মেকিং লাইফ বেটার

আপনার কি কখনো মনে হয়েছে- ধনী (আর্থিকভাবে সচ্ছল) হওয়ার জন্য যা যা করার দরকার- তার জন্য খুব বেশি দেরি করে ফেলেছেন? (বয়সটা বড্ড বেশি হয়ে গেছে। কেন যে আগে থেকে শুরু করলাম না।)
এমন একটি ভয়ঙ্কর গল্প আছে যা সম্প্রতি খুব বেশি আলোচিত হয়েছে; যেটি আপনাকে উপরের প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে সহায়তা করবে।
গল্পটা এমন—-
এমন অনেক মানুষ আছে যারা সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ (ইনভেস্ট) করতে অনেক দেরি করে, সময় নেয়। কিন্তু যারা দ্রুত শুরু করে- বিশেষ করে ২০ বছর বয়সের আগেই- তারা অবসরের সময় বা বৃদ্ধ বয়সে অনেক বেশি ভালো এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন কাটায়। যারা ৩০ বছরের পরে সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ শুরু করে তাদের তুলনায়।
কিন্তু যারা ৩০ বছরের পরে শুরু করে না এবং জীবনে খুব বেশি সঞ্চয়, বিনিয়োগ কিংবা বিনিয়োগের পরিকল্পনা করে নি। তাদের কি অবস্থা হয়? তারা প্রতিদিন এক বিমর্ষ ও রুঢ় অনুভুতি নিয়ে সকালে ঘুম থেকে ওঠে। তাদের অধিকাংশই এই সিদ্ধান্তে পৌছায় যে- অবসর নেয়া তার জন্য সম্ভব না। এমনকি ৭০ বছরের পরেও তাদের দৈনন্দিন খরচ চালানোর জন্য কাজ করে যেতে হয়। আবার যারা মনে করে- বেশ তো চলছেই এ জীবন চিন্তা কি? তারা আবিস্কার করে যে- তাদের মাটির ব্যাংকটা এখনো ভরে নি। কিংবা মাটির ব্যাংকটা ভেঙ্গে দেখে যে যতোটুকু আশা করেছিল তার ৪ ভাগের একভাগ হয় নি। (their nest egg just isn’t enough.)
প্রাচীন চীনে একটা প্রবাদ আছে, “একটি গাছ লাগানোর সবচেয়ে ভালো সময় আজ থেকে ২০ বছর আগে। (যদি কোন একটি গাছ থেকে আজকেই ফল বা সেই গাছ থেকে অন্য কোন লাভ পেতে চাও- তাহলে সেই গাছটি আজ থেকে ২০ বছর আগে লাগানো উচিত।) আর ২য় ভালো সময় হচ্চে- আজ, এখনই।”
“The best time to plant a tree was 20 years ago. The second-best time is today.”
এখন যারা আমার মতো দেরি করে ফেলেছি; যাদের বয়স ৩০ বছরের বেশি। তারা কি করবে?
এখন টাইম মেশিনে চড়ে ২০ বছর বয়েসের আগে ফিরে গিয়ে তাড়াতাড়ি বিনিয়োগ করা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু, আজ, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে ভালো সময় নিজেকে আর্থিক ভাবে সচ্ছল নতুন সুযোগ রয়েছে …… নিজের সেই পুরনো হারিয়ে যাওয়া সময়কে পুনরুদ্ধার করার । (না এর সাথে লটারি জেতার কোন সম্পর্ক নেই। )
আজ, সব বয়সের লোকেরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করছে। আমি সব ধরণের অনলাইন উদ্যোক্তা, স্টক বিনিয়োগকারী এবং রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগকারীদের সফল হতে দেখেছি:
১. কর্পোরেট চাকুরীজিবী
২. গৃহিণী যাদের নুন্যতম কাজের অভিজ্ঞতা নেই
৩. যারা নিজেদের ৯-৫টা বিরক্তিকর চাকুরি থেকে পালাতে চাইছিলো
৪. একজন অবসর প্রাপ্ত ব্যাক্তি জিনি নতুন কোন আয়ের উৎস খুঁজছেন
একজন ব্যক্তির ব্যাকগ্রাউন্ড সত্যিই এই জন্য কোন ব্যাপার না ……
এমনকি আপনার ভৌগলিক অবস্থানও কোন বিষয় না।
ল্যাপটপ এবং ইন্টারনেট অ্যাক্সেসের মাধ্যমে যে কেউ এখন এটি করতে পারে।
আপনি অতীতে কতো সময় অযথা ব্যয় করেছেন সেটা কখনোই মুখ্য কোন বিষয় না। শুধু একটা জিনিসই মুখ্য- আপনি এখনই কিছু না কিছু শুরু করছেন।
তো, আপনি কোথায়, কখন আপনার গাছ লাগাতে যাচ্ছেন?
মেকিং লাইফ বেটার,
রবার্ট কিয়োসাকি
(রবার্ট কিয়োসাকি’র লেখা থেকে ভাবানুবাদ)

ভুল বা সঠিক সিদ্ধান্ত

জীবনে ভুল বা সঠিক সিদ্ধান্ত বলে কিছু নেই।
এটা শুধুই সিদ্ধান্ত।
আবেগ আর বিবেকের মিশেলে সেই সময়ে যেটাকে উপযুক্ত মনে হবে সেটাকেই অনুসরণ করা উচিত।
তবে সব সময় মাথায় রাখতে সিদ্ধান্ত নেয়ার পর আর বিকল্প ভাবা যাবে না, পস্তানো যাবে না, আফসোস করা যাবে না।
সিদ্ধান্তটিকে মেনে নিয়ে মনে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই উত্তম।
মনে রাখতে হবে প্রতিটি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সুযোগ এবং ঝুঁকি দুটোই রয়েছে। এবং ঝুঁকি এবং সুযোগের মধ্যেকার সম্পর্ক ব্যস্তনুপাতিক। সুযোগ যতো বেশি ঝুঁকিও ততো বেশি।
আজ যেটা এই সময়ে, এই অবস্থানে দাঁড়িয়ে সঠিক মনে হচ্ছে – সেটা ভুল হতে পারে ৪ টি বিষয়ের ভিত্তিতে –
১. ব্যক্তি বিশেষে- আমার কাছে যেটা ভুল, আপনার কাছে সেটাই সঠিক
২. সময় পরিবর্তনে- আজকে যেটা সঠিক, সেটাই কাল ভুল প্রমানিত হবে
৩. স্থান বিশেষে- যেটা ঢাকার ক্ষেত্রে ভুল, সেটাই গ্রামে সঠিক
৪. অভিজ্ঞতা / দৃষ্টিভঙ্গির বিচারে – আমার কাছে যা সঠিক তা আমার বাবার কাছে নিতান্তই ছেলে মামুষি
তাই সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে নিজের সাথে বোঝাপড়াটা খুবই জরুরী। আমরা পরামর্শ নিতেই পারি- বিকল্প ভাবনার ক্ষেত্রে। তবে দিন শেষে সিদ্ধান্ত আমারই।
ঝুঁকি এবং সুযোগ নিজেরই।
তাই চোখ বন্ধ করে, মন এবং মস্তিষ্ককে শান্ত রেখে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা উচিত।

নিজেকেই ভালোবাসো

নিজেকে ভালোবাসতে পারাটাও একটা আর্ট। নিজেকে ভালোবাসতে হয় প্রথম প্রেমের মতো। প্রথম প্রেমিকার মতো, খেয়াল রাখতে হয় আদরে আবেগে। প্রেমিকার সকল ভালোলাগা মন্দলাগা বিষয়গুলো যেমন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে হয়। তেমন করেই জানতে হয় নিজের ভালোলাগা, খারাপ লাগা, পছন্দ-অপছন্দ।

 

নিজেকে ভালোবাসা মানে নার্সিস্ট হওয়া না। নার্সিস্ট তো শুধু নিজের বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে। কিন্তু নিজেকে ভালোবাসা তার চেয়ে বেশি কিছু। নিজের বাহ্যিক সৌন্দর্য এর সাথে মনের এবং আভ্যন্তরীন অঙ্গ প্রতঙ্গের একটা সুন্দর সিনক্রোনাইজেশনই হলো নিজেকে ভালোবাসা।

 

ভালবেসে নিজেকে উপহার যেমন দিতে হয়। তেমনি শাসন করতে হয় খুব বেশি ইমোশনাল হলে। প্রিয়ার অভিমান ভাঙানোর মতো করে নিজের জড়তা এবং শংকাগুলোকেও ভেঙে চুরমার করে দিতে হয় সু-কৌশলে। নিজেকে আস্তে আস্তে প্রকাশ করতে সমাজের সকলের লাছে নিজের প্রেমিকার মতো করে।

 

নিজেকে ভালোবাসতে জানাটাও একট দক্ষতা। প্রেমিকার শারীরিক সৌন্দর্যের প্রতি যেমন থাকে আকর্ষণ, মোহ টান। তেমন করে নিজের শরীরটাকে চেনাটাও খুব জরুরী। শরীরের খুঁটিনাটি প্রতিটি ইঞ্চি ইঞ্চি চিনে রাখতে হয়। তাদেরকে তোষামোদ করতে হয়। শানিত করতে হয়, চকচকে ধারালো। তবেই সে হয়ে ওঠে আকাংখিত।

 

শরীরের মতো মনটাও খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ। মনটা যদি বিশৃঙ্খল থাকে, গোমড়ামুখো হয়ে থাকে প্রেমীর মুখের মতো- তাহলে শরীর কিংবা বাহ্যিক সৌন্দর্য কোনটায় সঠিকভাবে কাজ করবে না। তাই মনটাকে সুস্থ্য রাখা, শান্ত রাখাটাও কম জরুরী নয়।

 

নিজেকে ভালোবাসার মধ্য দিয়েই খুঁজে পাওয়া যায় নিজের অস্তিত্ব। খুঁজে পাওয়া যায় জীবনের অর্থ। জীবন হয়ে ওঠে আনন্দময়। ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে নিজের জীবন। নিজের চারপাশ। তখন চারপাশের মানুষগুলোও আপনাকে ভালোবাসতে শুরু করে। সফলতা ধরা দেয় নিজের তালুতে। আর নিজে হয়ে ওঠা যায় একজন আনন্দময় মানুষ হিসেবে।

 

 

০৯/০৪/২০২১

কক্সবাজার

 

অপচয়

বউকে কইলাম  একটার বেশি জুতা কেনা, বেশি বেশি জামা-প্যান্ট কেনা অপচয়।

জবাবে বউ কইলো- তুমি যে বই কিনে জমিয়ে রাখো- সেগুলো কি অপচয় না?

চুপ করেছিলাম,  এখনো জবাব খুঁজে পাই নি কি উত্তর দেবো।

 

কোনটা অপচয় আর কোনটা না সেটা নতুন করে ভাবাচ্ছে-

প্রয়োজনের অতিরিক্ত সবকিছুই কি অপচয় না?

কিংবা যে জিনিসের যথোপযুক্ত ব্যবহার না হয়ে – শুধু শুধু পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে- সবকিছুই কি অপচয় না?

অথবা একটা জিনিস বা উপাদনের ব্যবহারের কি কোন শেষ আছে? তাহলে আমরা যে ব্যবহার করতে পারছি না সেগুলো কি অপচয় না?

বা কি ক্ষতি অপচয় হলেই বা? আমার আছে আমি খাবো কি নষ্ট করবো- তা আমার একেবারই নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়। আমার তো কোন ক্ষতি হচ্ছে না অপচয়ে। তাই আমি কেন ভাববো অপচয় নিয়ে।

আবার আদৌ কি কোন জিনিষ অপচয় হয়? এটা তো প্রকৃতির নিয়ম- আমাদের অনুষ্ঠানে খাবার নষ্ট হয় বলেই ফকির মিসকিন খেতে পারে। আর যা খাওয়ার উপযুক্ত থাকে না- সেগুলো কুকুর, বিড়াল, হাঁস-মুরগি, মাছ- পাখির খাবার হয়। এর পরেও অবশিষ্টাংশ কেঁচো-তেলাপোকাসহ অন্যান্য কীটের খাবার হয়ে- সার হয়ে প্রকৃতিতে মিশে যায়। যদি অপচয় নাই হয় তাহলে এই চক্র চলবে কিভাবে?

 

আমরা বেশি বেশি পোষাক কিনি বলেই পোষাক শ্রমিকের আয় হয়- জীবন জীবিকা চলে। আবার শীতার্ত এবং দরিদ্র মানুষ পুরনো পোষাক পায়।

তাইলে কি অপচয় ভালো? কিংবা প্রয়োজনের সীমানার শেষ কোথায়? আমার বাবার বছরে ২ টা জামার বেশি লাগে না। আমার তো ১০টাতেও চলে না।

অন্যদিকে আমি হয়তো খাবার নষ্ট করি না।  কেউ নষ্ট করলে কষ্ট লাগে, রাগ হয়। কিন্ত সেই আমি হয়তো বউ কিনে না পড়ে সাজিয়ে রাখি।

তবে অপচয় নিয়ে আমি ভাবি কারণ – এই পৃথিবীর সম্পদ সীমিত। আপনার-আমার হয়তো টাকা আছে- চাইলেই এক প্লেট ভাত নষ্ট করতেই পারি, বা একটা জামা বেশি কিনে আলমারিতে সাজিয়ে রাখতেই পারি। কিন্তু জানি কি এই এক প্লেট ভাত বা একটা জামা তৈরি করতে কতো লিটার করে মিঠা পানি খরচ হয়েছে? আর মিঠা পানি এতোটাই সীমিত যে- এটা নিয়ে কষ্ট আমি জন্ম থেকেই দেখে আসছি। তাই চাইলে আমার প্রকৃতির সীমিত সম্পদ অপচয় করে নষ্ট/ধ্বংস করার অধিকার নেই।

না হলে একদিন হয়তে ভাত কিংবা পোষাক জুটবে কিন্তু তৃষ্ণা মেটানো পানি জুটবে না। তখন তো আর ভাত ও পোষাক পান করে তৃষ্ণা  মিটবে না।

 

১২/০৬/২০২১

শিকদার পাড়া, কক্সবাজার