে। কৃষির মতো মৎস্যও যদি বাণিজ্যিক হয়ে যায় তাহলে বাঁশ-বেঁত শিল্পও হারিয়ে যাবে। হারিয়ে যাবে কুমার। কারণ কৃষির সাথে মাটির যে সম্পর্ক; বীজের সাথে মাটির যে সম্পর্ক সেটি হারিয়ে গেলে মাটির গুনগত মান নষ্ট হয়ে যাবে।
বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা হচ্ছে কাজের ক্ষেত্র তৈরি না হওয়া। যেহেতু এখানে জনসংখ্যা বেশি সেহেতু এখানে কাজের চাহিদাও বেশি। আর কাজের সংকট তৈরি করতে হবে রাখতে হবে মুক্তবাজার অর্থনীতির ব্যবসায়িক স্বার্থে। প্রতিদিন কৃষি, মৎস্য, বাঁশ-বেঁত শিল্পের মতো অসংখ্য কাজের ক্ষেত্র বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই ক্ষেত্রে মানুষগুলো কী করবে বা তাদের কী ধরনের কাজ সরবরাহ করা হবে। কাজের ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে একটার সাথে আর একটার আন্তঃসম্পর্কের মধ্য দিয়ে। আর যখন এই আন্তঃসম্পর্ক থাকছে না তখন তৈরি হচ্ছে সমস্যা। আমরা তখন হয়ে যাচ্ছি ব্যবসায়ী। আর তখনই বাজার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ অর্ন্তভূক্ত থাকে প্রাকৃতিক সম্পদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে। কিংবা এভাবে বলা যায় সকল জ্ঞানের উৎপত্তি এই প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে। কিন্তু যখন এই প্রাকৃতিক সম্পদ নির্ভর না থেকে সবাই বাজারনির্ভর ব্যবসায়ী হয়ে যাচ্ছি তখন আর নতুন জ্ঞান উৎপাদন হচ্ছে না। আর এই জ্ঞান যখন একটা কমিউনিটি থেকে উৎপাদন হচ্ছে না তখন এই জায়গাটা দখল করছে বাইরে থেকে আগত মানুষ, প্রযুক্তি এবং কোম্পানি।
এর ফলে কৃষক, জেলে এবং বাঁশ-বেত শিল্পীর মধ্যকার যে আন্তঃসম্পর্ক সেটি না থাকলে কোনভাবেই কেউ টিকবে না। শুধু মাছ বাঁচিয়ে জেলেকে রক্ষা করা যাবে না; যদি না ভিন্ন ভিন্ন মাছ না থাকে তাহলে সেই ভিন্ন ভিন্ন মাছ ধরার জন্য ভিন্ন ভিন্ন উপকরণ থাকবে না। ভিন্ন ভিন্ন উপকরণ থাকবে না; যদি না কৃষকের বাঁশ-বেঁত এর জন্য আলাদা জায়গা না থাকে। এই আন্তঃসম্পর্ক ঘুরে ফিরে বারবার আসে শেষ হয় কৃষিতে। তাই সবার আগে এই দেশের নিজস্ব কৃষি ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে হবে।
এই ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে হলে এই প্রাকৃতিক সম্পদ নির্ভর বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যকার যে আন্তঃসম্পর্ক, আন্তঃনির্ভরশীলতা এবং আন্তঃবিনিময়কে বজায় রাখতে হবে। তাই কৃষিকে রক্ষা করতে হলে শুধু কৃষি বা কৃষক দিয়ে হবে না। কৃষি বা কৃষকের সাথে সাথে জেলেকে রক্ষা করতে হবে। জেলেকে দিয়ে জেলে রক্ষা হবে না যদি কোন মাছ ধরার জন্য কি ধরনের জিনিস দরকার- তা না থাকে। তাই এই ব্যবস্থার জন্য প্রতিটি জায়গাকে শক্তিশালী করতে হবে। একই সাথে এদের মধ্যকার আন্তঃসম্পর্ক এবং আন্তঃনির্ভরশীলতাকে শক্তিশালী করতে হবে। তখনই বারসিক এর বিভিন্ন পেশাভিত্তিক সংগঠনগুলো সামনে চলে আসে। এরই ধারাবাহিকতায় কৃষক সংগঠন, জেলে সংগঠন, বাঁশ-বেঁত সংগঠন, মাটিকেন্দ্রিক জনগোষ্ঠীর সংগঠনসহ অন্যান্য সংগঠন গড়ে উঠেছে।
বারসিক শুরু করেছিল শুধু কৃষি দিয়ে। কিন্তু বর্তমানে কৃষি কিন্তু শুধু কৃষি থাকেনি। বীজ কিন্তু শুধু বীজ থাকেনি। এটি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বশীল যে কোন একটি গ্রামের সমগ্র বিষয়ই অর্ন্তভুক্ত হয়েছে। তাই বারসিক এর কাছে কৃষি কক্ষনোই শুধুমাত্র উৎপাদনের বিষয় না। কৃষি সামাজিক সম্প্রীতির বিষয়। সামাজিক বন্ধনের বিষয়। কৃষি হচ্ছে পরিবেশ এবং প্রতিবেশের বিষয়। কৃষি হচ্ছে প্রাণ বৈচিত্র্যের বিষয়।
তাই বারসিক কৃষিকে কেন্দ্র করে একটি গ্রামের সকল বিষয় নিয়ে কাজ করে থাকে। কৃষি কেন্দ্রিক অন্যান্য কার্যক্রমগুলো শুধুমাত্র উৎপাদনকে নয়; মানুষে মানুষে আন্তঃসম্পর্ক, আন্তঃনির্ভরশীলতাকেই গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

“পুরাতন জিসিন কি ডিম পাড়ে?”- আসুন বেঁচে দিই!

বছরখানিক আগে টেলিভিশন, ইউটিউব, ফেসবুক কিংবা পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপন বেশ চোখে লেগেছিল, কানে বেজেছিল। আর সেটি হল বিক্রয় ডটকমের ‘পুরনো জিনিস কি আর ডিম পাড়ে? ছবি তুলুন, পোস্ট করুণ আর বেচে দিন’। একই সময়ে ভারতীয় টেলিভিশনগুলোতে একই ধরণের বিজ্ঞাপন ‘পুরনো জিনিস কে ধরে না রেখে বেচে দিন।’-OLX.COM এর। সত্যিই তো পুরনো জিনিস কি ডিম পাড়ে? সুতরাং তাকে বেচে দিন?
পুরনো জিনিসের কি ডিম পাড়া ছাড়া আর কোন মূল্য নেই? আপনার বাবার দেয়া জীবনের প্রথম ‘ঘড়ি’; হাতে দিতে পারেন না-ওল্ড ফ্যাশান বলে! কি আর করা বেচে দিন। আপনার বিয়ের প্রথম লাল টুকটুকে ৪০ বছরের পুরনো শাড়ী-কি আর কাজে লাগবে? বেঁচে দিন। আমার বাবার একটি ৩৭ বছরের পুরনো সাইকেল আছে-আমারই চালাতে বেশ কষ্ট হয়। তবু বাবা সাইকেলটা এখনো চালান। সাইকেলটা তার শ্বশুর তার বিয়ের সময় তাকে উপহার দিয়েছিলেন। সাইকেলটা তো আর নতুন সাইকেল দেবে না! বরং মেইনটেনেন্সের জন্য প্রতিনিয়ত খরচ হবে। আমার বাবা কি সেটা বেচে দেবে? বেঁচে থাকতে তো নয়ই।
পুরনো মূল্যবোধ, সংস্কার, ভালোবাসা, বিশ্বাস-আস্থা ধরে রেখে লাভ কি বেচে দিই। ছোট বেলা থেকে দেখে এসেছি, শুনে এসেছি, শিখে এসেছি এবং বেচে এসেছি পুরনো জিনিস। পুরনো ছেড়া-ফাটা, ভাঙ্গাচুরা জিনিস দিয়ে ফেরিওয়ালার কাছ থেকে চকলেট, আইসক্রিম, পাঁপড় ভাজা কিংবা বিনিময়ে মা-চাচীরা নিয়েছে ঘরের প্রয়োজনীয় হাড়ি-পাতিল। এগুলোর কি কোন প্রভাব নেই আমাদের জীবনে? এর বিন্দুমাত্রা রেশ কি নেই আমাদের মগজে?
এগুলো দেখতে-দেখতে, শুনতে-শুনতে আর করতে করতে যখন আমাদের নিজেদের জীবনে কোন পুরাতন, বৃদ্ধ, জরাজীর্ণ ঘরের মানুষকে দেখি-যারা হয়তো আপনার আমার বাবা-মা, দাদা-দাদি কিংবা নানা-নানী যারা সারাদিন ঘরের কোনে বসে থাকে; ডিম পাড়ার জন্য। কিন্তু দিন শেষে কোন ডিমই পারে না। তখন কি বলতে ইচ্ছে করে না-ধুর এই বুড়া গুলো তো ঘরে বসে ডিমও পারে না; বেঁচে দিই বিক্রয় ডট কম কিংবা ওএলএক্স ডট কমের মতো কোন কম্পানি কিংবা ফেরিওয়ালার কাছে। জায়গাও বাঁচল, ঝামেলাও কমলো। সেই ফেরিওয়ালা হয়তো কোন ওল্ড এজড হোম কিংবা বৃদ্ধাশ্রম। কিংবা আমাদের বৃদ্ধ মানুষ বেচার মতো কোন কোম্পানি নেই বলে হয়তো ফেলে রাখি বাড়ির সবচেয়ে অন্ধকার ঘুপচি ঘরটিতে। কোন যত্ন নেই, আদর নেই, খোঁজ খবর নেই। পুরনো মানুষটার পিছনে যে অর্থ আর ওষুধ খরচ হয় সেটাও বুঝি বৃথা অপচয়।
ভাবছেন আমার কথার কোন ভিত্তি নেই। ভেবে দেখুন, আপনার বাসার পুরাতন দৈনিক পত্রিকাগুলো কি করেন ফেলে রাখেন সবচেয়ে অন্ধকারের ঘুপচিতে। তারপর যখন আর জায়গা হয় না তখন বেঁচে দেন কাগজওয়ালার কাছে। বাসার যত পুরাতন অব্যবহার্য, কাজে লাগে না এমন জিনিস আপনি কি বেঁচে দেন না একেবারে নামমাত্র মুল্যে? তাহলে ঠিক সেই একই আচরণ কি করেন না বাড়ির সবচেয়ে পুরাতন সদস্য-যিনি কোন কাজের না, বাসার জায়গার অপচয়। হয়তো সে আপনার আপনজন বলে বেচতে পারছেন না। কিংবা বেচার কোন সুযোগ নেই বলে হয়তো। জানি না যদি কোন দিন সুযোগ তৈরি হয়-তাহলে আমিও হয়তো বেচে দিতে পারি আমার পরিবারের পুরাতন সদস্যকে!
আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে বাসার পুরাতন জিনিস আর পুরাতন/বৃদ্ধ মানুষ কি এক? নিশ্চয় না। কিন্তু এই যে পুরনো জিনিসের প্রতি আমাদের দীর্ঘ দিনের আচরণ, অভিব্যক্তি, ব্যাখ্যা কি কোন প্রভাব ফেলে না আমাদের মানুষের সাথে আচরণ কিংবা দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে? বা আমাদের মনস্তত্ত্বে? যদি আপনার উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয়। তাহলে অবশ্যই সেটা মারাত্মক।
দ্বিতীয় আর একটি প্রশ্ন মাথায় আসতে পারে। এই পুরনো জিনিসগুলো নিয়ে আমরা কি করবো? কোন কাজে লাগে না আবার অনেকখানি জায়গা নষ্ট হয়। বেচে দিলেই তো ভালো। একবারও কি ভেবেছেন আপনার এই পুরাতন, অকাজের জিনিসগুলো যারা নামমাত্র মুল্য দিয়ে কিনে নেয়- তারা কি করে? তারা কি আপনার মতো ফেলে রাখে? কক্ষনো নয়। সেটাকে কাজে লাগায়, ব্যবহার করে। কক্ষনো একটু মেরামত করে কিংবা একবারে রিসাইকেলিং করে ভিন্ন কিছু তৈরি করে ব্যবহার করে। কিন্তু আপনি কি কক্ষনো আপনার পুরাতন জিনিসটাকে রিসাইকেলিং করে ব্যবহার করার কথা ভেবেছেন? কিংবা আপনার সন্তানককে কি শিখিয়েছেন? যদি উত্তর ‘না’ হয় তাহলে-সে কীভাবে শিখবে যে পুরাতন জিনিসেরও মূল্য আছে। পুরাতন জিনিসের যেমন মূল্য আছে তেমনি মূল্য আছে আপনার পরিবারের সবচেয়ে পুরাতন সদস্যেরও। তার অভিজ্ঞতা, জ্ঞান এবং দেখাশুনার অশেষ মূল্য আছে আপনার এবং আপনার পরিবারে।
আপনার পরিবারের সকলেই ব্যস্ত। পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্যকে সময় দেয়ার কেউ নেই। আপনার পরিবারের প্রবীণ সদস্য হতে পারে সবচয়ে কার্যকরী। আপনার বাসায় কাজের লোক আছে কিন্তু আপনার স্কুল পড়ুয়া ছোট সন্তানকে বাসায় রেখে যেতে পারছেন না। শুধু যদি একজন প্রবীণ সদস্য থাকে তাহলে এই জটিল সমস্যার সমাধান নিমিষেই হবে। আপনার ছোট কংক্রিটের বাসাটা সবুজ আর প্রাণে ভরে তুলতে পারেন প্রবীণ সদস্যটি। নাগরিক ব্যস্ততা আর সমস্যায় একবারে বিপর্যস্ত। একটুও শান্তি পাচ্ছেন না। কারোর সাথে শেয়ার করতে পারছেন না। আপনার প্রবীণ অভিজ্ঞ বাবা-মা, দাদা-দাদি কিংবা নানা-নানি অথবা শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সাথে একটু সময় কাটান, মন খুলে গল্প করুন। জানি তিনি হয়তো আপনার সমস্যার সমাধান করে দেবেন না। কিন্তু আমি নিশ্চিত আপনি কিছু অনুপ্রেরণা আর সাহস পাবেন। নতুন আত্মবিশ্বাসে ভরে উঠবেন। হয়ে উঠবেন এক নতুন আপনি।
একটু ভাবুন বাড়ির পুরাতন জিনিসটার যেমন হয়ে উঠতে পারে মূল্যবান। ঠিক তেমনি আপনারা পরিবারের প্রবীণ সদস্যও কম মুল্যবান নয়। আপনিও যেমন বিষয়টা আমল করবেন। তেমন করে শেখান আপনার সন্তানকেও। নতুবা আমি আপনিও হয়ে যাবো প্রবীণ-পুরাতন এক বৃদ্ধ। তখন আপনার আমার সন্তান যেন আমাদেরকে পুরাতন ভেবে বেচে না দেয়-‘ডিম পাড়ি না বলে!’

সহিষ্ণুতা : শৈশবেই শিখতে হবে প্রাণ ও প্রকৃতি থেকে

বর্তমান সময় এক অস্থির সময়। কিংবা সব সময়ই চলমান সময়টা হয়তো অস্থির থাকে। আমরা হয়তো সময়ের সাথে অনেক বেশি গতিশীল হয়ে যাচ্ছি। সাথে সাথে আমাদের আবেগ-অনুভুতিগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে-ধৈর্য্য, ভালোবাসা। হয়ে উঠছি অসহিষ্ণু। হত্যা, নির্যাতন, নৃসংসতা, আত্মহনন, ধর্ষণ আমাদের গতিশীল সমাজের এক অবিচ্ছেদ্য অনুসঙ্গ। আমরা হয়ে পড়ছি সহিংস। এই সহিংসতা শুধু মানুষে মানুষে নয়। ছড়িয়ে পড়ছে-প্রাণ এবং প্রকৃতির প্রতিও। কিংবা হয়তো প্রাণ-প্রকৃতি থেকে মানুষে। যেভাবেই ছড়িয়ে পড়–ক; সেটি ক্ষতিকর মানুষ এবং প্রাণ-প্রকৃতি উভয়ের জন্যই।

প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কেন সহিংস হচ্ছি বা সহিংস হয়ে পড়ছি? কিংবা কিভাবে আমাদের মধ্যে এই আচরণ তৈরি হচ্ছে? মনোবিজ্ঞান কিংবা আচরণ বিজ্ঞান হয়তো এর সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারবে।

এ বিষয়ে আমার নিজের একটি ব্যাখ্যা আছে। ব্যাখ্যাটা আপনি মানতেও পারেন আবার নাও মানতে পারেন। কিন্তু ব্যাখ্যাটা আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয়েছে।
তবে এর আগে আলোচনা করা জরুরি আমরা প্রাণ ও প্রকৃতির প্রতি কী কী ধরনের সহিংসতা করি?
খুব ছোটবেলা থেকে আমার বদঅভ্যাস হচ্ছে গাছ দেখলেই কোন কারণ ছাড়া তার পাতা ছেড়া। আর হাতে যদি লাঠি থাকে তাহলে তো কথাই নেই! লাঠি নিয়ে আমি রাস্তার পাশের ছোট-ছোট গাছগুলোকে মেরে মেরে ন্যাড়া করে ফেলতাম। কিংবা ছোট খেঁজুর বা নারকেল গাছের পাতাকে ধরে মাঝখান দিয়ে ছিড়ে ফেলতাম। আমি শৈশবে প্রায়ই লাল পিপড়া কিংবা বড় কালো পিপড়া (মাজালি) দেখলে এর মাঝখান কেটে দু’টুকরো করতাম, দেখতে চেষ্টা করতাম পিপড়াটা পিছনের অংশ দিয়ে চলতে পারছে কিনা? অথবা আমি প্রায়ই টিকটিকি’র লেজ লাঠি দিয়ে বাড়ি দিয়ে ভেঙে দিতাম। আনন্দ নিয়ে উপভোগ করতাম এবং দেখতে চাইতাম লেজটা কতক্ষণ ছটফট করে। এছাড়া লেজকাটা টিকটিকিটা কীভাবে বেঁচে থাকে তা দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণ করতাম। আমি বলতে গেলে প্রতিদিন শুক্রবারে দলবেঁধে গিরগিটি মেরে সওয়াব অর্জন করার চেষ্টা করতাম! ব্যাঙ ধরে ইনজেকশন দিয়ে পানি পুশ করে দেখতাম ব্যাঙটার ভেতরে কতবেশি পানি ঢুকানো যায় এবং ব্যাংকটা পানিভরা পেটে কতদিন বেঁচে থাকে তা দেখতাম।
ছোটবেলায় আমি খেলার সাথী’র সাথে তুমুল ঝগড়া করতাম! রাতের অন্ধকারে ওর লাগানো ফুল গাছগুলো কেটে ফেলে দিতাম।  আমার তখনকার বিবেচনায় পাশের বাড়ির বুড়াটা (!) বেশ কৃপণ এবং একটা খাট্টাস বলে বন্ধুরা মিলে প্ল্যান করে বুড়ার গাছের নারকেল, খেঁজুর রস কিংবা মুরগি ধরে সাবাড় করতাম। যতটুকু না খাওয়া- তার চেয়ে বেশি নষ্ট করতাম।
ছোটবেলার এই ছোট-খাটো (!) ছেলোমানুষি অপরাধগুলো আমরা সবাই খুব সাধারণভাবে নিই। এই অপরাধগুলোকে অভিভাবকগণ দুষ্টমি হিসেবে বিবেচনা করে একটু বকা-ঝকা করে আমাদের ছেড়ে দিতেন। আমরাও অপরাধ করেও পাড় পেতাম। নতুন আপরাধ করার জন্য প্রস্তুতি নিতাম। আমরা ধরেই নিতাম আমরা যা করেছি সেগুলো অপরাধ নয়; দুষ্টুমি মাত্র! দুষ্টুমি করতে আমাদের ভালো লাগতো। কিন্তু, এই দুষ্টুমি বা ঘটনাগুলোই আমার মতো প্রতিটি মানুষের মনে একটি গভীর রেখাপাত তৈরি করে। যেহেতু এসব ছোটখাট (!) অপরাধকে দুষ্টুমি হিসেবে ভাবতাম তাই আমরা শিখতে থাকি  ‘যে আমার চেয়ে আপাত দূর্বল; তাকে সহজেই ক্ষতি করা যায়। মেরে ফেলা যায়। কিছু না হোক বিরক্ত করা যায়।’ বিড়াল দেখলেই ফুটবলের মতো লাথি দেই, কুকুর দেখলে ঢিল ছুড়ি অকারণে- এগুলো আমরা তো নিয়মিত চর্চাই করতাম।
2-2
এভাবে আস্তে আস্তে এই সহিংসতা উদ্ভিদ এবং প্রাণী থেকে রূপান্তরিত হয় মানুষে। তাই আমরা ধরেই নিই যে, ছোট বোনটার চুল টেনে দেয়াটা অপরাধ নয় কিংবা দূর্বল বন্ধু কিংবা ছোটদেরকে শারীরিক ও মানসিক কষ্ট দেয়া কোন ব্যাপারই না! অন্যদের সাথে অকারণে মারামারি, ঝগড়া এগুলোও হয়ে ওঠে অনুসঙ্গ।
পরবর্তীতে বড় হওয়ার সাথে সাথে এই আচরণগুলো বড় হতে থাকে। বোনের উপর অত্যাচার রূপান্তুরিত হয় বউ কিংবা রাস্তায় হেটে যাওয়া মেয়েটার ক্ষেত্রে- নারী নির্যাতন বা অধুনা ‘ইভটিজিং’। ছোট-খাটো চুরি রূপান্তরিত হয় চাঁদাবাজি কিংবা ছিনতাই এ।
ছোটবেলার এই সহিংস আচরণ আস্তে আস্তে বড় আকারের রূপ নেয়। মানুষ থেকে শুরু করে প্রাণ ও প্রকৃতির দিকে এই সহিংস আচরণ বিস্তার লাভ করে। তাই তো পারিবারিক ঝগড়াকে কেন্দ্র করে বাগানের নতুন লাগানো গাছগুলোকে কেটে ফেলতে আমাদের কষ্ট হয় না, বিবেকে বাঁধে না। কোন প্রতিবেশীর পুকুরের মাছ নিমিষেই বিষ দিয়ে মেরে ফেলতে আমাদের বুকটা কাঁপে না।কিংবা রাতের অন্ধকারে কারও অপরিণত ধান বা কলার বাগান নষ্ট করতে একটু অসস্তিবোধ হয় না আমাদের। অন্যদিকে মিছিল-মিটিং কিংবা রাস্তা অবরোধ করতে হবে- গাছে কেটে খুব সহজেই করা যায়।
খুব আপাত সাধারণ এই ঘটনাগুলো আমাদের সামাজিক মানুষের জীবনে দারুণভাবে প্রভাব পড়ছে। আমরা সভ্য (!), সাংস্কৃতিক (!) মানুষরাই হয়ে পড়ছি সহিংস, হিংস্র। বাড়ি, রাস্তা, অফিস, বাজার- প্রতিনিয়ত আমরা আমাদের অজান্তেই করছি সহিংস আচরণ।
বর্তমান এই সমস্ত সামাজিক ব্যাধি কিংবা আচরণগুলো প্রতিরোধ করতে হলে আমারে শুরু করতে হবে একেবারেই শৈশব থেকেই। পাশাপাশি, মানুষসহ সকল প্রাণ ও প্রকৃতির প্রতি সহনশীল, শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞ আচরণ শেখাতে হবে নতুন প্রজন্মকে। পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণ ও অস্তিত্ব  যে কষ্ট পেতে পারে এই ‘বোধ’ জাগ্রত করতে হবে সকলের মাঝে, বিশেষ করে শিশুদের মাঝে। তবেই সম্ভব সৌহার্দ্যময়, শান্তিপূর্ণ সমাজ এবং পৃথিবী গড়ে তোলা।
ছবি দু’টি  ইন্টারনেট এর উন্মুক্ত উৎস থেকে সংগৃহীত

ইউথোনেশিয়া

আমি মরে যেতে চাই কোন এক বিষণ্ণ বিকেলে,
আমি মরে যেতে চাই এক্ষুনি- এই আকালে।
মরে যেতে চাই কোন এক নির্জন দুপুরে
ছায়া ঘেরা, গভীর অতল শান বাঁধানো পুকুরে।
মরে যেতে চাই – কেউ জানবে না-
অন্ত্যুস্টিক্রিয়াহীন- কেউ কাঁদবে না।
কোন বিরাম চিহ্ন নয়- নয় কোন উত্তরাধিকার-
নেবো না কিছুই- থাকবে না জমা-খরচ – হবে না
পারাপার।
সকল বোঝা, সকল দায়ভার নামিয়ে দেবো তৎখনাৎ-

মরে যেতে চাই হাসতে- খেলতে-চলতে হটাৎ। 

বিক্ষিপ্ত মন

মাথাটা ভোঁ ভোঁ করছে। তারচেয়ে বেশি বিক্ষিপ্ত মনটা- অস্থিরও বলা যায়। কোন কিছুতে মন বসছে না। কোন কিছুতেই না। হারিয়ে যাচ্ছি, কিংবা তলিয়ে যাচ্ছি। সবকিছুর চাপে। হাঁসফাঁস করছে-

আমি আমাকেই চিনতে পারছি না।
খুঁজে ফিরি নিজেকে এক নিজের সাজানো জনারণ্যে।
পাশে সবাই আছে, কিন্তু মনে হচ্ছে আমি একা-  একলা বনবাসে।
সীতাও নেই, নেই লক্ষ্মণ কিংবা গরুড় পাখি-
হনুমান তো কবেই নিজেই রাম বনে গেছে ভক্তির আদিখ্যেতায়।
চারপাশে সবাইকে রাম মনে হয়- আর আমি রাবণ।

খারাপ সম্পর্ক ভাল সম্পর্ক

প্রশ্নঃ একজন
মানুষের সাথে আর একজন মানুষের দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক কেন একটি ছোট কথা বা ঘটনার
মাধ্যমে নষ্ট হয়?
উত্তরঃ প্রত্যেকটি
সম্পর্কের সাথে সাথে সমান্তরাল এবং উলম্বিক ভাবে দুটি বিষয় যুক্ত থাকে। যথাঃ      ক) ভাল ঘটনা/কথা
     খ) খারাপ ঘটনা/কথা।
সম্পর্কের ধরণ এই দুটি বিষয়কে দুই ভাগে চিহ্নিত করে।একটিকে প্রচ্ছন্ন এবং
বিপরীত টিকে প্রকট। ভাল সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভাল ঘটনা/কথাকে প্রকট হিসেবে চিহ্নিত
করে এবং বিপরীতে খারাপ ঘটনা/ কথাকে প্রচ্ছন্ন হিসেবে চিহ্নিত করে।
খারাপ সম্পর্কের ক্ষেত্রে ঠিক উল্টোটা ঘটে থাকে।

কিন্তু দুটি ঘটনার গুরুত্ব কিংবা প্রভাব হয়তো একই। কিন্তু প্রচ্ছন্ন ঘটনা
গুলো জমতে থাকে এবং প্রকট গুলো প্রকাশ পেতে থাকে- হারাতে থাকে (প্রকাশ পেতে পেতে
সেটি বিলীন হয়ে যেতে পারে। মানে আমাদের কাছে সেগুলো স্বাভাবিক হিসেবে উপস্থাপন হয়।)

এইভাবে চলতে চলতে  একটি কথা বা ঘটনা হাজারো
পুঞ্জিভূত খারাপ ঘটনা/ কথা বিগ ব্যাং এর মতো বিস্ফোরিত করে দেয়। ফলশ্রুতিতে
দীর্ঘদিনের ভাল সম্পর্কের ইতি ঘটে একটি খুবই আপাত সাধারণ ঘটনা বা কথার মাধ্যমে।
আবার সব ঘটনা/কথা কিন্তু এই বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম হয় না। কিংবা কখন এই
প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যগুলো বিস্ফোরিত হবে সেটি নির্ধারণ করে দেয় পরিবেশ এবং
পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন ঘটনা সমূহ।
অপরদিকে একটি ঘটনা বা কথা বিস্ফোরিত হবে কিনা সেটি নির্ধারিত হয় ঐ নির্দিষ্ট
ঘটনা বা কথাকে ঐ দুজন মানুষ কে কি ভাবে গুরুত্ব দিল তার উপর।
বিস্ফোরিত সম্পর্ক খারাপ হবে কি না কিংবা আবার ভাল সম্পর্কে ফিরে আসবে কীনা
সেটি নির্ভর করে কোন একজন বা উভয়ই ঐ একটি কথা কিংবা ঘটনাকে কিভাবে জিইয়ে রাখছে-তার
উপর।
যদি একজনও ঐ আপাত তুচ্ছ ঘটনা বা কথাকে তেল দিয়ে চকচকে করতে থাকে তাহলে আর
ফিরে আসবে না- নতুন সম্পর্কে মোড় নিবে?
-ঝড়ের পাখি   

জানুয়ারি, ২০১৫

সম্পর্ক-কানা

আমি সত্যি বড়ই ক্লান্ত। ঘর- বাহির সামলাইতে সামলাইতে। ভাল হওয়ার এক ব্যর্থ চেষ্টায় প্রতিদিন হয়ে যাচ্ছি খারাপ। কারো না কারো কাছে।
ভাল ছেলে, ভাল ছাত্র, ভাল মানুষ, ভাল বন্ধু, ভাল কর্মী, ভাল সন্তান, ভাল স্বামী হতে গিয়ে আমি আজ বড়ই ক্লান্ত।

খুব খারাপ হতে মন চায়। একদম পুরো দস্তুর এক খারাপ ছেলে। এত খারাপ যেন কেউ আমার কাছ থেকে ভাল কিছু আশা না করে।

বন্ধুরা অভিমান করে তাদের কেন খোঁজ নেই না। বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন তাদের একই অনুযোগ, শুভাকাঙ্ক্ষী তো দিন দিন কমতির পথে। আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরাও পর্যন্ত এই অভিযোগ করতে থাকে।
কাজের সূত্রে প্রতিদিন ২/১ জনের সাথে পরিচয় ঘটে। তাদের আথিতেয়তা আর ভালবাসায় প্রতিদিন ঋণী হচ্ছি- দিনকে দিনকে।তাদেরও ঠিক মতো খোঁজ নেয়া হয়ে ওঠে না।

আমি আসলে পেরে উঠিনা। আমার হয়তো ধ্যাতে নেই।আমি বেশ সম্পর্ক কানা। আমি কোন সম্পর্ক ধরে রাখতে পারি না বা মেইনটেইন করতে পারি না।
কিংবা আমি মানুষের ভালবাসার মুল্য দিতে পারি না। কত মানুষ ভালবাসার ঋণে আবদ্ধ করে রেখেছে।কিন্তু তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হয়ে ওঠে না। এই মুহূর্তে মনে পড়ছে তিন জন বন্ধুর মায়ের কথা- রাজু, জীবন আর সাগরের। তাদের তিন জনের সাথে আমার সম্পর্ক অল্প সময়ের। কিন্তু সেই অল্প সময়ের মধ্যেই এই তিনজন অনেক আপন করে নিয়েছেন। কিন্তু আমি এক হতভাগা পালিয়ে বেড়াই তাদের ভালবাসার বাঁধন থেকে। অসম্ভব এক চুম্বকীয় শক্তি আকর্ষণ করি তাদের প্রতি। আবার ছুটে চলে আসি দূরে। কেন- তার উত্তর নেই। তবে সত্যি বলছি- আমিও আপনাদের খুব ভালবাসি এবং মিস করি। কিন্তু আপনাদের ভালবাসায় বিলীন হয়ে জাওয়ার ভয়ে হয়তো পালিয়ে বেড়াই নিজের থেকে আরো যোজন-যোজন দূরে।

অনেকটা কাঁকতলিয় ভাবে পরিচিত হয়েছিলাম একজন অবসর প্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার সাথে। তিনিও আমাকে বেশ ভালবাসলেন। আমি তাকে আমার এই ‘সম্পর্ক-কানা’ র কথা খোলাখুলি বললাম। তিনি আমাকে ভুল বুঝলেন। সকল ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলেন। আমি হয়তো তাকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছিলাম।

আমার সাথে খুব ভাল যোগাযোগ নেই আমার কর্মজীবনের শেষ তিন জন সুপারভাইজারের সাথে। হয়তো আমার দিক থেকে কোন ত্রুটি ছিল।তবে এতটুকু বলতে পারি- যখন একসাথে কাজ করতাম তখন কারোর সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটেনি।

আমি এক চরম ‘সম্পর্ক-কানা’।
-ঝড়ের পাখি
৩-১৩-১৬

স্রোতের বিপরীতে

মাঝে মাঝে ভাবি স্রোতের বিপরীতে হেঁটে কি লাভ? কিংবা হাঁটা আদোও উচিত কি? সবাই যখন ছুটছে স্রোতের অনুকুলে। বৃথায় সময় এবং শ্রম ক্ষয় করছি।
কিংবা যে পাত্রে ভালবাসা কিংবা কোন কিছু দেবো সেই পাত্রেরও তো ধারণ ক্ষমতা থাকতে হবে। না হলে সে গুলো উপচে পড়ে যাবে। ধরা যাক, প্রতিদিন আমরা কাপের আধ কাপ চা খেতে খেতে অভ্যস্থ; হটাত করে যদি পুরো কাপ ভরে দেয়া হয়- তাহলে সত্যি বিচ্ছিরি বিদিখিচ্ছিরি লাগে।
তাই ভাবছি- সিধান্ত নিয়েছি- কৃপণ হয়ে যাবো। স্রোতের অনুকূলে হাঁটবো। নিজের সবটুকু দেবো না। পারলেও না; থাকলেও না।
তখন দেখো কেমন লাগে? কেমন লাগে? ………

ছোট বেলায় যা শিখেছি জীবন থেকে যা শিখছি

জীবনে বড় হওয়ার সময় কিছু বিষয়ে মগজ ধোলাই হয়েছিল- যেগুলো জীবনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে মিশে আছে। কিন্তু বড় হতে হতে জীবন দিয়ে বুঝতে শিখেছি সেই ধোলাই কৃত জিনিস এই জীবনে বেশ অচল। তার বিপরীতে নতুন করে শিখছি–
ছোট বেলায় যা শিখেছি জীবন থেকে যা শিখছি
…………………………… ………………………………
সদা সত্য কথা বলিয়ো ঃ সবখানে সত্য কথা বলতে নেই
অন্যায়ের কাছে মাথা নত করো না ঃ সবখানে মাথা তুলতে নেই
মানুষ মাত্রই ভুল করে ঃ কর্তা দের কোন ভুল হয় না
বক্স এর বাইরে ভাবতে শেখো ঃ বক্স এর ভিতরেই থাকো
ভুল প্রশ্ন হলেও প্রশ্ন করো ঃ সবার কাছে প্রশ্ন করতে নেই
যুক্তি দিয়ে ভাবতে শেখো ঃ ভেবো না- করে যাও
জ্ঞান অন্বেষণ করো ঃ সব কিছু জানতে চেয়ো না

মাথার মরণ

বন্ধু তোমায় কথা দিলাম রাগবো না আর কভু;
চারিপাশে হাজার হাজার অসংগতি তবু।
প্রশ্ন করে বৃথা তোমার নাড়াবো গদি
মাথার ভিতর, মনের ভিতর প্রশ্ন থাকেও যদি।
আজ থেকে আর দশ জন হবো- দশের এক নয়;
আমায় নিয়ে মিছে চিন্তা; আর পেয়ো না ভয়।
মরবো ধীরে ধীরে- স্বেচ্ছা মরণ জানবে না কেহ,
ধরণী পরে চলবে ফিরবে আত্মা বিহীন দেহ।
ঝড়ের পাখি
২৮-০১-১৫