নারীবাদী
বনবাসী সীতা তুমি- আমি স্বার্থপর রাম।
রাবন থেকে বাঁচিয়ে তোমায় আগুনে ফের পোড়াব;
তোমায় পেয়ে ইচ্ছা করে আবার স্বেচ্ছা হারাবো।
রাবনের না হতে দেবো- আমার রানী না বানাবো-
ইচ্ছে মতন ভাঙবো তোমায়- রাগ অভিমান ভুলাবো।
ঝড়ের পাখি
২১-১২-১৪
চলো প্রশ্ন করি
এখনও বাবা-মা, শিক্ষকরা বলেন, ‘মানুষ হ’! আমিও মানুষ তারাও মানুষ।
কিন্তু, সেই মানুষগুলোর সাথে আমার
কত আকাশ পাতাল পার্থক্য। এই ধর, ক্রিকেটার সাকিব
আল হাসানের কথা- বয়সে বুঝি আমার সমান হবে। কিন্তু কোথায় সে আর কোথায় আমি? তাকে সবাই এক নামে চেনে। আর আমি কোথাকার কে? তাকে সবাই পূজা করে (বাংলালিংকের ভাষায়- প্রিয়জনেরা একটু
বেশিই পায়।), আর আমাকে খোঁচা মারে!
বাংলাদেশের প্রথম সঙ্গীত বিষয়ক টিভি অনুষ্ঠানের (ক্লোজ আপ ১ তোমাকেই খুঁজছে
বাংলাদেশ) ‘থিম সং’ হচ্ছে,
আছে। প্রতি রাতে কত হাজারো স্বপ্ন দেখি। কিন্তু, ঘুম ভাঙলেই দেখি বিছানায়- প্রকৃতির প্রবল আহবান! তাহলে ‘স্বপ্ন’ কী? ছোট বেলায় স্বপ্ন নিয়ে একটা লেখায় পড়েছিলাম, ‘মানুষ ঘুমিয়ে যত দীর্ঘ স্বপ্নই দেখুক, তার স্থায়িত্ব ৯ সেকেন্ড! স্বপ্ন নাকি আবার বর্ণান্ধ (কালার
ব্লাইন্ড)। স্বপ্নে নাকি রূপ, রস, বর্ণ, গন্ধ নেই। তাহলে
স্বপ্ন কী? ঘুম ভাঙলেই দেখি স্বপ্ন
টুটে (ভেঙে) যায়। তাহলে স্বপ্ন অটুট হবে কী করে?
আছে। সে মনে করে, ‘তার জীবনে কী ঘটবে?
তা নাকি আল্লাহ পূর্বেই তাকে স্বপ্নের মাধ্যমে
জানিয়ে দেয়।’ তাহলে সাকিব আল হাসান,
নীল আর্মস্ট্রং, কলম্বাস, স্যার আইজাক
নিউটন এদেরও কী সৃষ্টিকর্তা স্বপ্নে এসে বলে দিয়েছিলেন? আমাকে কেন দেন না? আমার কী অপরাধ? আমিও তো অনেক বড় হতে চাই!
আমিও অনেক কিছু করতে চাই!
মুসলমান রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবুল কালাম আজাদ এর নাম আমরা সবাই জানি। তিনি ভারতের
একজন পরমাণু বিজ্ঞানীও। তার সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। তিনি নিম্ন শ্রেণীর মুসলমান
ঘরে জন্ম গ্রহণ করেও দেশের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে ছিলেন। তাকে স্কুলে বসতে
দেয়া হতো না। তিনি বারান্দায় দাঁড়িয়ে জানালা দিয়ে স্কুলের ক্লাস করতেন। তিনি অনেক
সুন্দর সুন্দর কথার মাধ্যমে তার জীবনের গল্প শুনিয়েছেন। তার স্বপ্ন নিয়ে একটা
সুন্দর কথা রয়েছে-
সম্ভবত, এ.পি. জে. আবুল কালাম
আজাদ এর স্বপ্ন ছিল এমন। যে স্বপ্ন তাকে ঘুমাতে দিত না। যে স্বপ্নের ফলে তিনি
দিনের চব্বিশ ঘন্টা সময়কে টেনে ৪৮ ঘন্টা করেছিলেন। আর তাই আজ তিনি স্বপ্ন দেখেন
না। স্বপ্ন দেখান। তাই আমাদেরও তার স্বপ্নের সাথে মিলিয়ে স্বপ্ন দেখতে হবে।
বসতে, ঘুমাতে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াবে। কিন্তু, কী স্বপ্ন দেখব? কেমন স্বপ্ন? কিসের স্বপ্ন?
মুহাম্মদ (সঃ) ‘নবুয়াত’ পেলেন? কীভাবে নিউটন ‘মধ্যাকর্ষণ’ শক্তি আবিষ্কার
করলেন? কীভাবে মোহনদাস করমচাঁদ
গান্ধী ‘মহাত্মা’ হলেন? এই ৩ জনের নাম,
পরিচয়, ধর্ম এবং দেশ ভিন্ন হলেও তাদের মধ্যে কিন্তু একটা বড় মিল রয়েছে। আর সেটি
হচ্ছে- তারা ‘প্রশ্ন’ করতে পারতেন। খুবই আশ্চর্য তাই না?
একজন সাধারণ মানুষ এত বড় অসাধারণ হতে পারে? আমি ক্লাসে প্রশ্ন করলেই শিক্ষক বলেন, ‘গাধা’! বোকার মত প্রশ্ন
করিস কেন? মুখটা তখন কালো হয়ে যায়।
মা-বাবাকে প্রশ্ন করলে ধমক দিয়ে বলেন, বেয়াদপ! বড্ড পেঁকে গেছো! তখন মনে মনে কান ধরে বলি, জীবনে আর কখনো কাউকে মরে গেলেও প্রশ্ন কররো না। তাইতো
বিশ্বাস হয় না! কীভাবে একজন মানুষ প্রশ্ন করার মাধ্যমে বড় হতে পারে?
করলো? কে এই মহাবিশ্বকে সৃষ্টি
করলো?’ এই প্রশ্ন তিনি কার কাছে
করেছিলেন? হয়তো তার সহপাঠী, বন্ধু কিংবা চাচা অথবা বয়স্ক কারও কাছে। তারা কী করলো?
ভাবল। তিনি কী প্রশ্ন করা বন্ধ করলেন? না তিনি যখন অন্য কোথাও তার প্রশ্নের উত্তর পেলেন না। তখন তিনি নিজের কাছে
প্রশ্ন করলেন? শুধু নিজের কাছে প্রশ্ন
করে বসে থাকলেন না। নিজে নিজে সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করলেন এবং
প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়ে হয়ে গেলেন ‘বিশ্বনবী’, ‘মহানবী’। অর্থাৎ তিনি প্রশ্ন করলেন নিজের কাছে।
নিউটন প্রশ্ন করলেন, ‘কেন আপেল নিচে পড়ল?
এত জায়গা থাকতে কেন আপেলকে নিচে আসতে হবে?
আপেল নিচে নামার প্রশ্নের উত্তর যখন খুঁজে
পেলেন তখন তিনি হয়ে গেলেন তার সময়কার শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী। তিনিও বড় হলেন নিজেকে
প্রশ্ন এবং উত্তর খোঁজার মাধ্যমে।
দক্ষিন আফ্রিকায় ছিলেন। তখন তিনি সেখানকার এক রেলস্টেশনে চরম লাঞ্ছনার শিকার হন।
সেই রেলস্টেশনের প্লাটফর্মের সাইনবোর্ডে লেখা ছিল,
সাথে পশুরমত আচরণ। তার মন কেঁদে উঠল। কেন এমন হবে? তিনি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য প্রচার করলেন অহিংসার
বানী। কোন পাশবিক যুদ্ধ, বিগ্রহ, বিদ্রোহ নয়। তাই তো তিনি আজ ‘মহান+আত্মা’= ‘মহাত্মা’।
নিজের কাছে। আর একটা বিষয় প্রশ্ন ভুল, অবান্তর বা অযৌক্তিক নয়। প্রশ্ন প্রশ্নই। ভাল প্রশ্ন, খারাপ প্রশ্ন বলে কিছু নেই। তাই মনে কোন দ্বিধা, সংশয়, সন্দেহ এর উদয়
হলেই প্রশ্ন করো। আর প্রশ্ন করে বসে থাকলে হবে না। সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের
করতে হবে, যেভাবেই হোক (by hook or crook)। নুবাবা-মায়ের কাছে অনুরোধ- আপনাদের সন্তান যদি বেশি প্রশ্ন
করে। তবে বিরক্ত হবেন না। দয়া করে আপনার সন্তানকে বকবেন না। বরঞ্চ, প্রশ্ন করতে
উদ্বুদ্ধ করুন এবং তাকেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সাহায্য করবেন। দেখবেন সে নিশ্চয়
পারবে এবং ভবিষ্যৎ প্রশ্নের জন্য আপনাকে বিরক্ত করবে না। নিজে নিজেই খুঁজে
নেবে।
লাভ? অনেক লাভ! নিজের শক্তি-সামর্থ্য, নিজের সম্পদ-সম্পত্তি, আত্মবিশ্বাস-আত্মতৃপ্তি সবকিছুই খুঁজে পাওয়া যায়- প্রশ্নের
উত্তর খোঁজার মাধ্যমে। নিজের হৃদয়ে আত্মবিশ্বাস জন্ম নেয়। তাই তো, এভারেস্ট বিজয়ী মুসা ইব্রাহীম দৃঢ় চিত্তে বলেন,- ‘পৃথিবীর একজন মানুষও যদি পারে। তাহলে মুসা ইব্রাহিমও পারবে।’
খুব সহজ? কক্ষনোই না! তোমার মনে যে
প্রশ্ন। তার উত্তর বাজারে প্রচলিত কোন গাইড বইয়ে নেই। যে বাজর থেকে গাইড বই কিনে
এনে উত্তর খুঁজে পেলাম। আর মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় লিখে দিলাম। ব্যস, পেয়ে গেলাম গোল্ডেন ‘এ’ প্লাস।
পরতে পরতে লুকায়িত। খুঁজে পাওয়া খুবই কষ্ট সাধ্য। সাপের মাথার মানিকের মত। এই
প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে পৃথিবীর নিয়ম ভাঙতে হয়। এ.পি.জে. আবুল কালাম আজাদ এর আরেকটি
কথায় ফিরে যাই। তিনি বলেছেন, ‘পৃথিবীতে কিছু
মানুষের জন্ম হয় পৃথিবীর নিয়ম মেনে চলতে। আর কিছু মানুষের জন্ম হয় পৃথিবীর নিয়ম
ভাঙতে। আমার দরকার নিয়ম ভাঙার মানুষ গুলোকে।’
ঠিক নয়। নতুন কিছু হতে পারে আরো সঠিক বা
যর্থার্থ। তাইতো, আমাদেরকে নিয়ম ভাঙার দলে
ভিড়তে হবে। ভাবতে হবে নতুন কিছু। হতে হবে সৃজনশীল, কৌশলী। দৃঢ় প্রত্যাশার (প্রত্যয়+আশা)সাথে থাকবে আত্মবিশ্বাস;
হতে হবে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ- অবশ্যই নিজের কাছে।
হতে হবে পরমতসহিষ্ণু, শ্রদ্ধাশীল, উদার এবং বিশ্বজনীন। নিজেকে ভাঙতে হবে, গড়তে হবে। তাহলে হয়তো পৌঁছে যেত পারবো আমার অটুট লক্ষ্যে।
(সূত্র) আবিষ্কার করে ফেললাম। এখন পানি দিয়ে গিলে দেখি বড় হতে পারি কী না?
…..যদি বড় হতে পারি! তাহলে, বড় হওয়ার গল্প শোনাব আর…. একদিন…….।
নাম-১: ধর্ম নিরপেক্ষ নামের সন্ধানে
চিরস্থায়ী বস্তু। আকজন মানুষ সবচেয়ে বেশি ভালবাসে তার নামকে। বিশ্বাস না হয়। কারো
নামে গালি দিয়ে দেখতে পারেন।
সক্রেটিস, আইনস্টাইন কে দেখি নি। তবুও তারা আমাদের কত পরিচিত। আপনি
একদিন থাকবেন না; কিন্তু আপনার নাম কিছুদিন
হলেও থাকবে (নুন্যতম ৩ প্রজন্ম পর্যন্ত)।
সন্ধানে
কোন লিঙ্গের)। আমি শুনেই মনে হল তিনি হিন্দু, তাই দিদি বলে সম্বোধন করে বিব্রত হলাম। আচ্ছা, কোন মানুষের নাম শোনার সাথে সাথে ধর্মের বিষয়টি আমার অবচেতন
মনে আসলো কেন? আচ্ছা ধর্মের বিসয় আসলেও
কেন তা সম্বোধনের সাথে সম্পর্কিত। তার নামে নাম কি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে
ধর্মকে প্রতিনিধিত্ব করে?
তো এরা কোন ধর্মের?
ঝালর বহন করে না। তাহলে কি নামের সাথে
ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই?
নামের পদবি নানা ভাবে সময়ের পরিক্রমায় নির্ধারিত হয়। যেমন ধরেন গাজী, শাহ, প্রভৃতি। এখন
এগুলোর সাথে ধর্মের যোগসাজস কোথায়?
পরিচয় হলাম, আমার নাম বলার পর তিনি
বললেন তন্ময়। আমি ভাই হিসবে সম্বোধন করলাম এবং দেখ হলে সালাম দিতাম। পরে জানলাম,
তার নাম তন্ময় কর্মকার। এখন আর সালাম দিতে পারি
না এবং দাদা বলে ডাকার চেস্টা করি।
নাকি বোঝা যায় কোন ধর্মের অনুসারী। একসময় বাংলায় মুসলমানদের নামের আগে মোঃ ব্যবহৃত
হত আর হিন্দুদের ক্ষেত্রে শ্রী। যদিও এখন সবায় সেতা ব্যবহার করতে অনেক অনীহা দেখা
যায়।
মানুষের ধর্ম সম্পর্কে কি নিশ্চিত হতে পারি?
লেখাটাকে সমৃদ্ধ করবে।
বোরখা, রোকেয়া এবং আমরা
যাইহোক, দুজনে সকালের খাবারের জন্য রুটি আর ডাল-ভাজি অর্ডার দিল। আমাদের অর্ডার আগে আসতে দেরি হচ্ছে। আমি বসে থেকে আশে পাশে দেখছিলাম (এটা আমার একটা অভ্যাস-খারাপ কি ভাল জানি না। সব কিছু-মানুষের খাওয়া, কথা বলা কিংবা কাজ করা প্রভৃতি।) ইতমধ্যে, একজন পুরুষ সম্ভবত আইসিডিডিআর’বি- এর স্টাফ (আইডি কার্ডের ফিতা দেখে তাই মনে হোল) এসে সেই নারী-পুরুষের টেবিলে বসল। নতুন আগত ব্যক্তি এই ক্যান্টিনের নিয়মিত কাস্টমার। উনি ওনার প্রতিদিনের স্বাভাবিক আচরণে কোন দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে নাস্তা করতে লাগলেন।
এই পরিস্থিতিতে অস্বস্তিতে পড়লেন নারীটি। পুরুষটি ফোনে কথা বলতে বলতে খাইতে লাগলেন আর নারীটি কি করবে? না করবে? পুরুষ টি খেতে লাগলেন নির্দ্বিধায়- আর নারীটি অনেক ভেবে চিন্তে ধীরে ধীরে রুটির টুকরো ছিড়ে দেয়ালের দিকে মুখ ফিরে নেকাব তুলে আস্তে আস্তে মুখে দিলেন। রুটি ডাল ছাড়া। একটু প্ররে পুরুষটি কে তার ডালের বাটিটাও এগিয়ে দিলেন। নারীটি দুটি তন্দুর রুটি কোন কিছু ছাড়াই শুকনো খেয়ে ফেললেন।
কি এমন বিশ্বাস যে তাকে এই ধরনের আচরণে বাধ্য করলো। জীবন ধারনের জন্য খাওয়ার চেয়ে নেকাব রক্ষা করা কি এতই জরুরী। তিনি একান্ত বাধ্য না হলে নিশ্চিত এই পুরুষ সমাগত হোটেলে আসতেন না। কিংবা আমরা পুরুষরা কিভাবে নির্বিচার ভাবে নিজেদের উদার পূর্তিতে ব্যস্ত।
এই ঘটনা আমার দেখা এই প্রথম না।এবং শুধু মধ্যবয়সী কিংবা পৌঢ় নয়; তরুণ এবং নতুন মেয়েদের ক্ষেত্রেও (যারা শহুরে জীবনের এবং তথাকথিত ‘আধুনিক’ শিক্ষায় শিক্ষিত)।
অনেক আগে যখন রোকেয়া সমগ্র পড়েছিলাম। এখন ঘটনা টা ঠিক হুবহু মনে নাই। কিন্তু যতদূর মনে আছে উনি ট্রেনে ভ্রমণ করছিলেন। একজন পর্দায় আবৃত নারী বিপদে পড়েছেন। কিন্তু পর্দা নষ্ট হবে বলে তার সহযাত্রী এবং বিপদাক্রান্ত নারী নিজেও কাউকে সাহায্য করতে দিচ্ছেন না।
বেগম রোকেয়ার যুগ এখন আর নাই। কিংবা আমরা পুরুষরা আমাদের সুখ- সুবিধা গুলো দেখছি। কিন্তু আমাদের আর একটি অংশকে পর্দার নামে বাইরে বের করে মানসিক অত্যাচার করছি কি না? নিজের বিবেক বারবার সেই প্রশ্ন করছে আমাকে।