মানুষ তার শত্রু সমান বড়

কজন সত্যিকারের নায়ক বা হিরো কেবল তার গুণাবলির জন্যই বড় নয়; বরং তার প্রতিপক্ষ বা শত্রুর শক্তিমত্তাও তার বীরত্বের মাপকাঠি নির্ধারণ করে। যার শত্রু যত বড়, তার বীরত্বও তত বড় পরিসরে বিস্তৃত হয়। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, প্রতিটি মহান বিপ্লব, প্রতিটি ঐতিহাসিক সংগ্রাম শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপরীতে দাঁড়িয়েই মহিমান্বিত হয়েছে।

এ কারণেই একজন বিপ্লবীর জন্য তার শত্রু বা প্রতিপক্ষ বেছে নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। যদি প্রতিপক্ষ দুর্বল হয়, তবে সেই লড়াইয়ের গুরুত্ব ও গভীরতা কমে যায়। কিন্তু যদি শত্রু প্রবল হয়, তবে সেই লড়াইও একটি বৃহৎ মাত্রা পায় এবং ইতিহাসের পাতায় বিশেষভাবে স্থান পায়।

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান বা বিপ্লবকে বড় করে দেখার মূল কারণ হলো, এটি যে শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে পরিচালিত হচ্ছে তা অত্যন্ত শক্তিশালী, সুসংগঠিত এবং দীর্ঘমেয়াদী ক্ষমতাধারী। আওয়ামী লীগ শাসনব্যবস্থা এবং এর একচ্ছত্র নেতৃত্বে থাকা শেখ হাসিনা এই বিপ্লবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা প্রধান প্রতিপক্ষ। এমনকি আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার হওয়া নেতাদের বক্তব্যেও প্রকাশিত হয়েছে যে, তারা শেখ হাসিনার একনায়কতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়েছেন।

একজন শাসকের প্রকৃত শক্তি তার বিরোধীদের দ্বারা নির্ধারিত হয়। শেখ হাসিনা দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রয়েছেন এবং তার শাসনব্যবস্থা অত্যন্ত কঠোরভাবে বিরোধীদের দমন করেছে। এ কারণেই ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান এতটা বিস্তৃত হয়েছে এবং বড় রূপ নিয়েছে। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈপরীত্য রয়েছে—এই বিপ্লবের একজন প্রধান নায়ক নেই।

ইতিহাসে অনেক বিপ্লবে একজন নির্দিষ্ট নেতা বা নায়কের নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছে, যিনি প্রতিপক্ষের সমতুল্য ছিলেন বা তার চেয়েও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। কিন্তু ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। এখানে কোনো একক নায়ক নেই, বরং অনেকগুলো স্টেকহোল্ডার রয়েছে। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের মধ্যে বিভক্ত। ফলে ছয় মাস পরেও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব অব্যাহত রয়েছে—কে আসলে বড় নায়ক, কারা প্রকৃত স্টেকহোল্ডার?

তবে একথা অনস্বীকার্য যে, শেখ হাসিনার মতো ক্ষমতাধর প্রতিপক্ষের সমতুল্য কোনো নায়ক এখনও আবির্ভূত হয়নি। এই বিপ্লবের অংশগ্রহণকারীরা হয়তো এককভাবে আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের শক্তির সমকক্ষ হতে পারেনি, তবে তারা সম্মিলিতভাবে একটি গণবিপ্লবের চেহারা গড়ে তুলেছে। এ কারণেই একে গণঅভ্যুত্থান বলা হচ্ছে—এটি শুধুমাত্র কোনো নির্দিষ্ট দলের নয়, বরং সাধারণ মানুষের অভ্যুত্থান।

তবে, আজকের আলোচনার মূল উপজীব্য এই সমসাময়িক রাজনৈতিক পটভূমি নয়। বরং বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা যখন দেখি, তখন উপলব্ধি করি—একজন মানুষের মূল্যায়ন অনেকাংশে নির্ভর করে তার প্রতিপক্ষ বা চ্যালেঞ্জের মাত্রার ওপর। ব্যক্তি, সমাজ কিংবা জাতি—যার বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তার শক্তিমত্তা যত বড়, সেই সংগ্রামও তত মহৎ হয়ে ওঠে। তাই একজন বীরের সঠিক পরিচয় নির্ধারিত হয় তার শত্রুর পরিধির মাধ্যমে।

তাই আমাদের বন্ধুর চেয়ে- কে আমার শত্রু সেটা চিনে নেয়া জরুরী। আমার শত্রু হয় যদি – বাসার দারোয়ান, কাজের বুয়া, পাড়ার চাচা, সেই কমন আত্মীয়- যে সবকিছুতেই শুধু হিংসা করে আর ত্রুটি ধরে। কিংবা আমাদের ননদ- শাশুড়ি কিংবা প্রতিবেশি চাচা যে পায়ে লেগে ঝগড়া করে। তবে আমাদের অর্জন হবে তেমনটাই। অন্যদিকে আমাদের শত্রু বা প্রতিদ্বন্দ্বী যদি এমন হয় যে- চিন্তা, চেতনায়, কৌশলে কিংবা অর্থে-বিত্তে আমার চেয়ে যোজন যোজন দূর; তবে আমাদের প্রস্তুতি, কৌশল এবং বিজয় টা হবে – অনেক বড় কালোত্তীর্ণ। Our victory will be larger than life.

আমাদের সেই গল্প-উপন্যাস বা সিনেমার হিরো/নায়কের (Protagonist) কথাই বেশি মনে পড়ে- যে গল্প, উপন্যাস, সিনেমার ভিলেন (Antagonist) বা খল চরিত্র যতো বড় আর বিশাল। শোলে সিনেমা তাই গাব্বার চরিত্র হয়ে ওঠে অন্যতম। রামায়ণে তাই রাবণ; বিষাদ-সিন্ধুতে তাই এজিদ চিরস্মরণীয়। ইতিহাসে মুখ্য হয়ে ওঠে হিটলার।

সুতরাং কে আমার শত্রু হবে? কে হবে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী- সেটা চিহ্নিত করা অনেক জরুরী। অথবা এমন কাউকে বেঁছে নেয়া- যে আমার বেঞ্চমার্ক হবে। যাকে আমরা অতিক্রম করবো। তবেই আমার আমি শানিত হবো; দক্ষ হয়ে উঠবো।

কিন্তু আমরা করি উল্টোটা। আমরা আমাদের প্রতিদিনের এনার্জি আর মেধা নষ্ট করি- অফিসের কাজ ফাঁকি দেয়া কলিগের সাথে লড়াইয়ে। বাসের কন্ট্রাক্টর, রিকশাওয়ালা, সব্জিওয়ালা র সাথে অহেতুক ঝগড়া করে। আমাদের এনার্জি ব্যায় করি এমন ছোট-ছোট কাজে যা- আমাদেরকে বড় হতে বাধাঁ দেয়। আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি এমন ছোট ছোট শ্ত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে করতে।

আমাদের ইগোতে লাগে আমার আশেপাশের গুরুত্বহীন মানুশগুলোরে অহেতুক মন্তব্যে। মাঝে মাঝে আমরা হতাশ হয়ে পড়ি আমার পাশের মানুষটি যখন আমার চেয়ে ভালো করতে থাকে। কিংবা মন খারাপ করি- এমন কোন মানুষের কটু কথায়- যাকে চিনি না; জীবনে আর কক্ষনো দেখা হবে কি না জানা নেই। সেই মানুষটার কথায় আদৌ কি কোন কিছু যায় আসে?

তাহলে সমাধান কী? সহজ কথায়- ইগ্নোর করা। পাত্তা না দেয়া। ফোকাস ঠিক রাখা। আমাদের তার কথারই গুরুত্ব দেয়া উচিৎ- যে আমার জীবনে কোন ইমপ্যাক্ট রাখে বা রাখবে। আমাদের এমন বিষয়ের প্রতি মনযোগ দেয়া উচিৎ- যেটা অধিক গুরুতবপুর্ণ। বাসায় এসে চাল-তেল-নুনের দাম বৃদ্ধি নিয়ে বউয়ের সাথে রাগারাগি না করে কিভাবে এই ক্রমবর্ধ্মান মুল্যস্ফীতির সাথে পাল্লা দেয়া যায়- সেটা নিয়েই পরামর্শ করা উচিৎ পার্টনারের সাথে। কোন দক্ষতা বৃদ্ধি করা যায় কিনা? নতুন কোন বিজনেস শুরু করা যায় কিনা? কিংবা বিশ্লেষণ করা উচিত – আয় আর ব্যয়ের। কিভাবে খরচ কমানো যায়- এমন কোন খাত খুঁজে বের করা।

অন্যদিকে আমরা যখন কোন প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হই- তখন বিরক্ত হই, দমে যাই, পালিয়ে যাতে চাই। ভাবি- আমার সাথেই কেন বার বার এমনটাই হয়? আমি কি কোন ভাবে অবহেলা কিংবা বঞ্চনার শিকার হচ্ছি? বরং আমাদের ভাবো উচিৎ- এই পরিস্থিতি আমাকে আরো বেশি- পরিশুদ্ধ করে তুলবে। যখনই আমরা প্রতিকূল পরিবেশে পড়ি; নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হই- সেটাকে সমাধানের মাধ্যমে আরো দক্ষ হয়ে উঠি। নিজেকে আরো পরিশীলিত করা যায়।

তাই সেলিব্রেট করা উচিৎ- আমাদের দুঃসময়কে, কঠিন মুহুর্তকে। কেননা এই মুহুর্ত আর সময়কে অতিক্রম করেই আমরা আমাদের ব্যাক্তিগত জীবনে বিজয়ী হই। একইভাবে আমাদের শত্রুকে/প্রতিদ্বন্দ্বীকেও মনে রাখা দরকার। তাদেরকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলা দরকার- Thank you! Your challenges make my journey remarkable.

তাই বন্ধুর চেয়ে শত্রু গুরুত্বপূর্ণ। তাই বড় বন্ধু নির্বাচনের চেয়ে বড় শত্রু বাছাই করা জরুরী। বন্ধুর সহায়তা দুর্বল করে তোলে আর শত্রুর আঘাত দক্ষ আর শানিত করে তোলে। তাই কে আমার শত্রু কিংবা আমি কাকে শত্রু বা প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করবো- সেটা গুরুত্বপুর্ণ।

আমার যত দোষ – ‘সম্পর্ক-কানা’

আমি সত্যি বড়ই ক্লান্ত। ঘর- বাহির সামলাইতে সামলাইতে। ভাল হওয়ার এক ব্যর্থ চেষ্টায় প্রতিদিন হয়ে যাচ্ছি খারাপ। কারো না কারো কাছে।
ভাল ছেলে, ভাল ছাত্র, ভাল মানুষ, ভাল বন্ধু, ভাল কর্মী, ভাল সন্তান, ভাল স্বামী হতে গিয়ে আমি আজ বড়ই ক্লান্ত।
খুব খারাপ হতে মন চায়। একদম পুরো দস্তুর এক খারাপ ছেলে। এত খারাপ যেন কেউ আমার কাছ থেকে ভাল কিছু আশা না করে।
বন্ধুরা অভিমান করে তাদের কেন খোঁজ নেই না। বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন তাদের একই অনুযোগ, শুভাকাঙ্ক্ষী তো দিন দিন কমতির পথে। আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরাও পর্যন্ত এই অভিযোগ করতে থাকে।
কাজের সূত্রে প্রতিদিন ২/১ জনের সাথে পরিচয় ঘটে। তাদের আথিতেয়তা আর ভালবাসায় প্রতিদিন ঋণী হচ্ছি- দিনকে দিনকে।তাদেরও ঠিক মতো খোঁজ নেয়া হয়ে ওঠে না।
আমি আসলে পেরে উঠিনা। আমার হয়তো ধ্যাতে নেই।আমি বেশ সম্পর্ক কানা। আমি কোন সম্পর্ক ধরে রাখতে পারি না বা মেইনটেইন করতে পারি না।
কিংবা আমি মানুষের ভালবাসার মুল্য দিতে পারি না। কত মানুষ ভালবাসার ঋণে আবদ্ধ করে রেখেছে।কিন্তু তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হয়ে ওঠে না। এই মুহূর্তে মনে পড়ছে তিন জন বন্ধুর মায়ের কথা- রাজু, জীবন আর সাগরের। তাদের তিন জনের সাথে আমার সম্পর্ক অল্প সময়ের। কিন্তু সেই অল্প সময়ের মধ্যেই এই তিনজন অনেক আপন করে নিয়েছেন। কিন্তু আমি এক হতভাগা পালিয়ে বেড়াই তাদের ভালবাসার বাঁধন থেকে। অসম্ভব এক চুম্বকীয় শক্তি আকর্ষণ করি তাদের প্রতি। আবার ছুটে চলে আসি দূরে। কেন- তার উত্তর নেই। তবে সত্যি বলছি- আমিও আপনাদের খুব ভালবাসি এবং মিস করি। কিন্তু আপনাদের ভালবাসায় বিলীন হয়ে জাওয়ার ভয়ে হয়তো পালিয়ে বেড়াই নিজের থেকে আরো যোজন-যোজন দূরে।
অনেকটা কাঁকতলিয় ভাবে পরিচিত হয়েছিলাম একজন অবসর প্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার সাথে। তিনিও আমাকে বেশ ভালবাসলেন। আমি তাকে আমার এই ‘সম্পর্ক-কানা’ র কথা খোলাখুলি বললাম। তিনি আমাকে ভুল বুঝলেন। সকল ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলেন। আমি হয়তো তাকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছিলাম।
আমার সাথে খুব ভাল যোগাযোগ নেই আমার কর্মজীবনের শেষ তিন জন সুপারভাইজারের সাথে। হয়তো আমার দিক থেকে কোন ত্রুটি ছিল।তবে এতটুকু বলতে পারি- যখন একসাথে কাজ করতাম তখন কারোর সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটেনি।
আমি এক চরম ‘সম্পর্ক-কানা’।
মানিকগঞ্জ, মার্চ ১৩, ২০১৬

মেকিং লাইফ বেটার

আপনার কি কখনো মনে হয়েছে- ধনী (আর্থিকভাবে সচ্ছল) হওয়ার জন্য যা যা করার দরকার- তার জন্য খুব বেশি দেরি করে ফেলেছেন? (বয়সটা বড্ড বেশি হয়ে গেছে। কেন যে আগে থেকে শুরু করলাম না।)
এমন একটি ভয়ঙ্কর গল্প আছে যা সম্প্রতি খুব বেশি আলোচিত হয়েছে; যেটি আপনাকে উপরের প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে সহায়তা করবে।
গল্পটা এমন—-
এমন অনেক মানুষ আছে যারা সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ (ইনভেস্ট) করতে অনেক দেরি করে, সময় নেয়। কিন্তু যারা দ্রুত শুরু করে- বিশেষ করে ২০ বছর বয়সের আগেই- তারা অবসরের সময় বা বৃদ্ধ বয়সে অনেক বেশি ভালো এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন কাটায়। যারা ৩০ বছরের পরে সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ শুরু করে তাদের তুলনায়।
কিন্তু যারা ৩০ বছরের পরে শুরু করে না এবং জীবনে খুব বেশি সঞ্চয়, বিনিয়োগ কিংবা বিনিয়োগের পরিকল্পনা করে নি। তাদের কি অবস্থা হয়? তারা প্রতিদিন এক বিমর্ষ ও রুঢ় অনুভুতি নিয়ে সকালে ঘুম থেকে ওঠে। তাদের অধিকাংশই এই সিদ্ধান্তে পৌছায় যে- অবসর নেয়া তার জন্য সম্ভব না। এমনকি ৭০ বছরের পরেও তাদের দৈনন্দিন খরচ চালানোর জন্য কাজ করে যেতে হয়। আবার যারা মনে করে- বেশ তো চলছেই এ জীবন চিন্তা কি? তারা আবিস্কার করে যে- তাদের মাটির ব্যাংকটা এখনো ভরে নি। কিংবা মাটির ব্যাংকটা ভেঙ্গে দেখে যে যতোটুকু আশা করেছিল তার ৪ ভাগের একভাগ হয় নি। (their nest egg just isn’t enough.)
প্রাচীন চীনে একটা প্রবাদ আছে, “একটি গাছ লাগানোর সবচেয়ে ভালো সময় আজ থেকে ২০ বছর আগে। (যদি কোন একটি গাছ থেকে আজকেই ফল বা সেই গাছ থেকে অন্য কোন লাভ পেতে চাও- তাহলে সেই গাছটি আজ থেকে ২০ বছর আগে লাগানো উচিত।) আর ২য় ভালো সময় হচ্চে- আজ, এখনই।”
“The best time to plant a tree was 20 years ago. The second-best time is today.”
এখন যারা আমার মতো দেরি করে ফেলেছি; যাদের বয়স ৩০ বছরের বেশি। তারা কি করবে?
এখন টাইম মেশিনে চড়ে ২০ বছর বয়েসের আগে ফিরে গিয়ে তাড়াতাড়ি বিনিয়োগ করা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু, আজ, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে ভালো সময় নিজেকে আর্থিক ভাবে সচ্ছল নতুন সুযোগ রয়েছে …… নিজের সেই পুরনো হারিয়ে যাওয়া সময়কে পুনরুদ্ধার করার । (না এর সাথে লটারি জেতার কোন সম্পর্ক নেই। )
আজ, সব বয়সের লোকেরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করছে। আমি সব ধরণের অনলাইন উদ্যোক্তা, স্টক বিনিয়োগকারী এবং রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগকারীদের সফল হতে দেখেছি:
১. কর্পোরেট চাকুরীজিবী
২. গৃহিণী যাদের নুন্যতম কাজের অভিজ্ঞতা নেই
৩. যারা নিজেদের ৯-৫টা বিরক্তিকর চাকুরি থেকে পালাতে চাইছিলো
৪. একজন অবসর প্রাপ্ত ব্যাক্তি জিনি নতুন কোন আয়ের উৎস খুঁজছেন
একজন ব্যক্তির ব্যাকগ্রাউন্ড সত্যিই এই জন্য কোন ব্যাপার না ……
এমনকি আপনার ভৌগলিক অবস্থানও কোন বিষয় না।
ল্যাপটপ এবং ইন্টারনেট অ্যাক্সেসের মাধ্যমে যে কেউ এখন এটি করতে পারে।
আপনি অতীতে কতো সময় অযথা ব্যয় করেছেন সেটা কখনোই মুখ্য কোন বিষয় না। শুধু একটা জিনিসই মুখ্য- আপনি এখনই কিছু না কিছু শুরু করছেন।
তো, আপনি কোথায়, কখন আপনার গাছ লাগাতে যাচ্ছেন?
মেকিং লাইফ বেটার,
রবার্ট কিয়োসাকি
(রবার্ট কিয়োসাকি’র লেখা থেকে ভাবানুবাদ)

ভুল বা সঠিক সিদ্ধান্ত

জীবনে ভুল বা সঠিক সিদ্ধান্ত বলে কিছু নেই।
এটা শুধুই সিদ্ধান্ত।
আবেগ আর বিবেকের মিশেলে সেই সময়ে যেটাকে উপযুক্ত মনে হবে সেটাকেই অনুসরণ করা উচিত।
তবে সব সময় মাথায় রাখতে সিদ্ধান্ত নেয়ার পর আর বিকল্প ভাবা যাবে না, পস্তানো যাবে না, আফসোস করা যাবে না।
সিদ্ধান্তটিকে মেনে নিয়ে মনে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই উত্তম।
মনে রাখতে হবে প্রতিটি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সুযোগ এবং ঝুঁকি দুটোই রয়েছে। এবং ঝুঁকি এবং সুযোগের মধ্যেকার সম্পর্ক ব্যস্তনুপাতিক। সুযোগ যতো বেশি ঝুঁকিও ততো বেশি।
আজ যেটা এই সময়ে, এই অবস্থানে দাঁড়িয়ে সঠিক মনে হচ্ছে – সেটা ভুল হতে পারে ৪ টি বিষয়ের ভিত্তিতে –
১. ব্যক্তি বিশেষে- আমার কাছে যেটা ভুল, আপনার কাছে সেটাই সঠিক
২. সময় পরিবর্তনে- আজকে যেটা সঠিক, সেটাই কাল ভুল প্রমানিত হবে
৩. স্থান বিশেষে- যেটা ঢাকার ক্ষেত্রে ভুল, সেটাই গ্রামে সঠিক
৪. অভিজ্ঞতা / দৃষ্টিভঙ্গির বিচারে – আমার কাছে যা সঠিক তা আমার বাবার কাছে নিতান্তই ছেলে মামুষি
তাই সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে নিজের সাথে বোঝাপড়াটা খুবই জরুরী। আমরা পরামর্শ নিতেই পারি- বিকল্প ভাবনার ক্ষেত্রে। তবে দিন শেষে সিদ্ধান্ত আমারই।
ঝুঁকি এবং সুযোগ নিজেরই।
তাই চোখ বন্ধ করে, মন এবং মস্তিষ্ককে শান্ত রেখে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা উচিত।

নিজেকেই ভালোবাসো

নিজেকে ভালোবাসতে পারাটাও একটা আর্ট। নিজেকে ভালোবাসতে হয় প্রথম প্রেমের মতো। প্রথম প্রেমিকার মতো, খেয়াল রাখতে হয় আদরে আবেগে। প্রেমিকার সকল ভালোলাগা মন্দলাগা বিষয়গুলো যেমন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে হয়। তেমন করেই জানতে হয় নিজের ভালোলাগা, খারাপ লাগা, পছন্দ-অপছন্দ।

 

নিজেকে ভালোবাসা মানে নার্সিস্ট হওয়া না। নার্সিস্ট তো শুধু নিজের বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে। কিন্তু নিজেকে ভালোবাসা তার চেয়ে বেশি কিছু। নিজের বাহ্যিক সৌন্দর্য এর সাথে মনের এবং আভ্যন্তরীন অঙ্গ প্রতঙ্গের একটা সুন্দর সিনক্রোনাইজেশনই হলো নিজেকে ভালোবাসা।

 

ভালবেসে নিজেকে উপহার যেমন দিতে হয়। তেমনি শাসন করতে হয় খুব বেশি ইমোশনাল হলে। প্রিয়ার অভিমান ভাঙানোর মতো করে নিজের জড়তা এবং শংকাগুলোকেও ভেঙে চুরমার করে দিতে হয় সু-কৌশলে। নিজেকে আস্তে আস্তে প্রকাশ করতে সমাজের সকলের লাছে নিজের প্রেমিকার মতো করে।

 

নিজেকে ভালোবাসতে জানাটাও একট দক্ষতা। প্রেমিকার শারীরিক সৌন্দর্যের প্রতি যেমন থাকে আকর্ষণ, মোহ টান। তেমন করে নিজের শরীরটাকে চেনাটাও খুব জরুরী। শরীরের খুঁটিনাটি প্রতিটি ইঞ্চি ইঞ্চি চিনে রাখতে হয়। তাদেরকে তোষামোদ করতে হয়। শানিত করতে হয়, চকচকে ধারালো। তবেই সে হয়ে ওঠে আকাংখিত।

 

শরীরের মতো মনটাও খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ। মনটা যদি বিশৃঙ্খল থাকে, গোমড়ামুখো হয়ে থাকে প্রেমীর মুখের মতো- তাহলে শরীর কিংবা বাহ্যিক সৌন্দর্য কোনটায় সঠিকভাবে কাজ করবে না। তাই মনটাকে সুস্থ্য রাখা, শান্ত রাখাটাও কম জরুরী নয়।

 

নিজেকে ভালোবাসার মধ্য দিয়েই খুঁজে পাওয়া যায় নিজের অস্তিত্ব। খুঁজে পাওয়া যায় জীবনের অর্থ। জীবন হয়ে ওঠে আনন্দময়। ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে নিজের জীবন। নিজের চারপাশ। তখন চারপাশের মানুষগুলোও আপনাকে ভালোবাসতে শুরু করে। সফলতা ধরা দেয় নিজের তালুতে। আর নিজে হয়ে ওঠা যায় একজন আনন্দময় মানুষ হিসেবে।

 

 

০৯/০৪/২০২১

কক্সবাজার

 

অপচয়

বউকে কইলাম  একটার বেশি জুতা কেনা, বেশি বেশি জামা-প্যান্ট কেনা অপচয়।

জবাবে বউ কইলো- তুমি যে বই কিনে জমিয়ে রাখো- সেগুলো কি অপচয় না?

চুপ করেছিলাম,  এখনো জবাব খুঁজে পাই নি কি উত্তর দেবো।

 

কোনটা অপচয় আর কোনটা না সেটা নতুন করে ভাবাচ্ছে-

প্রয়োজনের অতিরিক্ত সবকিছুই কি অপচয় না?

কিংবা যে জিনিসের যথোপযুক্ত ব্যবহার না হয়ে – শুধু শুধু পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে- সবকিছুই কি অপচয় না?

অথবা একটা জিনিস বা উপাদনের ব্যবহারের কি কোন শেষ আছে? তাহলে আমরা যে ব্যবহার করতে পারছি না সেগুলো কি অপচয় না?

বা কি ক্ষতি অপচয় হলেই বা? আমার আছে আমি খাবো কি নষ্ট করবো- তা আমার একেবারই নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়। আমার তো কোন ক্ষতি হচ্ছে না অপচয়ে। তাই আমি কেন ভাববো অপচয় নিয়ে।

আবার আদৌ কি কোন জিনিষ অপচয় হয়? এটা তো প্রকৃতির নিয়ম- আমাদের অনুষ্ঠানে খাবার নষ্ট হয় বলেই ফকির মিসকিন খেতে পারে। আর যা খাওয়ার উপযুক্ত থাকে না- সেগুলো কুকুর, বিড়াল, হাঁস-মুরগি, মাছ- পাখির খাবার হয়। এর পরেও অবশিষ্টাংশ কেঁচো-তেলাপোকাসহ অন্যান্য কীটের খাবার হয়ে- সার হয়ে প্রকৃতিতে মিশে যায়। যদি অপচয় নাই হয় তাহলে এই চক্র চলবে কিভাবে?

 

আমরা বেশি বেশি পোষাক কিনি বলেই পোষাক শ্রমিকের আয় হয়- জীবন জীবিকা চলে। আবার শীতার্ত এবং দরিদ্র মানুষ পুরনো পোষাক পায়।

তাইলে কি অপচয় ভালো? কিংবা প্রয়োজনের সীমানার শেষ কোথায়? আমার বাবার বছরে ২ টা জামার বেশি লাগে না। আমার তো ১০টাতেও চলে না।

অন্যদিকে আমি হয়তো খাবার নষ্ট করি না।  কেউ নষ্ট করলে কষ্ট লাগে, রাগ হয়। কিন্ত সেই আমি হয়তো বউ কিনে না পড়ে সাজিয়ে রাখি।

তবে অপচয় নিয়ে আমি ভাবি কারণ – এই পৃথিবীর সম্পদ সীমিত। আপনার-আমার হয়তো টাকা আছে- চাইলেই এক প্লেট ভাত নষ্ট করতেই পারি, বা একটা জামা বেশি কিনে আলমারিতে সাজিয়ে রাখতেই পারি। কিন্তু জানি কি এই এক প্লেট ভাত বা একটা জামা তৈরি করতে কতো লিটার করে মিঠা পানি খরচ হয়েছে? আর মিঠা পানি এতোটাই সীমিত যে- এটা নিয়ে কষ্ট আমি জন্ম থেকেই দেখে আসছি। তাই চাইলে আমার প্রকৃতির সীমিত সম্পদ অপচয় করে নষ্ট/ধ্বংস করার অধিকার নেই।

না হলে একদিন হয়তে ভাত কিংবা পোষাক জুটবে কিন্তু তৃষ্ণা মেটানো পানি জুটবে না। তখন তো আর ভাত ও পোষাক পান করে তৃষ্ণা  মিটবে না।

 

১২/০৬/২০২১

শিকদার পাড়া, কক্সবাজার