ভুল বা সঠিক সিদ্ধান্ত
নিজেকেই ভালোবাসো
নিজেকে ভালোবাসতে পারাটাও একটা আর্ট। নিজেকে ভালোবাসতে হয় প্রথম প্রেমের মতো। প্রথম প্রেমিকার মতো, খেয়াল রাখতে হয় আদরে আবেগে। প্রেমিকার সকল ভালোলাগা মন্দলাগা বিষয়গুলো যেমন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে হয়। তেমন করেই জানতে হয় নিজের ভালোলাগা, খারাপ লাগা, পছন্দ-অপছন্দ।
নিজেকে ভালোবাসা মানে নার্সিস্ট হওয়া না। নার্সিস্ট তো শুধু নিজের বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে। কিন্তু নিজেকে ভালোবাসা তার চেয়ে বেশি কিছু। নিজের বাহ্যিক সৌন্দর্য এর সাথে মনের এবং আভ্যন্তরীন অঙ্গ প্রতঙ্গের একটা সুন্দর সিনক্রোনাইজেশনই হলো নিজেকে ভালোবাসা।
ভালবেসে নিজেকে উপহার যেমন দিতে হয়। তেমনি শাসন করতে হয় খুব বেশি ইমোশনাল হলে। প্রিয়ার অভিমান ভাঙানোর মতো করে নিজের জড়তা এবং শংকাগুলোকেও ভেঙে চুরমার করে দিতে হয় সু-কৌশলে। নিজেকে আস্তে আস্তে প্রকাশ করতে সমাজের সকলের লাছে নিজের প্রেমিকার মতো করে।
নিজেকে ভালোবাসতে জানাটাও একট দক্ষতা। প্রেমিকার শারীরিক সৌন্দর্যের প্রতি যেমন থাকে আকর্ষণ, মোহ টান। তেমন করে নিজের শরীরটাকে চেনাটাও খুব জরুরী। শরীরের খুঁটিনাটি প্রতিটি ইঞ্চি ইঞ্চি চিনে রাখতে হয়। তাদেরকে তোষামোদ করতে হয়। শানিত করতে হয়, চকচকে ধারালো। তবেই সে হয়ে ওঠে আকাংখিত।
শরীরের মতো মনটাও খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ। মনটা যদি বিশৃঙ্খল থাকে, গোমড়ামুখো হয়ে থাকে প্রেমীর মুখের মতো- তাহলে শরীর কিংবা বাহ্যিক সৌন্দর্য কোনটায় সঠিকভাবে কাজ করবে না। তাই মনটাকে সুস্থ্য রাখা, শান্ত রাখাটাও কম জরুরী নয়।
নিজেকে ভালোবাসার মধ্য দিয়েই খুঁজে পাওয়া যায় নিজের অস্তিত্ব। খুঁজে পাওয়া যায় জীবনের অর্থ। জীবন হয়ে ওঠে আনন্দময়। ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে নিজের জীবন। নিজের চারপাশ। তখন চারপাশের মানুষগুলোও আপনাকে ভালোবাসতে শুরু করে। সফলতা ধরা দেয় নিজের তালুতে। আর নিজে হয়ে ওঠা যায় একজন আনন্দময় মানুষ হিসেবে।
০৯/০৪/২০২১
কক্সবাজার
অপচয়
বউকে কইলাম একটার বেশি জুতা কেনা, বেশি বেশি জামা-প্যান্ট কেনা অপচয়।
জবাবে বউ কইলো- তুমি যে বই কিনে জমিয়ে রাখো- সেগুলো কি অপচয় না?
চুপ করেছিলাম, এখনো জবাব খুঁজে পাই নি কি উত্তর দেবো।
কোনটা অপচয় আর কোনটা না সেটা নতুন করে ভাবাচ্ছে-
প্রয়োজনের অতিরিক্ত সবকিছুই কি অপচয় না?
কিংবা যে জিনিসের যথোপযুক্ত ব্যবহার না হয়ে – শুধু শুধু পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে- সবকিছুই কি অপচয় না?
অথবা একটা জিনিস বা উপাদনের ব্যবহারের কি কোন শেষ আছে? তাহলে আমরা যে ব্যবহার করতে পারছি না সেগুলো কি অপচয় না?
বা কি ক্ষতি অপচয় হলেই বা? আমার আছে আমি খাবো কি নষ্ট করবো- তা আমার একেবারই নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়। আমার তো কোন ক্ষতি হচ্ছে না অপচয়ে। তাই আমি কেন ভাববো অপচয় নিয়ে।
আবার আদৌ কি কোন জিনিষ অপচয় হয়? এটা তো প্রকৃতির নিয়ম- আমাদের অনুষ্ঠানে খাবার নষ্ট হয় বলেই ফকির মিসকিন খেতে পারে। আর যা খাওয়ার উপযুক্ত থাকে না- সেগুলো কুকুর, বিড়াল, হাঁস-মুরগি, মাছ- পাখির খাবার হয়। এর পরেও অবশিষ্টাংশ কেঁচো-তেলাপোকাসহ অন্যান্য কীটের খাবার হয়ে- সার হয়ে প্রকৃতিতে মিশে যায়। যদি অপচয় নাই হয় তাহলে এই চক্র চলবে কিভাবে?
আমরা বেশি বেশি পোষাক কিনি বলেই পোষাক শ্রমিকের আয় হয়- জীবন জীবিকা চলে। আবার শীতার্ত এবং দরিদ্র মানুষ পুরনো পোষাক পায়।
তাইলে কি অপচয় ভালো? কিংবা প্রয়োজনের সীমানার শেষ কোথায়? আমার বাবার বছরে ২ টা জামার বেশি লাগে না। আমার তো ১০টাতেও চলে না।
অন্যদিকে আমি হয়তো খাবার নষ্ট করি না। কেউ নষ্ট করলে কষ্ট লাগে, রাগ হয়। কিন্ত সেই আমি হয়তো বউ কিনে না পড়ে সাজিয়ে রাখি।
তবে অপচয় নিয়ে আমি ভাবি কারণ – এই পৃথিবীর সম্পদ সীমিত। আপনার-আমার হয়তো টাকা আছে- চাইলেই এক প্লেট ভাত নষ্ট করতেই পারি, বা একটা জামা বেশি কিনে আলমারিতে সাজিয়ে রাখতেই পারি। কিন্তু জানি কি এই এক প্লেট ভাত বা একটা জামা তৈরি করতে কতো লিটার করে মিঠা পানি খরচ হয়েছে? আর মিঠা পানি এতোটাই সীমিত যে- এটা নিয়ে কষ্ট আমি জন্ম থেকেই দেখে আসছি। তাই চাইলে আমার প্রকৃতির সীমিত সম্পদ অপচয় করে নষ্ট/ধ্বংস করার অধিকার নেই।
না হলে একদিন হয়তে ভাত কিংবা পোষাক জুটবে কিন্তু তৃষ্ণা মেটানো পানি জুটবে না। তখন তো আর ভাত ও পোষাক পান করে তৃষ্ণা মিটবে না।
১২/০৬/২০২১
শিকদার পাড়া, কক্সবাজার