ভালোবাসা ছড়িয়ে যাক প্রাণ ও প্রকৃতিতে!
বৈশ্বিক উষ্ণতা বলতে শুধু প্রাকৃতিক উষ্ণতাই নয়। এর সাথে সাথে সমাজিক-সাংস্কৃতিক উষ্ণতাকেও বিবেচনা করা হচ্ছে। দিনকে দিন এই সামাজিক-সাংস্কৃতিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে সমান্তরালভাবে। যুদ্ধ, সন্ত্রাস, সামাজিক সহিংসতা, নির্যাতন, প্রতিবেশ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের মতো হাজোরো সমস্যায় জর্জরিত বর্তমান পৃথিবী এবং মানুষ। এই সমস্যার নেতিবাচক প্রভাব শুধু মানুষ একা ভোগ করছে না; অন্য প্রাণও সংকটের সম্মূখীন। কিন্তু একমাত্র মানুষই পারে এই সমস্যা থেকে উত্তোরণ করাতে। অন্য প্রাণ হতে পারে সহযোগী, সহযাত্রী; কিন্তু নেতৃত্ব মানুষকেই দিতে হবে।
ভালোবাসা দিবসে যে ‘পজিটিভ ভাইভ’ বিরাজ করে সেই পজিটিভ ভাইভটা হতে পারে এই বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের প্রাথমিক ধাপ। কিন্তু সেটি শুধু মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। আরো নির্দিষ্ট করে বললে শুধুই আমাদের ভালোবাসার মানুষ কিংবা সবচেয়ে নিকটজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। সেটি কী এই স্বল্প গন্ডিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে? আসুন এই গন্ডি থেকে বেরিয়ে আসি।
ভালোবাসা কি শুধু মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে? আমরা কী শুধু মানুষ নিয়েই বেঁচে থাকি? মানুষ ছাড়াও আমাদের চারপাশে হাজারো বস্তুগত এবং অবস্তুগত উপাদান রয়েছে। সেই সমস্ত উপাদানগুলোকে কি ভালোবাসা যায় না? আমরা যে বায়ু গ্রহণের মাধ্যমে বেঁচে আছি-সেই বায়ুকে চলুন ভালোবাসি। দূষিত বায়ুকে কম দূষিত করি (কম কার্বণ নিঃসরণ করা) কিংবা বিশুদ্ধ করার (গাছ লাগানো) উদ্যোগ নিয়ে বায়ুকে ভালোবাসি। আসুন মাটিকে ভালোবাসি; কম রাসায়নিক সার-কীটনাশক ব্যবহার কিংবা মাটি দূষণ কম করে।
ভালোবাসা দিবসে অনেকেই মানবতার জন্য রক্তদান ক্যাম্প, চিকিৎসা ক্যাম্প, অর্থ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন ইভেন্ট আয়োজন করি। নিঃসন্দেহে খুবই ভালো উদ্যোগ। কিন্তু পাশাপাশি অন্যান্য প্রাণীর জন্য স্বাস্থ্য ক্যাম্প কিংবা প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় অর্থ সংগ্রহ করতে কী পারি না-এই ভালোবাসা দিবসটিকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে। আসুন ভালোবাসা দিবসে কিছু না পারি প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশের অন্তত ক্ষতি হয় এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকি।
আমি প্রকৃতির, প্রকৃতি আমার
পরিবেশকে শুদ্ধ, নির্মল ও সুস্থ রাখার জন্য শুধু গাছ লাগালে চলবে না; তা কিন্তু যথেষ্টও নয়। গাছ ছাড়াও অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদানকে ভালো রাখার উদ্যোগ নিতে হবে। প্রকৃতিতে একটি ঘাস, একটি গুল্ম, একটি ছোট প্রাণী, একটি বহৎ প্রাণীকে ভালো রাখার উদ্যোগ নিতে হয় মানুষকে। শুধু তাই নয়। এ গাছ, ঘাস, গুল্ম যাতে সবল ও সতেজ হয় এজন্য মাটিকেও যত্ন রাখতে হয়। যত্ন রাখতে হয় নদী, নালা, খাল বিলকেও। কারণ প্রাকৃতিক উপাদান প্রতিটিরই পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। একটি প্রাকৃতিক উপাদান বিলুপ্ত হলে এর প্রভাব অন্য উপাদানের ওপরও পড়ে। এজন্য পরিবেশকে সুন্দর, ভালো, নির্মল ও বিশুদ্ধ করার জন্য পরিবেশ তথা প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানকেই আমাদের চিনতে হবে, জানতে হবে এবং বুঝতে হবে। গাছের মতো করে অন্যান্য উপাদানকেও যত্ন করতে হবে, তাদেরকে সংরক্ষণ করতে হবে এবং সেগুলোর বিস্তার ও বিকাশ করতে হবে। পরিবেশ ও প্রকৃতিকে জানার, বুঝার ও উপলদ্ধি করার এবারের পরিবেশ দিবস ২০১৭ এর প্রতিপাদ্য যথার্থ। কেননা এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়টি প্রকৃতির কাছকাছি কিংবা প্রকৃতির সাথে মানুষকে বসবাস করতে উৎসাহিত করছে। “Connect with Nature”এই প্রতিপাদ্যটি, যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার “আমি প্রকৃতির, প্রকৃতি আমার” শিরোনামে উদযাপন করছে, সেটি আমাদেরকে প্রকৃতিকে তার মতো করে উপলদ্ধি করার অবকাশ দিয়েছে।
বর্জ্য পানিকে ব্যবহার উপযোগী করি
আপনি কি পানি অপচয় করেন? বুকে হাত দিয়ে বলুন। আপাত দৃষ্টিতে মনে হবে যে, আমরা কেউ পানি অপচয় করি না। কিন্তু আমাদের ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃতভাবে পানির অপচয় করি নানাভাবে। আমাদের নাগরিক জীবনে সকালে উঠে ব্রাশ করার সময় পানির কল (ট্যাপ) খুলে রাখি। রান্নাঘরের সিঙ্কে পানি অনবরত পড়তেই থাকে। গোসলের সময় শাওয়ার কিংবা পানির কল থেকে পানি পড়তেই থাকে প্রয়োজন ছাড়াই। এতো গেলো শহুরে জীবন। গ্রামের জীবনেও পানির অপচয় কম নয়। টিউবওয়েল থেকে এক গ্লাস পানি সংগ্রহ করতে গেলে কমপক্ষে আরো ১০ গ্লাস পানি অপচয় করি। টিউবওয়েলে গোসল করতে গিয়ে কতো পানি অপচয় করি তার হিসাব কে রাখে। পুকুরের পানিকে থালা-বাসন, কাপড় ধোয়া কিংবা পশুপাখির অবাধ বিচরণে খাবার উপযোগী আর থাকেই না। এটি শুধু গৃহস্থালীতে ব্যবহার্য পানির অপচয়ের (বর্জ্য পানিতে পরিণত হওয়া) চিত্র। এই চিত্র আরো বেশি ঘনীভূত হয় কৃষিক্ষেত্র এবং কলকারখানায়। এটি শুধু বাংলাদেশের কথা নয়; সারা পৃথিবীতে পানি অপচয় হচ্ছে। প্রতিদিন আমরা নানাভাবে পানির অপচয় করে থাকি। যে পানি আমাদের প্রাণ, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পাই বিনামূল্যে। সেই বিনামূল্যের পানিই আমরা অপচয় করি এবং পুনরায় কয়েকগুণ বেশি মূল্যে কিনে পান করি।
জাতিসংঘের পানি বিষয়ক অধিদপ্তর এর তথ্য মতে, বিশ্বে গৃহস্থালীতে যে পরিমাণ পানি ব্যবহার করা হয় তার ৮০ শতাংশই বর্জ্য (অপচয়) হয়ে যায়। এই বর্জ্য পানি কোনভাবেই পুনঃব্যবহার বা প্রক্রিয়া ছাড়াই প্রতিবেশে ফিরে আসে। এই তথ্য আমাদেরকে বেশ নাড়িয়ে দেয়। আমরা আমাদের পরিবারে প্রতিদিন যে পরিমাণ পানি ব্যবহার করি তার বেশিরভাগই অপচয় হয়ে নোংরা বা বর্জ্য পানিতে পরিণত হয়।শুধু গৃহস্থলীতে নয়; কৃষি ক্ষেত্রেও নানাভাবে পানি নষ্ট হয়ে যায়। কৃষিক্ষেত্র পানি নোংরা হওয়ার ঘটনাটা অপচয় হওয়ার চেয়ে ব্যতিক্রম। কৃষিতে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক কীটনাশক বা সার ব্যবহারের ফলে কৃষিতে ব্যবহৃত পানি বিষাক্ত হয়ে ভূগর্ভস্থ এবং ভূপৃষ্ঠস্থ পানিকে বিষাক্ত করে তোলে। ফলে এই পানি আর ব্যবহারের উপযুক্ত থাকে না এবং বর্জ্য পানিতে পরিণত হয়। সেই হিসাবে কৃষি পানিকে বেশি বর্জ্য পানিতে পরিণত করে।কৃষি ক্ষেত্রের ন্যায় শিল্প কলকারখানাও একটি বড় অংশ বর্জ্য পানি তৈরি করে। কলকারখানায় ব্যহহৃত উচ্ছিষ্ট পানি সরাসরি ভূপৃষ্ঠ এবং জলাশয়ে নিষ্কাশনের ফলে ভূগর্ভস্থ এবং ভূপৃষ্ঠস্থ উভয় পানিই আজ বিষাক্ত এবং বর্জ্য পানিতে পরিণত হয়। কলকারখানার উচ্ছিষ্ট পানি কী পরিমাণ বর্জ্য পানি তৈরি করে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বুড়িগঙ্গার পানি দূষণ। এছাড়াও কলকারখানা সংলগ্ন অসংখ্য জলাশয়ও আজ বর্জ্য পানিতে পরিণত হয়।
ক্ষুদ্র খামার এর বৈশিষ্ট্য
তবুও সাধারণীকরণ করার জন্য ক্ষুদ্র খামারের একটা নির্দিষ্ট আয়তন নির্ধারণ করতে হবে। নিচের তথ্য থেকে বুঝতে সুবধিা হবে ক্ষুদ্র খামারের আয়তন কতটুকু হয়। তার আগে বলে রাখা ভালো যে, পৃথিবীর অর্থনৈতিক কাঠামো অনুযায়ী সমগ্র পৃথিবীকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা:
১) উন্নত বিশ্ব বা উত্তরাংশ: যা পৃথিবীর ধনী দেশগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করে। এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব কম। শিল্প, প্রযুক্তি, অবকাঠামোসহ অন্যান্য দিক দিয়ে এগিয়ে।
২) অনুন্নত বিশ্ব বা দক্ষিনাংশ: যা মূলত পৃথিবীর গরীব (!), দূর্ভিক্ষ (!), দূর্যোগ (!) পীড়িত দেশগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করে। এখানে ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি এখনো টিকে আছে। এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব উত্তরাংশের চেয়ে অনেক অনেকগুণ বেশি। আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা এবং এশিয়া মহাদেশের অধিকাংশ দেশই এই অংশের অর্ন্তভূক্ত। এই অংশকে কখনো তৃতীয় বিশ্বও বলা হয়ে থাকে।
(বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে যে এই বিভাজন কোন ভৌগলিক বিভাজন নয়। বরং অর্থনৈতিক বা মনস্তাত্বিক বিভাজন। তাই পৃথিবীর দক্ষিনাংশের অনেক দেশই উত্তরাংশের প্রতিনিধিত্ব করে।)
ক্ষুদ্র খামার এর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে জমির মালিকানা। জমির মালিকানা কার হবে? ক্ষুদ্র খামার বলতে বোঝাচ্ছি যেখানে খামারের শ্রম, জ্ঞান, সময়, খামার ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি যে ব্যক্তি ব্যয় করেন তিনিই ক্ষুদ্র খামারের মালিক (কোন কোন ক্ষেত্রে জমির মালিকানা তার না থাকলেও নিয়ন্ত্রণ তার হাতে থাকে)। পক্ষান্তরে বড় খামারের মালিকের কৃষি কাজের প্রাথমিক বিষয়গুলোর সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ থাকে না বললেই চলে। আরা যারা সেই খামারে কৃষি কাজ করেন তাদেরকে কৃষক না বলে কৃষি শ্রমিক বলাই ভালো। বাংলাদেশ সহ দক্ষিণাংশের অনেক কৃষক আছে যাদের নিজস্ব জমি নেই। যাদেরকে আমরা ভূমিহীন কৃষক বা বর্গাচাষী কৃষক বলি। অন্যদিকে দক্ষিণাংশের অনেক আদিবাসী কৃষক রয়েছে যাদের জমি ব্যক্তি মালিকানায় থাকে না। সেক্ষেত্রে এই সমস্ত কৃষক এর নিয়ন্ত্রণে থাকা খামারগুলোকে কী বলা হবে? হ্যাঁ ভূমিহীন কৃষক, বর্গাচাষী এবং আদিবাসী কৃষকের খামারগুলোও ক্ষুদ্র খামারের অর্ন্তভূক্ত হবে। বর্গা বা লিজকৃত খামার এর ক্ষেত্রে শর্ত থাকে যে জমির মালিককে যেন কৃষক চিনতে পারে এবং তার সাথে যেন প্রত্যক্ষ যোগাযোগ থাকে। ক্ষুদ্র খামারের জমির মালিকানা কখনোই কোন কোম্পানি বা কর্পোরেশন এর হাতে থাকবে না। কৃষক জমির মালিককে যেন ব্যক্তিগতভাবে চিনতে পারে এবং উভয়ের সাথে একটি ‘প্যাট্রন-ক্লাইন্ট’ সম্পর্ক থাকবে।
ক্ষুদ্র খামারের কৃষক হয় প্রধানত নারী এবং প্রবীণরাই। এরা শখে কিংবা কৃষির প্রতি ভালোবাসার জায়গা থেকে কৃষিকাজ করে থাকে। ক্ষুদ্র খামারের সাথে পরিবারের সকল সদস্যের শ্রমঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকে। পাশাপাশি বৈচিত্র্যময় ফসলের এক অভয়ারণ্য হিসেবে বিবেচিত হয় ক্ষুদ্র খামারগুলো। কৃষির সাথে সাথেই প্রাণী সম্পদ (হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল প্রভৃতি) এবং মৎস্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা ক্ষুদ্র খামারের অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।
সবশেষে ক্ষুদ্র খামারে কোন ধরনের জিএমও বা একক প্রজাতির শস্য উৎপাদন করে না। পাশাপাশি, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ব্যবহার করা হয় স্বল্পমাত্রায় বা হয় না বললেই চলে। কোম্পানির বীজ ব্যবহার করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজেদের সংরক্ষণে পরবর্তী মৌসুমের জন্য বীজ থাকে।
ক্ষুদ্র খামারগুলোর প্রাণ-প্রকৃতি আর জ্ঞানে সমৃদ্ধ হলেও সম্পদের (রিসোর্স) দিক দিয়ে একেবারেই তলানিতে। প্রযুক্তির ব্যবহার হয় একবারেই প্রান্তিক পর্যায়ের। বাজার এবং কোম্পানি নির্ভরশীলতা তুলনামুলক কম থাকে।
এই হলো অনুন্নত বা পৃথিবীর দক্ষিণাংশের ক্ষুদ্র খামারের বৈশিষ্ট্য। এই সমস্ত বৈশিষ্ট্য যে খামারের থাকবে না। তা অবশ্যই বড় খামার। আশা করি এই বৈশিষ্ট্যের আলোকে আমরা খুব সহজে চিহ্নিত করতে পারবো কোনটি ক্ষুদ্র আর কোনটি বড় খামার।
এখন আসি শুরুর প্রশ্নে? আমরা কি চাই- ক্ষুদ্র খামার না বৃহৎ খামার? সেটি পাঠকের কাছেই ছুড়ে দিলাম। আমরা দুটি খামারকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করেই বিবেচনা করবো কোনটি আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রাণ-প্রকৃতি, প্রজন্ম এবং পৃথিবীর জন্য জরুরি। টেকসই উন্নয়নের জন্য আমরা কোন ধরনের খামার বেছে নেবো। আমিও ভাবতে থাকি। অন্য কোন লেখায় সেটি নিয়ে আলোকপাত করার ইচ্ছা রইল।
ক্ষুদ্র কৃষকের ক্ষুদ্র খামার : টেকসই, পরিবেশবান্ধব এবং খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ
বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিদ্যমান চাষযোগ্য কৃষিজমি বা শস্যভূমি নিয়ে সারা পৃথিবীতে ধারাবাহিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এই সমস্যা শুধু ৭০০ কোটি মানুষের খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য নয়। বরং সারা পৃথিবীতে দিনকে দিন বৃদ্ধি পাওয়া জৈব তেলের (biofuels) চাহিদাও এর মধ্যে অর্ন্তভুক্ত। কিন্তু চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- এই খাদ্য এবং জৈব তেলের চাহিদা অতি অবশ্যই এমন একটি পরিবেশবান্ধব উপায়ে করতে হবে- যেন সেটি টেকসই হয়। কৃষি কার্যক্রম যেন প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে আহরিত রাসায়নিক পদার্থের সর্বনিম্ন ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাণবৈচিত্র্যকে সংরক্ষণ করার পাশাপাশি গ্রীন হাউস গ্যাস নির্গমণও কমাবে। পাশাপাশি এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ যেন সারা পৃথিবীর লাখ লাখ কৃষকের কাছে লাভজনক কাজ হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করে- সে বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে একটি পন্থাই হতে পারে সমাধান। আর তা হচ্ছে ছোট ছোট কৃষি খামার।
একবছর পূর্বে ১০০ টাকায় যে পরিমাণ খাদ্য পাওয়া যেত। বর্তমান সময়ে তার চেয়ে ৩০ শতাংশ কম খাদ্য পাওয়া যায়। এই ধরনের চিত্র তেলসহ অনান্য উপকরণ ক্রয় করার ক্ষেত্রেও দেখা যায়। পরিবেশ বিপর্যয় কিংবা জলবায়ু পরিবর্তনের (climate change) ফলে এই অবস্থা দিনে দিনে আরও জটিল আকার ধারণ করছে। খরা, বন্যা এবং অন্যান্য অনির্দিষ্ট অপ্রত্যাশিত আবহাওয়ার ফলে শস্য ভূমিও হ্রাস পাচ্ছে।
আমাদের প্রজন্মের জন্য বর্তমান সময়কার চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থার স্থানান্তর ঘটানোর মাধ্যমে শিল্পভিত্তিক কৃষিকে টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব কৃষিতে স্থানান্তর করা। আমাদের অন্য একটি বিকল্প কৃষি নির্ভর উন্নয়ন প্যারাডাইম দরকার। যে কৃষি আমাদেরকে টেকসই প্রাণবৈচিত্র্যের জন্য সামাজিকভাবে উদ্বূদ্ধ করবে। সৌভাগ্যবশত, বর্তমানে এমন হাজারো নতুন এবং বিকল্প উদ্যোগ সারা পৃথিবীতে চর্চা হচ্ছে, যা আমাদের পৃথিবীর বাস্তুসংস্থানের অনুকূল। আর তেমন একটি চর্চা হচ্ছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কৃষি খামার। যা ক্ষুদ্র কৃষককে সংরক্ষণের মাধ্যমে জীবিকার নিশ্চয়তা প্রদান করে। পাশাপাশি, উৎপাদন প্রক্রিয়া অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্মত, নিরাপদ, বৈচিত্র্যময় খাদ্যের যোগানদার, বণ্টনের স্থানীয়করণ এবং ব্যবসা ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রেও সুবিধাজনক।
বাস্তুসংস্থানের অনুকূল বেশিরভাগ টেকসই কাঠামো আমাদের ঐতিহ্যবাহী কৃষিব্যবস্থায় বিদ্যমান ছিল। এ ধরণের লক্ষাধিক উদাহরণ এখনো পর্যন্ত স্থানীয় গ্রামীণ কৃষিব্যবস্থায় বিদ্যমান। এই ধরণের ঐতিহ্যবাহী কৃষিব্যবস্থার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খামার শিল্পায়নভিত্তিক কৃষির জন্যও ফলপ্রসূ হবে যদি তারা প্রাণবৈচিত্র্যকে সংরক্ষণ করতে আগ্রহী হয় এবং রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই বাৎসরিক উৎপাদন প্রক্রিয়াকে টেকসই করার মাধ্যমে। এই ধরণের কৃষি ব্যবস্থা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পৃথিবীর খাদ্য চাহিদার যোগান দিয়ে এসেছে। যেখানে লোকায়ত জ্ঞানের ব্যবহারের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বাস্তুতন্ত্রের সমন্বয় ও সংরক্ষণ করে এসেছে।
গবেষণা
গবেষণাকে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর নির্দিষ্ট তথ্য লাভের বৈজ্ঞানিক এবং পদ্ধতিগত
অনুসন্ধানও বলা যায়। আসলে, গবেষণা হল বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের একটি শিল্প।
একটি গতি। গবেষণা একটি প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম, এমনকি কৌশলগত ধারণার
ক্ষেত্রে এই টার্মটি ব্যবহার করা উচিত।
Woody এর মতে, ”গবেষণার অন্তর্ভুক্ত হল
সমস্যার সংজ্ঞায়ন ও পুন:সংজ্ঞায়ন, পূর্বানুমান তৈরি অথবা সম্ভাব্য সমাধানগুলো সংগ্রহ করা, সংগঠন করা ও প্রাপ্ত তথ্যের
মূল্যায়ন করা; অবরোহ তৈরি করা ও ফলাফলে পৌঁছানো এবং পরিশেষে ফলাফল সাবধানে পরীক্ষা করার
মাধ্যমে সংগঠিত পূর্বানুমানের সাথে খাপ খায় কিনা তা নির্ধারণ করা। (Kothari 2004:1)
- কিছু সৃজনশীল কাজের
মধ্য দিয়ে জ্ঞান লব্ধ আনন্দ পাওয়ার ইচ্ছা, - সমাজের সেবা করার ইচ্ছা,
- প্রায়গিকভাবে কোন
সমস্যার সমাধান খোঁজার ইচ্ছা, - একটি গবেষণার ডিগ্রী
অর্জন এবং ফলাফলসরূপ লাভের ইচ্ছা, - শ্রদ্ধাভাজন হওয়ার
ইচ্ছা, - পুরাতনকে খোঁজা এবং
নতুনকে সনাক্ত করা, - জনমত তৈরীর জন্য
শিক্ষামূলক কার্যক্রম, - বিদ্যমান কোন বিষয়ের
সত্যতা যাচাই করা।
উত্তর আবিস্কার করা।গবেষণার মুল লক্ষ্য লুকিয়ে থাকা সত্যকে,যা এখনও আবিস্কৃত হয়নি তা
খুঁেজ বের করা।যদিও প্রতিটি গবেষণা অধ্যায়নের কিছু নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে,নি¤েœ উল্লেখিত ভাগগুলোকে
বিস্তারিতভাবে গবেষণার লক্ষ্য হিসেবে ধরে নিতে পারি-
- একটি প্রপঞ্চ সর্ম্পকে
পরিচিতি লাভ করা অথবা তার মধ্য দিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করা। - একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তি,
অবস্থা ও দলের
বৈশিষ্ট্যসমূহের বর্ণনা করা। - কোন কিছু ঘটে যাওয়ার
মাত্রা অথবা তার সাথে সর্ম্পকিত অন্য কিছুকে নির্ধারণ করা।
চলকগুলোর মধ্যে অপরিকল্পিত
সর্ম্পকগুলোকে পুর্বানুমান করার জন্য পরীক্ষা করা। (Kothari
2004:2)
ধরনের লক্ষ্য হতে পারে-
- আবিস্কার
- বর্ণনা
- বোঝাপড়া
- ব্যাখ্যা
- অনুমান
- পরিবর্তন
- মূল্যায়ন
- প্রভাবসমূহ নির্ধারণ
সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয়।
- পরিকল্পনার ক্ষেত্রে
গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। - কোন প্রপঞ্চ
নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দান করতে পারে। - সমাজ সংস্কারমূলক কাজে
ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে। - মানুষের মূল্যবোধ,
অভিমুখীনতা ও
কুসংস্কারকে দূরীভূত করতে প্রয়োজনীয় ঐক্যমতের ভিত্তি সৃষ্টি করতে পারে। - জীবনযাত্রার মান
বৃদ্ধির জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য করতে পারে। - প্রযুক্তির বিকাশ,
গ্রহণ ও
স্থায়িত্ব প্রদানে সামাজিক সহায়তার ভিত্তি প্রস্তুত করতে পারে। - বিজ্ঞানের ও বিশ্বাসের
সামাজিক প্রভাব, প্রতিপত্তি ও দ্বন্দ্বকে মূল্যায়নের মাধ্যমে বিজ্ঞানের দর্শন ও বিজ্ঞানের
সমাজতত্ত্ব বিষয়ক জ্ঞান বৃদ্ধি করতে পারে। - প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মত
সঠিক ও যথেষ্ট ভবিষ্যতবাণী করতে না পারলেও সীমিত ক্ষেত্রে সংস্কৃতি ও
পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যতবাণী করতে পারে।
থাকে। সামাজিক বিজ্ঞানসমূহের বিষয়বস্তু মানুষ, মানুষের মন, মানুষের সমাজ, মানুষের সংস্কৃতি, মানুষের অর্থনীতি, মানুষের রাজনীতি প্রভৃতি।
মোট কথা মানুষ, তার আচরণ ও ক্রিয়া, এবং মানুষের সমাজ-সংগঠন সামাজিক বিজ্ঞানীদের সাধারণ বিষয়বস্তু। একারণে সামাজিক
গবেষণা বলতে শুধু সমাজতাত্ত্বিক গবেষনাকে ধরে নেয়া ঠিক নয়। তাছাড়া, সামাজিক বিজ্ঞানের পদ্ধতি
এবং পদ্ধতিতত্ত্বে যথেষ্ট সাদৃশ্য থাকায় সামাজিক গবেষণা বিষয়ক আলোচনায় সাধারণত
ব্যাপক দৃষ্টিকোণ লক্ষ্য করা যায়। আমরা সমাজতাত্ত্বিক গবেষণার উপর কোন কোন
ক্ষেত্রে বিশেষ গুর”ত্ব দিলেও এখানে সামাজিক গবেষণা বলতে সামাজিক বিজ্ঞানের গবেষণাকেই বুঝানো হবে।
বলা বাহুল্য, সামাজিক গবেষণা বলতে সামাজিক বিষয়ের বৈজ্ঞানিক গবেষণাকেই বুঝতে হবে। (মুহাম্মদ
হাসান ইমাম ১৯৯৮:১০৬)
রাখে না যে সব প্রাকৃতকি বিজ্ঞানেও অনেকগুলো অভিন্ন বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। নি¤েœ প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো
বর্ণনা করা হল:
- সামাজিক সমস্যা সমাধানে
সহায়ক - সামাজিক গবেষণা দু ইবা
ততোধিক চলকের (variable) মধ্যে সম্পর্ক
আবিষ্কার করে - সামাজিক অবস্থা
সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বানী করে - সামাজিক গবেষণা বাস্তব
তথ্য নির্ভর - সামাজিক গবেষণা
ধারাবাহিক ও সুশৃঙ্খল - সামাজিক গবেষণা সঠিক
তত্ত্ব গঠনে ব্যাপ্ত - সামাজিক গবেষণা
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির অনুসরণ করে।
বিষয়ে জানার চেষ্টা করা। বস্তুত গবেষণাকে
নি¤œক্ত প্রকারভেদে ভাগ
করা যায়, যেমন:
- মৌলিক গবেষণা (Basic or fundamental research)
- ফলিত গবেষণা (Applied research)
- কার্যোপযোগী গবেষণা (Operational research)
- মূল্যায়ন গবেষণা (Evaluative research)
- পরীক্ষনমূলক গবেষণা (Experimental research)
- জরিপ গবেষণা (Survey research)
- মাঠপর্যায়ের
অনুসন্ধানমূলক গবেষণা (Field investigative research)
অনুসন্ধানকারীর জ্ঞানের স্থান পূরণের উদ্দেশ্যে এবং যার কিনা ভবিষ্যতে সামাজিক
প্রায়োগিক দিক থাকবে, কিন্তু বর্তমানের সমস্যা সমাধানের কোন প্রায়গিক দিক নেই তাই মৌলিক গবেষণা। (ড.
খুরশিদ আলম ২০০৩:৯৭) এক কথায় বললে যে গবেষণার দ্বারা জ্ঞানের সংগ্রহ হয় জ্ঞান
লাভের উদ্দেশ্যে তাই মৌলিক গবেষণা।(Kothari
2004:3) বস্তুত মৌলিক
গবেষণা নি¤œবর্ণিত দুটি কাজ সম্পন্ন করে।
যে সমস্যাগুলো
সমসাময়িক উদ্বিগ্নের বিষয়। অর্থাৎ ফলিত গবেষণার লক্ষ্যই হচ্ছে সেই সকল সমস্যা
সমাধান পাওয়া যা কিনা কোন সমাজ বা প্রতিষ্ঠানে ঘটছে। (Kothari 2004:3) তাত্ত্বিক গবেষণা ও ফলিত
গবেষনা পরষ্পর সম্পর্কিত, কারণ তাত্ত্বিক গবেষণা ফলিত গবেষণার পথপ্রদর্শক।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যে গবেষণা পরিচালিত হয়। ফলিত গবেষণার সাথে এর মৌলিক
পার্থক্য হল কার্যোপযোগী গবেষণা সম্পাদিত হয় ক্ষুদ্র পর্যায়ে আর ফলিত গবেষণা
সম্পাদিত হয় বৃহৎ পর্যায়ে। (ড. খুরশিদ আলম
২০০৩:৯৮)
মূল্যায়ন করার উদ্দেশ্যে। অর্থাৎ যে গবেষণা দ্বারা কোন প্রকল্পের কার্যকারিতা দেখা
হয় তাই মূল্যায়ন গবেষণা।
যখন অন্যান্য অধীন চলকের
উপর এর প্রভাব দেখা হয়। আর এখানে নিয়ন্ত্রণে রাখার অর্থ হচ্ছে ঐ চলকটিকে ধ্র”ব ধরা।
সমস্যা, আলোচিত বিষয় ও ঘটনার
বিশ্লেষণ। আর সেই বিষয়গুলো হতে পারে কখনো মতামত যাচাইয়ের ক্ষেত্রে আবার কখনো
সমস্যা ধরণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে।
তা মাঠপর্যায়ের অনুসন্ধানমূলক গবেষণা হয়।
যায়, যেমন:
বর্ণনামূলক গবেষণা বনাম
বিশ্লেষণমূলক গবেষণা (Descriptive
vs. Analytical research)
গুণগত গবেষণা বনাম পরিমাণগত
গবেষণা (Qualitative
vs. Quantitative research)
ধারণাভিত্তিক গবেষণা বনাম
সরেজমিনে গবেষণা (Conceptual
vs. empirical research)
উৎঘাটনের জন্য। এই গবেষণার লক্ষ্য হল বর্তমানে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে বর্ণনা করা। আর এর
উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল, এই গবেষণায় গবেষকের চলকের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই, কেবলমাত্র বর্ণিত হয় যা
ঘটেছে বা ঘটে চলছে। অন্যদিকে বিশ্লেষণমূলক গবেষণা হচ্ছে যেখানে আগেই ঘটনা উপস্থাপিত থাকে, আর এই গবেষণার দ্বারা সেই
ঘটনার সূক্ষ্ম মূল্যায়ন ঘটে।
গবেষণার ভিত্তি হচ্ছে সংখ্যাবাচক পর্যালোচনা। অর্থাৎ সংখ্যাবাচক পর্যালোচনার
মাধ্যমে কোন ঘটনা বা বিষয়কে ব্যাখ্যা করা। যা কিনা গুণগত গবেষণায় গুণকে পর্যালোচনা
করা হয়।
ভাবনা এবং তত্ত্ব সম্পর্কিত। এই গবেষণা সাধারণত দার্শনিক এবং চিন্তাবীদরা করে
থাকেন, যার মাধ্যমে তাঁরা
নতুন কোন তত্ত্ব বা বিদ্যমান কোন বিষয়কে ব্যাখ্যা করে থাকেন। অন্যদিকে সরেজমিনে
গবেষণা হচ্ছে পুরোটাই অভিজ্ঞতা এবং পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করে, কখনো কোন পদ্ধতি কিংবা
তত্ত্বের উপর নির্ভরশীলতা ছাড়াই। ইহা তথ্য নির্ভর গবেষণা। (Kothari 2004:3-4)
- গবেষণা সমস্যার
সংজ্ঞায়ন - সাহিত্য পর্যালোচনা
- অধ্যায়নের সামগ্রিকতা ও
একক নির্ধারণ - পুর্বানুমানের আকার গঠন
ও চলক নির্ধারণ - গবেষণা কৌশল ও পদ্ধতি
নির্ধারণ - পরিসংখ্যানিক অথবা অন্য
পদ্ধতি গ্রহণ - তথ্য সংগ্রহ
- তথ্য বিশ্লেষণ
- ব্যাখ্যা দেওয়া ও
বিবরণী (Report) লেখা
মধ্যদিয়ে জটিলতায় পড়লে যা সমাধান বা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে। আর গবেষণার প্রথম
ধাপই হচ্ছে গবেষণার জন্য সমস্যা নির্ধারণ এবং গবেষণার সমস্যাকে পরিষ্কাররূপে
বর্ণনা করা। আর এই সমস্যা কখনো গবেষকের আগ্রহ থেকে আসে আবার কখনো তত্ত্বের উপরও
নির্ভর করে। আর সমস্যার উপর নির্ভর করে গবেষণার ক্ষেত্র নির্বাচন করেন একজন গবেষক।
গবেষণা পদ্ধতি গ্রহণ করা। আর সেক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক সংবাদপত্র, সম্মেলনের আলাপ-আলোচনা,
সরকারি প্রতিবেদন,
বই, ইন্টারনেট ইত্যাদি
পর্যালোচনা করা হয়। সাধারণত দুই ধরণের সাহিত্য পর্যালোচনা করা যায়, যেমন: তত্ত্ব ও ধারণা লব্ধ
সাহিত্য এবং পূর্ব অভিজ্ঞতালব্ধ অধ্যয়নের সাহিত্যসমূহ।
অধ্যয়নের সামগ্রিকতা নির্ধারণের কারণ হচ্ছে এর মাধ্যমে বাহ্যিক আকার এবং সামাজিক এককগুলো অধ্যয়ন করা
সম্ভব হবে। যার জন্য করা হয়ে থাকে, প্রাক-অধ্যয়ন ও নমুনা নির্ধারনের মত বিষয়গুলো।
পূর্বানুমান বলা হয়। আর গবেষণার পূর্বানুমানের উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে গবেষণার
অনুসন্ধানের পথনির্দেশক সরূপ। সাধারণত একটি পূর্বানুমানের কিছু চলক থাকে, যার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন চলকের
মধ্যে যে সম্পর্ক বিদ্যমান তা দেখা হয়। আর সেই সম্পর্ক কখনো হয় ধণাত্মক, আবার কখনো ঋণাত্মক ও কখনো বা
শূন্য।
আসে তা হল কি করে আগ্রহের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। আর তখনই প্রয়োজন হয়ে পরে একজন
গবেষককে গবেষণার কৌশল ও পদ্ধতি নির্ধারণের। উদাহরণ সরূপ: গবেষণার জন্য সামগ্রিক
তথ্য আনয়নের জন্য প্রশ্ন পত্রের সরূপ তৈরি থেকে শুর” করে সাক্ষাৎকার গ্রহণের নানা
কৌশল নির্ধারণ করা ইত্যাদি।
প্রস্তুতি নিতে হয় ভিন্ন সমাজে ঢুকার জন্য। তারপর গবেষক তথ্য সংগ্রহ শুর” করেন, আর সেই তথ্য হয় দুই ধরণের।
যেমন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক
তথ্য। প্রাথমিক তথ্য হচ্ছে যা গবেষক তার গবেষণা ক্ষেত্র থেকে সংগ্রহ করেন, আর মাধ্যমিক তথ্য হচ্ছে যা
গবেষক কোন মাধ্যমিক উৎস (বই, ইন্টারনেট..) থেকে সংগ্রহ করেন।
অবলম্বন করেন একজন গবেষক তথ্যকে বিশ্লেষণ করার উদ্দেশ্যে। মাঝে মাঝে তথ্য সংগ্রহের
ধরণই ঠিক করে দেয় যে তথ্য বিশ্লেষণ কিরূপ হবে।
লেখা:
খেয়াল রাখতে হয়, আরও বিশেষ করে যখন গবেষণাটি হয় কোন স্পর্শকাতর বিষয়কে নিয়ে। যখন কোন সামাজিক
বাস্তবতা উৎঘাটনে কোন গবেষক তাঁর গবেষণা করেন, তখন উচিত সেই সমাজের গোপনীয়
বিষয় নিয়ে খেলা না করা, কারণ সেই জনগোষ্ঠী কেবলমাত্র গবেষকের কাছে অধ্যায়নের বিষয়বস্তু নয় তার থেকেও
বেশি কিছু।
- স্বেচ্ছামূলক অংশগ্রহণ।
গবেষণায় অংশগ্রহণ কখনোই জোড় করে করানো যাবে না, এবং যদি কেউ অংশগ্রহণ
করতেও আগ্রহী হয় তাহলে তাকে জানাতে তার গবেষণা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার
অধিকারও তার আছে। - গবেষণায়
অংশগ্রহণকারীদের জানানো। যারা গবেষণায় অংমগ্রহণ করবে তাদের অবশ্যই গবেষণার
প্রকৃতি এবং উদ্দেশ্যে সম্পর্কে জানবে। তাছাড়া গবেষণায় যে পদ্ধতি ব্যবহার করা
হচ্ছে, কেন তাদের এই গবেষণার সাথে জড়িত করা হচ্ছে এবং গবেষণার ফলাফল ব্যবহারের
উদ্দ্যেশ্য সম্পর্কে তাদের জানানো হবে। - গবেষণায় অংশগ্রহণ কারীর
ধারণার অবমূল্যায়ন না করা। গবেষণায় অবশ্যই অংশগ্রহণকারীর দেওয়া তথ্যের
গোপনীয়তা রক্ষ্যা করতে হবে যেন তথ্যের অবমূল্যায়ন না হয়।
গবেষণায় শুদ্ধতা। গবেষণার অবশ্যই একটা মান থাকবে যা গবেষণাকে অসততা থেকে